সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড লাগোয়া রাস্তাতেই রয়েছে রানি রাসমণির সেই প্রাসাদোপম বাড়ি। যে বাড়িতে প্রতিষ্ঠাতা তথা রাসমণির শ্বশুরমশাই প্রীতরাম মাড়ের আমল থেকেই চলে আসছে দুর্গাপুজো (Durga Puja 2020)। হাওড়ার আমতা বাসিন্দা প্রীতরাম শৈশবের বাবা-মাকে হারিয়ে ছোট দুইভাইকে সহ্গে নিয়ে কলকাতার জানবাজারের এক জমিদার আত্মীয়ের বাড়িতে এসে ওঠেন। সেখান থেকেই ইংরেজ ডানকিন সাহেবের কাছে কাজ করতেন। আচমকা ডানকিন সাহেবের মৃত্যু হলে তিনি প্রথমে অকুল পাথারে পড়েন ঠিকই তবে নুনের ব্যবসা শুরু করেন। ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে নাটোর রাজের অধীনস্থ মকিমপুর ১৯ হাজার টাকায় কিনে নিলেন। এই সময়েই কলকাতায় শুরু করলেন কিছু ব্যবসা। আয়ও মন্দ ছিল না। টাকাকড়ি জমিয়ে জানবাজারেই জমি কিনে সাতমহলা বাড়ি তৈরি করান।
সেসময় সেই প্রাসাদোপম বাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছিল ৫ লাখ টাকা। বাড়ির তৈরির পর থেকেই প্রতিবছর ধুমধাম করে দুর্গাপুজো শুরু হল। রানি রাসমণি পুজোর দায়িত্ব নেওয়ার পর শ্রী আরও বেড়ে গেল। সেসময়ই খরচ হত প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। এই বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণদেব সখীবেশে চামর দুলিয়ে দেবী আরাধনা করেন। সেই সময় পুজোতে যাত্রা,পালাগান,কথকতার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি এ বাড়ির বৈশিষ্ট্য ছিল দশমীর দিন কুস্তি প্রদর্শনী। দেশ বিদেশের কুস্তিগীরেরা আসতেন। শক্তি প্রদর্শনীতে বিজয়ীদের ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পুরস্কারও দেওয়া হত। রাসমণি বাড়িতে কাঠামো পুজো হয় রথের দিন। এক চালার প্রতিমার পরনে থাকে ডাকের সাজ। এখানে ছাঁচে ফেলে ঠাকুরের মুখ গড়া হয় না। প্রতিমার মুখ তৈরি হয় হাতে এঁকে। চিত্রকরদের নিপুণ রেখার টানে অসাধারণ হয়ে ফুটে ওঠে দেবীর তেজস্বিনী মুখ। ২২ ফুটের প্রতিমার গায়ের রং হয় শিউলি ফুলের বোঁটার মতো। সরস্বতীর মুখ হয় সাদা। অসুরের মুখ সবুজ। আরও পড়ুন-Durga Puja 2020: লাহাবাড়ির কুলদেবী জয়জয় মা, দুর্গাপুজোতে হর-পার্বতীর সঙ্গে এই অষ্টধাতুর সিংহবাহিনীও পূজিত হন
প্রতিপদথেকে শুরু হয় পুজো। ষষ্ঠীর দিন হয় বোধন এবং বেলবরণ। ওইদিনই দেবীর হাতে অস্ত্র দিয়ে গয়না পরানো হয়। সপ্তমীর দিন বাড়ির সব দেবতা গোপাল, লক্ষ্মী–জনার্দনকে নিচে ঠাকুর দালানে নামিয়ে নিয়ে আসা হয়। বাড়ির মেয়েরা রানি রাসমণির আমল থেকেই অন্দরমহলের একটি বিশেষ সিঁড়ি দিয়ে যাতায়াত করেন এই ক’দিন। পুজোর চারদিন মূল দরজা দিয়ে ঠাকুর দালানে আসা নিষেধ তাঁদের। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমী এই তিনদিনই কুমারী পুজো হয়। এ বাড়িতে ভোগে দেবীকে লুচি ও পাঁচরকম ভাজা অর্পণ করা হয়। তবে সবই নুন ছাড়া। মিষ্টির মধ্যে দেওয়া হয় বিশেষ ভাবে তৈরি ‘মাতৃভোগ’, খাজা ,গজা, বোঁদে, নাড়ু। এবারও এসবের অন্যথা হবে না। পুজোর কয়েকদিন সবার জন্যই বাড়ির দরজা খোলা থাকবে, তবে মাস্ক পরা থেকে সামাজিক দূরত্ববিধি সবই মানতে হবে গাইডলাইন মাফিক।