ভোট গণনার সাড়ে ৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। মোটের ওপর পরিষ্কার হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যেই বিজেপি সরকার গড়তে চলেছে। কংগ্রেসের থেকে রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়ে মধ্যপ্রদেশে গড় ধরে রাখছে বিজেপি। হিন্দি বলয়ে বড় হতাশার মাঝে দক্ষিণের রাজ্য তেলাঙ্গানায় হাত শিবিরের দারুণ ফল। কেসিআর-এর জমানা শেষ করে তেলাঙ্গানায় সরকার গড়ার পথে কংগ্রেস
Assembly Election 2023 Results Live: হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যেই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে গেল পদ্ম, দক্ষিণে হাতের ইতিহাস, মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থান-ছত্তিশগড়ে বিজেপির জয়জয়কার, তেলাঙ্গানায় কংগ্রেসের দাপট
অবশেষে সব প্রতীক্ষার শেষ হতে চলেছে। প্রায় দেড় মাসে ভোটপর্ব শেষে এবার ফলপ্রকাশের পালা। সম্প্রতি দেশের যে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজিত হল তার মধ্যে চার রাজ্যে ভোট গণনা শুরু হল। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও তেলাঙ্গানার মানুষ তাদের রাজ্যে সরকার গড়ার দায়িত্ব কাদের দিল তা জানা যাবে কয়েক ঘণ্টা পরেই। ধর্মীয় কারণে স্থানীয়দের দাবি মেনে উত্তর পূর্ব ভারতের মিজোরামে ভোট গণনার দিন রবিবার থেকে সোমবার করে দেওয়া হয়েছে।
সবার এখন একটাই প্রশ্ন লোকসভার আগে দেশের শেষ বড় ভোটে কী হতে চলেছে! ফাইনালের আগে সেমিফাইনালে কে এগিয়ে থাকবে। বিজেপির লক্ষ্য হবে এই চারটি রাজ্যের মধ্যে তিনটিতে ক্ষমতায় আসা। কংগ্রেসের সেখানে পাখির চোখ চার রাজ্যেই ক্ষমতায় আসা। ভোটের আগে রাজস্থানে বিজেপি এগিয়ে ছিল। আবার কংগ্রেস এগিয়ে ছিল মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়। তেলাঙ্গানায় কেসিআর-এর সরকারকে চাপে রেখেছিল হাত শিবির। কিন্তু ভোটপ্রচারের পর সব রাজ্যেই পরিস্থিতির বদল আসে।
জানুন দেশের চার রাজ্যের ফল কী হতে পারে
রাজস্থান (১৯৯ আসন) Rajasthan Assembly Elections 2023
এখন কোন দল ক্ষমতায়: কংগ্রেস
ভোটের আগে পরিস্থিতি কেমন ছিল: নড়বড়ে দেখাচ্ছিল অশোক গেহলেটের সরকারকে। সচিন পাইলেটের বিদ্রোহে চাপ বাড়ছিল। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর রাজস্থানে সরকার বদলায়। এবারও তেমন হওয়ার সম্ভবনা তৈরি ছিল। বিজেপিকে অনেক বেশী আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। তবে রাজ্যে সরকার বদলের হাওয়া থাকলেও পদ্মশিবিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সমস্যা ছিল।
ভোটপ্রচারে কী এগিয়ে ছিল: কংগ্রেস অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনসভা, বসন্ধুরা রাজে, তারকা সাংসদ দিয়া কুমারী, আলকা গুরজারদের সভায় ভিড় ভাল ছিল। গেহলট-পাইলট দ্বন্দ্ব ঝেড়ে এককাট্টা হয়ে প্রচারের সব চেষ্টাই করে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধীর সভাতেও লোক ভাল হয়। বয়স হলেও অশোক গেহলেট প্রাণপাত করেন প্রচারে। কিন্তু বিজেপির প্রচার অনেক বেশী সংঘবদ্ধ ও রণকৌশল অনেক বেশী ঝাঁঝালো দেখিয়েছে।
এক্সিট পোল কী বলছে: বিজেপির জয় যতটা সহজ বলা হচ্ছিল, এক্সিট পোলগুলিতে কিন্তু মোটেও ততটা সহজ দেখাচ্ছে না। বরং ভরসাযোগ্য সংস্থাগুলির সমীক্ষায় রাজস্থানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর কংগ্রেসকেই সামান্য এগিয়ে রাখা হয়েছে। তবে এক্সিট পোলেই পরিষ্কার ৫০:৫০।
কী হতে পারে: বিজেপি এগিয়ে। তবে লড়াই হবে খুব।
কী হলে কী হবে: কংগ্রেস জিতলে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলেট গান্ধী পরিবারের পর কংগ্রেসে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ মুখ হবেন। সচিন পাইলটকে দলে বড় দায়িত্ব হবে, তবে মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরবেন গেহলেট। আর বিজেপি জিতলে বসুন্ধরা রাজেকে হতাশ করে মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে দিয়া কুমারি-কে।
-------------
মধ্যপ্রদেশ (২৩০টি আসন) Madhya Pradesh Assembly Elections 2023
গুজরাটের পর বিজেপির সবচেয়ে ভরসার রাজ্য হল মধ্যপ্রদেশ। এবারও কি গড় ধরে রাখতে পারবে পদ্মশিবির? নাকি কমলনাথের হাত ধরে কংগ্রেস হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যে চমকপ্রদ ফল করবে? এবার অগ্নিপরীক্ষায় মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান, কমলনাথ, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া-র।
এখন কোন দল ক্ষমতায়: বিজেপি
ভোটের আগে পরিস্থিতি কেমন ছিল: বিজেপিকে নড়বড়ে দেখাচ্ছিল। বিজেপির অবস্থা তেমন ভাল না দেখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার থেকে অভিজ্ঞ কৈলাস বিজয়বর্গী-দে মত হাইপ্রোফাইলেদর ভোটে দাঁড়া করানো হয়। জ্য়োতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে তেমন স্বস্তিতে দেখাচ্ছিল না।
ভোটপ্রচারে কী এগিয়ে ছিল: মোদী, শাহ, নাড্ডা থেকে সব হাইপ্রোফাইল মন্ত্রী সাংসদদের নামিয়ে বিজেপি প্রচারে ঝড় তোলে। ভোট প্রচার বিজেপিকে এগিয়ে দিয়েছিল। যদিও কমলনাথ নিজের মত করে প্রচারের গুটি ভালই সাজিয়েছিলেন।
এক্সিট পোল কী বলছে: একেবারে অস্পষ্ট। কোনও কোনও সংস্থা বলছে, কংগ্রেস সহজেই জিতে ক্ষমতায় আসবে। আবার কোনও কোনও সংস্থা বলছে, বিজেপি অনায়াসে ক্ষমতা ধরে রাখবে। তবে যে সংস্থার এক্সিট পোল সাম্প্রতিককালে বেশ কয়েক বার মিলেছে, তারা বলছে বিজেপি মধ্যপ্রদেশে গড় ধরে রাখবে। যদিও সেই সংস্থার প্রধান নিজের সংস্থার গ্রাউন্ড রিপোর্ট দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। সব মিলিয়ে মধ্যপ্রদেশের এক্সিট পোল দেখে ভোটের ফল বোঝার চেষ্টা করাটা অনেকটা মরভূমিতে বন্যার অপেক্ষা করার মত হবে।
কী হতে পারে: কিছুই বলা যাচ্ছে না। কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে জাতীয় রাজনীতিতে রাহুল গান্ধীর পালে হাওয়া লাগবে। বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে লোকসভার আগে কংগ্রেসকে অনেকটা পিছিয়ে দেবে।
কী হলে কী হবে: দেখা যাক। এখন থেকে জল্পনা করে লাভ নেই। কারণ একেবারেই বোঝা যাচ্ছে না কী হতে পারে।
------------
ছত্তিশগড় (৯০ আসন) Chhattisgarh Assembly Elections 2023
এখন কোন দল ক্ষমতায়: কংগ্রেস
ভোটের আগে পরিস্থিতি কেমন ছিল: হাড্ডাহাড্ডি পরিস্থিতি। ছোট রাজ্যে কয়েকটা আসন এদিক ওদিক হলেই পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
ভোটপ্রচারে কী এগিয়ে ছিল: সামান্য হলেও কংগ্রেস এগিয়ে ছিল। তবে বিজেপির প্রচার ধারেভারে অনেকটা বড় ছিল।
এক্সিট পোল কী বলছে: কংগ্রেসকে সামান্য এগিয়ে রাখা হয়েছে। তবে বিজেপি গতবারের চেয়ে অনেকটা আসন বাড়াতে পারে। বিজেপি গতবার মাত্র ১৪টি আসনে জিতেছিল। মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরতে পারেন কংগ্রেসর ভূপেশ বাঘেল।
কী হতে পারে: কংগ্রেস ৫০টার মত আসন পেয়ে ক্ষমতায় ফিরতে পারে। বিধায়ক কেনাবেচার পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।
কী হলে কী হবে:গ্রামাঞ্চলের ভোট নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।
-------
তেলঙ্গানা (১১৯টি আসন) Telangana Assembly Elections 2023
এখন কোন দল ক্ষমতায়: ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি (বিআরএস, আগে বলা হত টিআরএস)
ভোটের আগে পরিস্থিতি কেমন ছিল: শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী কেসিআর-এর পালে হাওয়া ছিল। তবে ভোটের দিন ঘোষণার সময় যত এগিয়েছে কংগ্রেসের পালে হাওয়া দিতে শুরু করে। ক্রমশ চাপে পড়তে থাকেন কেসিআর।
ভোটপ্রচারে কী এগিয়ে ছিল: কংগ্রেস প্রচারে ঝড় তোলে। তেলাঙ্গানায় কংগ্রেসের হবু মুখ্যমন্ত্রী রেভনাথ রেড্ডি একাই কাঁপিয়ে দেন। এরপর রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর ভোটপ্রচারে রেকর্ড জনসমাগম হতে থাকে। কম দামে বিদ্যুত থেকে সস্তায় গ্যাস, মহিলাদের জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা করে তেলাঙ্গানার ভোটপ্রচারে হাতের দাপট দেখা যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তেলাঙ্গানায় এসে বড় জনসভা করলেও বিজেপির পালে হাওয়া ছিল না। কেসিআর-এর প্রচারের ঝাঁঝ শেষের দিকে যেন কমে এসেছিল।
এক্সিট পোল কী বলছে: প্রায় সব এক্সিট পোলেই বলা হচ্ছে কংগ্রেস অন্তত ৬০টি আসনে জিতে তেলাঙ্গানায় প্রথমবার ক্ষমতায় আসতে পারে। বিআরএস আটকে যেতে পারে ৪০ আসনে। বিজেপির পক্ষে দু অঙ্কের সংখ্যার আসন জেতা কঠিন দেখানো হয়েছে।
কী হতে পারে: অসম্ভবকে সম্ভব করার পথে কংগ্রেস। ক মাস আগেও তেলাঙ্গানায় মুছে গিয়েছিল কংগ্রেস। তখন সরাসরি বিআরএস ও বিজেপির লড়াই ছিল। কিন্তু একেবারে দুরন্ত স্ট্র্য়াটেজি, রাজ্যে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সঠিক নেতা বেছে দক্ষিণের এই রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার খুব কাছে কংগ্রেস।
কী হলে কী হবে: এক্সিট পোল মিলে গিয়ে কংগ্রেস প্রথমবার তেলাঙ্গানায় ক্ষমতায় এলে কেসিআর ও বিজেপির কাছে বড় ধাক্কা হবে। কর্ণাটকের পর দক্ষিণের আরও এক রাজ্যে বড় লজ্জার মুখে পড়বে বিজেপি। আর ক মাস পর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে তেলাঙ্গানার হারানো গড় ফেরা কঠিন হবে। কংগ্রেস জিতলে মুখ্যমন্ত্রী হবে রেভনাথ রেড্ডি। তবে এক্সিট পোল অনেক সময়ই মেলে না। সেটাই এখন ভরসা কেসিআর-এর।