শৈশবে ইতিহাসের পাতায়স যে ‘লাল-বাল-পাল’ত্রয়ীর সঙ্গে পরিচয় ঘটেছিল, তাঁর মধ্যে অন্যতম ছিলেন লালা লাজপত রায়। তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। কংগ্রেস নেতা  একাধারে ছিলেন লেখক অন্যদিকে রাজনীতিবিদ। আজকের দিনেই ১৮৬৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করে।‘সাইমন গো ব্যাক’ থেকে ‘ব্রিটিশ শাসনের কফিনে শেষ পেরেক’, তাঁর স্লোগানই উদ্বুদ্ধ করেছিল যুবসমাজকে। আজ  জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা ‘পাঞ্জাব কেশরী’ লালা লাজপত রাইয়ের জানা-অজানা তথ্য।

১) অন্যান্য অনেক মুক্তিযোদ্ধার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লালা লাজপত রায় ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, তখন তিনি অনেকটাই ছোট ছিলেন।

২) ১৮৭৭ সালে তিনি রাধা দেবী-র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের তিন সন্তান ছিল- দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে।

৩) ১৮৮০ সালে, তিনি লাহোরের সরকারি কলেজে আইন নিয়ে পড়তে যান। এই সময়ে তিনি কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ পান।

৪) লাহোরে থাকার সময়ই, তিনি আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীকে দেখেন এবং তাঁর শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে লালা লাজপত রায় আর্য সমাজে যোগ দেন।

৫) ১৮৮৬ সালে তিনি ও তাঁর পরিবার তিনি হিসার-এ চলে আসার পরে সেখানে তিনি আইন নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরে তিনি হিসারে আইনজীবী বাবু চূড়ামণি-র সঙ্গে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া-র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

৬) তিনি, বাবু চূড়ামণির সঙ্গে হিসার জেলায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই একই জেলায় আর্য সমাজের একটি শাখাও প্রতিষ্ঠা করেন

৭) তিনি ১৮৮৮ এবং ১৮৮৯ সালে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেওয়া চারজন প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। উভয় অধিবেশনই এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

৮) ১৮৯২ সালে, তিনি লাহোর হাইকোর্টে আইন প্র্যাকটিস করতে যান। এই সময়ে তিনি সাংবাদিকতা নিয়েও প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং 'দ্য ট্রিবিউন' পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।

৯) তিনি পাঞ্জান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও লক্ষী বিমা কোম্পানি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নির্দেশনায় দয়ানন্দ অ্যাংলো বৈদিক বিদ্যালয় পরিচালন কমিটিও প্রতিষ্ঠিত হয়।

১০) তিনি খুব শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁকে আইন ত্যাগ করতে হবে এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে হবে। সেইমতো তিনি ১৯১৪ সালে আইন প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেন।

১১) ১৯০৭ সালের মে মাসে, পাঞ্জাবের রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ নেওয়ার জন্য তাঁকে বার্মার মান্দালয়ে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।

১২) ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতা বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন, লালা লাজপত রায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (INC) প্রেসিডেন্ট হন।

১৩) ১৯২৮ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনিতে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি পুলিশের লাঠি চার্জে গভীর ভাবে আহত হন।

১৪) ১৯২৭ সালে তাঁর মা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তিনি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে গুলাব দেবী চেস্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে যে, যেখানে তাঁর মা মারা গিয়েছিলেন হাসপাতালটিও পাকিস্তানের ওই একই জায়গায় অবস্থিত। ১৯৩৪ সালের ১৭ জুলাই এটি উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালটি কেবলমাত্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত।

১৫) সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সুপার জেমস এ স্কট বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চার্জ করার নির্দেশ দেন। স্কট নিজেই ওই লাঠি চার্জে গিয়ে লালা লাজপত রায়কে ধরে ফেলেন। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি লালা লাজপত রায়কে মারাত্মকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন।

১৬) রায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ''আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে।''

১৭) চিকিৎসায় থাকা সত্বেও তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি এবং ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে ব্রিটিশ সরকার, স্কট বা অন্য কোনও ব্রিটিশ সরকারী কর্মকর্তার ভূমিকা অস্বীকার করে।

১৮) ১৯৫৯ সালে লালা লাজপত রায় ট্রাস্টের উদ্বোধন করেন পাঞ্জাবের একদল সমাজসেবী। ১৯) ২০১০ সালে, লালা লাজপত রায় পশুচিকিৎসা এবং প্রাণী বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে হরিয়ানা সরকার।