দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে বছরে তিনটে কালীপুজো খুব বড় করে ধুমধাম করে পালন করা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে করা হয় ফলহারিণী কালী পুজো। কার্তিক মাসে পুজো হয় দীপান্বিতা কালীর এবং তৃতীয়টি হয় মাঘ মাসে, রটন্তী কালীপুজো (Ratanti Kali Puja)। 'রটনা' শব্দ থেকে নাম এসেছে 'রটন্তী'। 

মাঘ চতুর্দশীর রটন্তী কালীপুজো ঘিরে রয়েছে অনেক কাহিনি। মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে অন্ধকারের মধ্যে কৃষ্ণের বাঁশির আওয়াজ শুনতে পান রাধা। তিনি বিচলিত হয়ে বাঁশির সুরের দিকে ছুঁটে যান কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে। শ্রীরাধার শাশুড়ি এবং দুই ননদ জটিলা ও কুটিলা তাঁকে ধরার জন্য তাঁর পিছু নেন। রাধাকৃষ্ণের মিলিনের দৃশ্য দেখার পর বাড়ি ফিরে শ্রীরাধার স্বামী আয়ানঘোষকে নিয়ে যান কুঞ্জবনে। শ্রীরাধিকার এই গোপন প্রেমের কাহিনী আয়ানকে দেখানোই ছিল তাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য। তবে আয়ান ঘোষ ছিলেন শক্তির উপাসক, কালীর পূজারী। তিনি কুঞ্জবনে গিয়ে দেখলেন মা কালী গাছের তলায় বসে রয়েছেন এবং তাঁর সেবা করছেন শ্রীরাধিকা। মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে মা কালীর দর্শন পাওয়ার পর থেকে ওইদিন বিশেষভাবে শুরু হয় কালীপুজো। এই পুজোর নামকরণ করা হয় রটন্তী কালীপুজো।

২০২৪ সালে রটন্তী কালী পুজো পড়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার। চতুর্দশী তিথি থাকবে ৮ ফেব্রুয়ারি ঘ ৯/২১/৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ঘ ৭/৩১/৫৫ পর্যন্ত এবং অমাবস্যা তিথি থাকবে ৯ ফেব্রুয়ারি, ঘ ৭/৩১/৫৫ থেকে রাত ৫/২৭/৪২ পর্যন্ত। কথিত আছে, এই তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ ও কালীর এক হয়ে যাওয়ার এই পুজোর সূচনা করেছিলেন স্বয়ং রাধা। শ্রীরামকৃষ্ণদেব বলেছিলেন, ‘‘রটন্তী কালীপুজোর ভোরে স্বর্গের দেবতারা নেমে এসেছেন দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্নান করতে।’’ তাই আজও বহু মানুষ রটন্তী কালীপুজোর ভোরে দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় পুণ্যস্নান করতে আসেন।