ছুটিতে ছোটাছুটি করবেন না তো কবে করবেন, তবে সেই ছোটাছুটি যদি হয় বেড়াতে যাওয়ার তাহলে তো সোনায় সোহাগা। সপ্তাহান্তে ছুটি মিলতেই ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়ুন দেখি মন এমনিই ভাল হয়ে যাবে। আমাদের বাংলায় দর্শনীয় স্থানের শেষ নেই শুধু খুঁজেপেতে যাওয়ার উদ্যোগ করতে হবে এই যা। করে ফেললেই হল, তারপর শুধু হারিয়ে যাওয়ার পালা। আজ টইটইয়ের ২১ পর্বে রইল অযোধ্যা পাহাড়ের ইতিবৃত্ত।
অযোধ্যা পাহাড়(Ayodhya Hills)
শোনা যায় রামচন্দ্র(Lord Ram) যখন সীতাকে নিয়ে বনবাসের উদ্দেশে রওনা হন তখন ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা চলে আসেন আজকের পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে। এখানেই রয়েছে সেই সীতাকুণ্ড, দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার কারণে তৃষ্ণার্ত সীতা জলের জন্য ছটফট করছিলেন সেইসময় তীর দিয়ে মাটি খুঁড়ের স্ত্রীর জন্য জল নিয়ে আসেন রামচন্দ্র। পুরাণের সঙগে পুরুলিয়ার অয়োধ্যা পাহাড়ের ভালরকম যোগসূত্র রয়েছে।জেলার ঝাড়খণ্ড সীমান্তে দলমা পাহাড়ের একটি অংশ ও পূর্বঘাট পর্বতমালার একটি সম্প্রসারিত অংশ অযোধ্যা পাহাড়। উচ্চতা প্রায় ২০০০ফুট। অযোধ্যা পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গটি হল গোরগাবুরু। এই অঞ্চলটি ছোটো নাগপুর মালভূমির সবচেয়ে নিচু ধাপ। বাঘমুন্ডি বা অযোধ্যা পাহাড়ের আশেপাশের অঞ্চলটি হল একটি সম্প্রসারিত মালভূমি।শাল, শিরিষ, মহুয়া, সেগুনে ছাওয়া সবুজ অরণ্যভূমি আর ছোট-বড় ঝোরা নিয়ে মনোরম পরিবেশ। পাহাড়ের ঢালে আদিবাসী গ্রাম, চাষের ক্ষেত। ট্রেকিংয়ের জন্যই অযোধ্যা পাহাড় বেশি পরিচিত। এর একটা এন্ট্রি পয়েন্ট পূর্ব দিকে সিরকাবাদ, অন্যটি পশ্চিমে বাঘমুন্ডি। দু’টি দিক দিয়েই ট্রেকিং করে পাহাড়ে ওঠা যায়। পাহাড়ে ট্রেকিং করা ছাড়াও ঘুরে নেওয়া যায় ছৌ শিল্পের পিঠস্থান চোড়িদা গ্রাম, চাণ্ডিল ড্যাম, পাখি পাহাড়, সীতা কুণ্ড, টুরগা ফলস প্রভৃতি।
বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্থানীয় আদিবাসীরা এখানে বন্য পশু শিকার উৎসবে যোগ দেয়। কাছাকাছি যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে রেলস্টেশন, একদিকে পুরুলিয়া ও অন্যদিকে সুইসা। সিরকাবাদ হয়ে যেতে চাইলে পুরুলিয়া থেকে বাসে পৌঁছতে হবে। সিরকাবাদ থেকে ট্রেকিং শুরু। অন্য দিকে হাওড়া-রাঁচি রেলপথে সুইসা পৌঁছে সেখান থেকে ভ্যান বা জিপে বাঘমুন্ডি হয়ে অযোধ্যা। বাঘমুন্ডি থেকেও ট্রেক করা যায়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস পুরুলিয়া(Purulia District) থেকে অযোধ্যা যাওয়ার সরাসরি বাস পাওয়া যায়। থাকার জন্য পাবেন অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় বন দপ্তরের ট্যুরিস্ট বাংলো আছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল কমপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের লজগুলি একেবারে পাহাড়ের মাথায়। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বা কৃত্তিবাস আশ্রমেও থাকার ব্যবস্থা আছে। বাঘমুণ্ডি ও বলরামপুরে সেচ দপ্তরের বাংলা আছে।