গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের সমাপ্তির পরে এখন সকলের নজর আজ (শনিবার ,৮ ফেব্রুয়ারি) ফলাফলকে ঘিরে। সকাল ৮টায় শুরু হয়েছে ভোট গণনা। ভারতের নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রথমে পোস্টাল ব্যালট গণনা করা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া ভোট, পরিষেবা ভোটার এবং বয়স্ক বা ভিন্নভাবে-অক্ষম ভোটাররা যারা পোস্টাল ভোটিং সুবিধা বেছে নিয়েছেন তাঁদের মতদান রয়েছে। পোস্টাল ব্যালট প্রক্রিয়া হয়ে গেলে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) আনলক করা হবে এবং একাধিক রাউন্ডে গণনা করা হবে।

এখন পর্যন্ত, বেশিরভাগ এক্সিট পোল ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ২৭ বছর পর দিল্লিতে সরকার গঠনের জন্য নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে। তবে রাজধানীর বুকেই বারবার অসফল হয়েছে এক্সিট পোল। ফল ঘোষণার আগে সকলের নজর যে কেন্দ্রগুলিতে তাতে একবার নজর দেওয়া যাক।

নয়াদিল্লি (আপ এর অরবিন্দ কেজরিওয়াল বনাম বিজেপির পারভেশ ভার্মা)

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং পার্টি সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল আম আদমি পার্টি (AAP)র প্রার্থী হিসাবে জাতীয় রাজধানীতে সবচেয়ে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে রয়েছেন, যে কেন্দ্রের নাম নয়াদিল্লি কেন্দ্র। তিনি এই আসন থেকে বিজেপির পারভেশ ভার্মা এবং কংগ্রেসের সন্দীপ দীক্ষিতের মুখোমুখি হবেন।  কেজরিওয়াল ২০১৩ সাল থেকে এই আসনে প্রতিনিধিত্ব করছেন।২০২০  সালে, কেজরিওয়াল ২১৬৮৭ ভোটে আসনটি জিতেছিলেন।

কালকাজি

কালকাজি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে তীব্র রাজনৈতিক লড়াইয়ের সাক্ষী হবেন আপ, কংগ্রেস এবং বিজেপি শীর্ষ প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আম আদমি পার্টির হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অতীশিকে এখানে লড়তে হচ্ছে কংগ্রেসের অলকা লাম্বা এবং বিজেপির রমেশ বিধুরির বিরুদ্ধে।  আসনটিতে ১,৯৪,৫১৫ ভোট রয়েছে। ২০২০ সালে অতীশি ১১৩৯৩ ভোটে বিজেপির ধরমবীর সিংকে পরাজিত করেছিলেন।

মালব্য নগর

আম আদমি পার্টির সোমনাথ ভারতী আবারও তার শক্ত ঘাঁটি মালব্য নগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী গত তিনটি নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।এ বছর ভারতীর মুখোমুখি হচ্ছেন বিজেপির সতীশ উপাধ্যায় এবং কংগ্রেসের জিতেন্দ্র কুমার কোচার। ২০১৫ এবং ২০২০ সালে, ভারতী ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন।

রোহিণী

দিল্লির রোহিণী আসনে দুইবারের বিজয়ী বিজেপি নেতা বিজেন্দ্র গুপ্তার (২০১৫,২০২০) সঙ্গে কঠিন লড়াই আপ-এর প্রদীপ মিত্তালের। ২০২০সালে, গুপ্তা আপ (AAP)-এর রাজেশ নামা 'বাঁশিওয়ালা'-কে ১২০০০ ভোটে পরাজিত করেছিলেন।

জংপুরা

সমস্ত চোখ দিল্লির জংপুরা আসনের দিকে থাকবে কারণ প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া, যিনি আবগারি নীতির মামলায় কারাগারে বন্দী ছিলেন, তিনি এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।সিসোদিয়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির তরবিন্দর সিং মারওয়াহ এবং কংগ্রেসের ফরহাদ সুরির বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের নির্বাচনে, আপ প্রার্থী প্রবীণ কুমার ১৫০০০ এরও বেশি ভোটে জিতেছিল।

গ্রেটার কৈলাস

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লড়াই গ্রেটার কৈলাস আসনে। এখানে আপ এর সৌরভ ভরদ্বাজ ২০১৩ সাল থেকে ক্রমাগত গ্রেটার কৈলাশ আসনে জয়ী হয়েছেন, এখন বিজেপির শিখা রাই এবং কংগ্রেসের গারভিট সিংভির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পাটপারগঞ্জ

বিগত টানা তিন মেয়াদে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়ার দুর্গ পাটপারগঞ্জে এই বছর আম আদমি পার্টির অবধ ওঝা বিজেপির রবিন্দর সিং নেগি এবং কংগ্রেসের অনিল চৌধুরীর মুখোমুখি হবেন। আপ-এর আধিপত্যের আগে, কংগ্রেস ১৯৯৮সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আসনটি জিতেছিল।২০২০ সালে, সিসোদিয়া ৭০১৬৩ ভোটে এই আসন থেকে জিতেছিল।

ওখলা

টানা তৃতীয় জয়ের লক্ষ্যে আম আদমি পার্টি প্রার্থী আমানতুল্লাহ খান আসন্ন নির্বাচনে ওখলা থেকে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।  তার বিরুদ্ধে এবার ময়দানে কংগ্রেসের আরিবা খান এবং বিজেপির মনীশ চৌধুরী।

বলিমারন

বলিমারন হল একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম অধ্যুষিত অংশ এবং চাঁদনি চক লোকসভা কেন্দ্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন।এই বছর আপ ইমরান হুসেনকে মনোনীত করেছে, অন্যদিকে কংগ্রেস প্রবীণ নেতা হারুন ইউসুফকে প্রার্থী করেছে। বিজেপি ২০২০সালের প্রার্থী কমল বাগরির সঙ্গে এই আসন প্রতিস্থাপন করেছেন যিনি ২০২২ সালে দিল্লি মিউনিসিপ্যাল ​​কর্পোরেশন আসন জিতেছিলেন।

ছতরপুর

দিল্লি  বিধানসভার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী এলাকা ছতরপুর-এ  তীব্র হতে চলেছে "তানওয়ারদের যুদ্ধ" এখানে আপ প্রার্থী ব্রহ্ম সিং তানওয়ার মুখোমুখি হচ্ছেন বিজেপির কর্তার সিং তানওয়ার এবং কংগ্রেসের রাজেন্দ্র সিং তানওয়ার-এর। মজার বিষয় হল কার্তার সিং তানওয়ার ২০২০ সালে আপের টিকিটে জয়লাভ করেছিলেন। কিন্তু দলে মতানৈক্য হওয়ায় গত বছর বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন এবং এখন সেই দলের হয়ে ওই কেন্দ্রে  প্রার্থী হয়েছেন।