সুপ্রিম কোর্ট (Photo Credits: IANS)

নতুন দিল্লি, ২৫ নভেম্বর : আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় মহারাষ্ট্র (Maharastra) বিধানসভায় ফ্লোর টেস্ট নিয়ে মামলার রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। গতকাল কেন্দ্রীয় সরকার, মহারাষ্ট্র সরকার, দেবেন্দ্র ফডনবিশ (Devendra Fadnavis) ও অজিত পাওয়ারকে (Ajit Pawer) নোটিশ পাঠায় শীর্ষ আদালত। সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়ে দেবেন্দ্র ফডনবিশকে পাঠানো রাজ্যপালের চিঠি এবং বিধায়কদের সমর্থনের কথা জানিয়ে লেখা দেবেন্দ্র ফডনবিশের চিঠি শীর্ষ আদালতে পেশ করতে বলা হয়। আজ শুনানিতে দু'পক্ষের বক্তব্য শোনার পর তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় রায় দেওয়া হবে। আজ আদালতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা (Tushar Mehta) বলেন, দেবেন্দ্র ফডনবিশের পক্ষে ১৭০ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে দেখেই তাঁকে সরকার গঠনে আহ্বান জানান মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। এ দিন আদালতে তিনটি চিঠি তুলে ধরেন তিনি। যার মধ্যে একটি হল দেবেন্দ্র ফডনবিশের তরফে রাজ্যপালকে দেওয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতার চিঠি। তাতে ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় চিঠিটি অজিত পওয়ারের লেখা। এনসিপি নেতা হিসাবে গত ২২ নভেম্বর তিনি ওই চিঠি লিখেছিলেন বলে জানা গেছে। তাতে ৫৪ জন এনসিপি বিধায়কের স্বাক্ষর আছে। রাজ্যপালের ফডনবিশকে সরকার গড়তে আমন্ত্রণ জানানোর তৃতীয় চিঠিও জমা পড়ে আদালতে।

আজকের শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, "আমার কাছে অরিজিনাল নথি রয়েছে। শিবসেনার ৫৬ , NCP ৫৪ , ও কংগ্রেসের ৪৪ জন বিধায়ক রয়েছে। বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ উঠছে। রাজ্যপাল নিশ্চয় কিছু বুঝতে পেরেছিলেন। এখানে অনেকগুলি বিষয় রয়েছে যেগুলির আলোচনা দরকার। তার জন্য কিছু সময় দরকার।" তিনি আরও বলেন, "২২ নভেম্বর অজিত পাওয়ার রাজ্যপালকে চিঠি পাঠান। তাতে তিনি লেখেন, মহারাষ্ট্রে স্থায়ী সরকার দরকার, রাষ্ট্রপতি শাসন চলতে পারে না। BJP-র পক্ষ থেকে অজিত পাওয়ারকে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিতে বলা হয়। কিন্তু সেই সময় তিনি তা প্রত্যাখান করেছিলেন। কারণ সেই সময় পর্যাপ্ত NCP বিধায়করা তাঁকে সমর্থন করেননি।" সলিসিটর জেনারেলের দাবি, মহারাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি হল রাজ্যপাল সংখ্যগরিষ্ঠ জোটকে সরকার গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অজিত পাওয়ারের চিঠি পাঠানোর পর দেবেন্দ্র ফডনবিশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দাবি করেন। তাঁর সঙ্গে ১১ জন নির্দল ও আরও বেশ কয়েকজন বিধায়কের সমর্থন ছিল। আরও পড়ুন: Maharashtra Govt Formation: মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার দাবি জানাল শিবসেনা, এনসিপি, কংগ্রেস

এরপর তুষার মেহতা বলেন, "এরপর রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান। অনুরোধ করেন রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নিতে। রাজ্যপাল তখন বৃহত্তম দলের নেতাকে আহ্বান করেন। দেবেন্দ্র ফডনবিশের কাছে ১৭০ বিধায়কের সমর্থন রয়েছে।"

তুষার মেহতার বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, "অতীতে এই রকম ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ফ্লোর টেস্ট সম্পন্ন হয়েছিল। কয়েকটি ক্ষেত্রে সেটা হয় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে।" BJP-র আইনজীবী মুকুল রোহতগি (Mukul Rohatgi) বলেন, কোর্ট রাজ্যপালকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফ্লোর টেস্ট নিতে নির্দেশ দিতে পারে না। কালও ফ্লোর টেস্ট সম্ভব নয়। ফ্লোর টেস্টের জন্য ৭ দিন সময় দরকার। রাজ্যপাল ১৪ দিনের সময় দিয়েছিলেন। এই মুহুর্তে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রোটিম স্পিকার নিয়োগ, মন্ত্রিসভার শপথ, স্পিকার নির্বাচন।"

শিবসেনার আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, "কী এমন জরুরি ছিল যে ভোর সওয়া ৫টায় রাষ্ট্রপতি শাসন তুলে নেওয়া হল মহারাষ্ট্রে। তার পর ৮টায় শপথগ্রহণও হয়ে গেল? অর্থাৎ ওই রাতেই সবকিছু সারা হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আস্থাভোট করতে হবে। বিধানসভায় অভিজ্ঞ সদস্যদের উপস্থিতিতে তা ভিডিও রেকর্ডও করতে হবে। ভোট হতে হবে সিঙ্গল ব্যালটে। রাতের অন্ধকারেই অনেকে সুবিধা তোলেন, তাই আস্থাভোটও হোক দিনের আলোয়।" এনসিপি ও কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়ানো আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি (Abhishek Manu Singhvi) বলেন, "দু'পক্ষই যখন ফ্লোর টেস্ট চাইছে। তখন কেন দেরি হওয়া উচিত? এখানে এনসিপির একজনও বিধায়ক কি বলেছেন যে আমরা বিজেপি জোটে যোগ দেব? একা কোনও বিধায়কের চিঠি রয়েছে কি? এই কথা বলে কি কেউ চিঠি দিয়েছে? গণতন্ত্রের প্রতি এটি জালিয়াতি।" তিনি আরও বলেন, "বিজেপি জোট আদালতে যা দেখিয়েছে তা হল ৫৪ এনসিপি বিধায়কদের স্বাক্ষর। সেই চিঠি অজিত পাওয়ারের পরিষদীয় দলনেতা নির্বাচন সংক্রান্ত। সরকার গঠনে বিজেপি জোটে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁদের সমর্থন স্বাক্ষরিত হয়নি। চিঠিটি অজিত পাওয়ারের বিজেপি জোটে যাওয়ার সমর্থনের ছিল না? কীভাবে রাজ্যপাল এই বিষয়টি দেখলেন না।" দু'পক্ষের বক্তব্য শোনার পর তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় রায় দেওয়া হবে।