Gangasagar Mela 20223

কথাই বলে, ‘সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার’

এর অর্থ বার বার তীর্থযাত্রা করে মানুষ যত পুণ্যলাভ করেন তার চেয়ে অনেক বেশি পুণ্যলাভ হয় গঙ্গাসাগরে মাত্র একবার গেলেই। এই প্রচলিত ধারনাকে মাথায় রেখেই প্রতি বছর পৌষমাসে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করেন গঙ্গাসাগরের বুকে। বলা হয়, এই সাগরে স্নানের মাহাত্ম্য প্রচুর। কিন্তু গঙ্গাসাগরে স্নানের এই নিদারুণ মাহাত্ম্যের কারণ কী? নেপথ্য রয়েছে কোন পৌরাণিক কাহিনি।

হিন্দুরা বিশ্বাস করেন সগর নামে এক রাজা একবার অশ্বমেধ যজ্ঞ পরিচালনা করেছিলেন। রাজা ইন্দ্র যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করে তা বেঁধে রাখেন পাতালে। পরে রাজা সগরের ছেলেরা ঘোড়াটি খুঁজতে খুঁজতে পাতালে কপিল মুনির আশ্রমে যান এবং ঘোড়াগুলিকে দেখতে পান। তারা ভাবেন কপিল মুনিই হয়তো চুরি করেছেন ঘোড়াগুলি।

কপিল মুনি তখন সগর পুত্রদের অভিশাপ দিয়ে ভস্মে পরিণত করেন। পরে সগরের পৌত্র ভগীরথ বছরের পর বছর ধরে ধ্যান করেছিলেন এবং গঙ্গা নদীকে তাঁর পূর্বপুরুষদের ভস্মের উপর দিয়ে প্রবাহিত করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। গঙ্গা সেই অনুরোধ মেনে নিয়ে স্বর্গ থেকে নেমে আসেন এবং রাজা সগরের পুত্রদের ভস্ম ধৌত করেন।

আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশ্বাস করে সাগর দ্বীপে পৌঁছে সাগর ও গঙ্গা নদীর সঙ্গমে পবিত্র স্নান করে মোক্ষ লাভ হয়, পাপস্খলন ঘটে।

কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন। সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষের উপর দিয়ে বইয়ে দেন এবং তাঁর পিৃতপুরুষের আত্মা মুক্ত করেন।

রামায়ণে এই কাহিনি বর্ণিত রয়েছে।একইভাবে মহাভারতের বনপর্বেও রয়েছে গঙ্গাসাগরের গল্প।

প্রতি বছর মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর মেলার আয়োজন করা হয়। গঙ্গানদী গঙ্গোত্রী হিমবাহ  থেকে উৎপন্ন হয়ে সাগর দ্বীপে নিজ যাত্রার সমাপ্তি ঘটিয়েছে। এখানে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে মিলিত হয়েছে পতিতপাবণী গঙ্গে।তাই একে গঙ্গাসাগর বলা হয়।

প্রতি বছর সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রমে মক্রর সংক্রান্তিতে এই গঙ্গাসাগরের মেলা হয়। মূলত পৌষমাসেই বসে এই মেলা। বিপুল সংখ্যক মানুষ এই সময় আসেন গঙ্গাসাগরে পুণ্যলাভের আশায়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে গঙ্গাসাগরে স্নান করলে ১০০টি অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান পুণ্য পাওয়া যায়।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ৮ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত চলবে এই মেলা। ১৪ এবং ১৫ জানুয়ারি পুণ্যস্নান।