তাপস পাল (Photo: Facebook)

কলকাতা, ১৮ ফেব্রুয়ারি: রিল লাইফে যখন তাঁর দেখা মেলে, তখন প্রথম দেখে কেউই হয়তো ভাবতে পারেননি এতটা ছাপ রেখে যাবেন। সত্যি কথা বলতে তাপস পালের (Tapas Pal) অভিনয়ের প্রেমে মজেছিল বাংলার সিনেমা প্রেমীরা। বাংলার বহু বড় বড় অভিনেতা ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। তবে তাপস পালের সরল অভিনীয় হয়তো বাঙালির মেন চিরকাল থেকে যাবে। ছক ভাঙা ছবিতেই তাপস পালের প্রতিভা ছিল, একথা বলেন বহু চিত্র পরিচালক থেকে আজকের নব্য অভিনেতারা। আজ সকালেই মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন কেদার, থুড়ি তাপস পাল। আসলে তাপস পালকে একসময় কেদার নামেই চিনত বাংলার সিনে প্রেমীরা। ছবির নাম দাদার কীর্তি (Dadar Kirti )। পরিচালক তরুণ মজুমদার (Tarun Majumdar)। যাত্রা শুরু সেখান থেকেই। আজ সকালেই মৃত্যু হয়েছে সেই কেদারের। প্রথম ছবিতেই তরুণ মজুমদারের মতো একজন বিখ্যাত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। অনুরাগের ছোঁয়া, ভালোবাসা ভালোবাসা এই ছবিগুলির মাধ্যমে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেন। এরপর আর তাঁক ফির তাকাতে হয়নি। একের পর এক হিট ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন। অভিনয়ের যাদুতে মাতিয়ে রাখতন বাঙালি দর্শকদের।

তাপস পালের সেরা ১০টি ছবি হলো- সাহেব, অনুরাগের ছোঁয়া, পারাবত প্রিয়া, ভালোবাসা ভালোবসা, মায়া মমতা, সুরের ভুবনে, সমাপ্তি, চোখের আলো, অন্তরঙ্গ, দাদার কীর্তি ও গুরুদক্ষিণা। আর ‘গুরুদক্ষিণা’ ছবির জন্য তাকে আজীবন মনে রাখবে দুই বাংলার দর্শকমহল। ওই ছবিতে কালী ব্যানার্জির সঙ্গে তার যুগলবন্দী রীতিমতো কাঁদিয়েছিল বাংলার দর্শককে। অনেক সমালোচকরা জানিয়েছিলেন, দর্শককে হিন্দি ছবির থেকে বাংলা ছবির দিকে হলমুখী করেছিল গুরুদক্ষিণা ছবি। তাপস পাল অভিনয় করেছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মন্দ মেয়ের উপাখ্যান এবং উত্তরার মতো ছবিতেও। ১৯৮১ সালে সাহেব ছবির জন্য ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পান তাপস পাল। তবে শুধু সিনেমা নয়, একসময় যাত্রামঞ্চেও গ্রাম বাংলার দর্শকদের মন জিতেছেন তাপস পাল। বাংলার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবিতেও। ১৯৮৪ সালে হীরেন নাগ পরিচালিত অবোধ সিনেমার মধ্য দিয়ে বলিউডে পা রাখেন তাপস পাল। বিপরীতে ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। বাংলার পাশাপাশি অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবিতেও। মাধুরী দীক্ষিতের বিপরীতে অভিনয় করেছেন অবোধ ছবিতে। আরও পড়ুন: Tapas Pal Passed Away: প্রয়াত অভিনেতা ও প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল

বাংলার সিন প্রেমীদের বক্তব্য, উত্তমকুমার পরবর্তী বাংলা ছবির শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক নায়ক ছিলেন তাপস পাল। সাংবাদিক কুণাল ঘোষের মতে, তাপস পাল উত্তম কুমার পরবর্তী বাংলার শ্রেষ্ঠ নায়ক। এ নিয়ে কোনও কথা হবে না। তিনি লিখেছেন, "দাদার কীর্তি আর কেউ পারত না, যা দিয়ে তোমার ইনিংস শুরু। তারপর তুমি হয়ে উঠেছ অন্যতম সেরা অভিনেতা। অল রাউন্ডার।" কুণাল ঘোষের দাবি, লবিবাজির কারণেই টলিউড তাপস পালকে পুরো ব্যবহার করতে পারে নি। ইচ্ছে করলে বম্বেতে সময় দিতে পারতেন তিনি। কিন্তু তিনি ছেতে যান কলকাতাতেই। তাপস পাল তাঁর সঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছেন। সেই পরিচালক বুদ্ধদেব দাশদুপ্ত বলেন, "অসম্ভব উঁচুদরের অভিনেতা ছিলেন তাপস পাল। তাঁর তুল্য অভিনেতা বর্তমান টালিগঞ্জে কার্যত নেই। তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। রাজনীতিতে এসে তিনি যে ধরনের বক্তব্য রাখেন তা ঠিক নয়, তা তাঁকে তিনি বলেওছিলেন।"

তবে শুধু অভিনয় নয়। তাপস পাল অভিনীত সিনেমার গানেও মজে ছিল বাঙালি। তাঁর অভিনীত গুরুদক্ষিণা ছবির পরিচালক ছিলেন অঞ্জন চৌধুরী । পরিচালক একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, সেই বছর পুজোর সময়ে বাংলার এমন কোনও পূজামণ্ডপ ছিল না যেখানে 'এ আমার গুরুদক্ষিণা' গানটি বাজেনি। এছাড়া মঙ্গল দীপ জ্বেলে, খোঁপার ওই গোলাপ, চরণ ধরিতে দিও গো আমায়, আমি যে কে তোমার তুমি তা বুঝে নাও এখনও বাঙালি পরিবারের যে কোনও অনুষ্ঠানে বাজে।