কায়রো, ২৭ জানুয়ারি: বেঁচে উঠে কথা বলল তিন হাজার বছরের পুরনো মমি (Mummy Speaks After 3000 Years)! মৃদু কণ্ঠে জানাল শেষ ইচ্ছা (Last Wish Of a Dead Man)। না ভূতুড়ে কাণ্ড নয়, এ সম্পূর্ণ বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের জাদুতেই এত বছর ধরে মমি করে রাখা ওই পুরোহিতকে ফের ‘বাঁচিয়ে’ তুললেন বিজ্ঞানীরা (Scientists)। মৃত্যুর সময়ের তাঁর শেষ কথাও শুনলেন। মৃত্যুর সময়ে নিজের শেষ ইচ্ছা কী ব্যক্ত করতে চেয়েছিলেন, তা এত বছর পর ‘জীবিত’ হয়ে মমি (Mummy) জানালেন বিজ্ঞানীদের। ঘটনা ইজিপ্টের (Egypt)।
মিশরের সূর্য এবং বায়ুর দেবতা হলেন আমান। মিশরের প্রাচীন শহর থিবসের কারনায় এই দেবতাদের মন্দির (Temple Of God) ছিল। যে মন্দিরেরই পুরোহিত ছিলেন নেসিয়ামান। তিন হাজার বছর আগে মন্দিরেই মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর কণ্ঠ খুব ক্ষীণ এবং অস্পষ্ট হওয়ায় শেষ ইচ্ছার কথা বিজ্ঞানীরা ভালো করে বুঝতে পারেননি। তবে তিনি যে কিছু শব্দ উচ্চারণ করেছেন তা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের বিশ্বাস, খুব তাড়াতাড়ি উন্নত প্রযুক্তির (Technology) মাধ্যমে মৃত্যুকালে তিনি ঠিক কী বলতে চেয়েছিলেন, তা সম্পূর্ণ বাক্যের মাধ্যমে উদ্ধার করতে পারা সম্ভব হবে। কিন্তু কীভাবে এমন তাজ্জব সম্ভব করলেন বিজ্ঞানীরা? ইতিহাসবিদেরা জানিয়েছেন, শেষ জীবনে মুখে সংক্রমণ হয়ে গিয়েছিল নেসিয়ামান। সংক্রমণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, দাঁত, মাড়ি ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। এই সংক্রমণ সারা দেহে ছড়িয়ে পড়তে মারাত্মক আলার্জিতে (Allergy) পরিণত ভয়। ৫০ বছর বয়সে তিনি মারা যান। মুখের সংক্রমণের জন্য শেষ জীবনে তিনি কথা বলতে পারতেন না। খুব কষ্টে কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে পারতেন মাত্র। মৃত্যুর পর তাঁর দেহ মমি করে রাখা হয়। জানা যায়, প্রথমে ওই মন্দিরের ভিতরের একটি ঘরে রাখা ছিল মমি। পরবর্তীকালে ১৮২৩ সালে মমি উদ্ধার করে ইংল্যান্ডের লিডস সিটি মিউজিয়ামে (Musume) দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করে রাখা হয়। এই মমি নিয়েই অনেক পরীক্ষা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সে সময়ের মিশর সম্পর্কে অনেক তথ্য এই মমি থেকে মিলেছে। ব্যবচ্ছেদ এবং এক্স-রে ব্যবহার করে তাঁর রোগ সম্পর্কেও তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে গত বুধবার সায়েন্টিফিক রিপোর্টস নামে এক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটি চাঞ্চল্য তৈরি করে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে। এই জার্নালেই মৃত্যুর তিন হাজার বছর পর ওই মমির কথা বলার উল্লেখ রয়েছে। ৩ডি প্রিন্টার ভোকাল বক্সের মাধ্যমে মমিকে কথা বলিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মানুষের ল্যারিংসে শব্দ তৈরি হয়। আর ভোকাল ট্র্যাক প্যাসেজে সেই শব্দ ফিল্টার হয়ে অর্থপূর্ণ শব্দ তৈরি করে। এই পুরো বিষয়টাকে একসঙ্গে মানুষের ভয়েস বক্স (Voice Box) বলা হয়। তিন হাজার বছর আগে নেসিয়ামান শেষ যে কথাটা বলেছিলেন, তা জানার জন্য প্রথমে বিজ্ঞানীরা তাঁর ভোকাল ট্র্যাকের ডাইমেনশন ৩ডি-প্রিন্টারে কপি করেন। তবে এই পদ্ধতি তখনই সম্ভব, যদি মৃত ব্যক্তির ভোকাল ট্র্যাকের নরম কোষগুলো অক্ষত থাকে। ওই মিশরীয় পুরোহিতের দেহ এত সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল যে, এত বছর পরও ভোকাল ট্র্যাকের কোষগুলো অক্ষত রয়েছে। সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে প্রথমেই সেটা পরীক্ষা করে জেনে নেন বিজ্ঞানীরা। তারপর ৩ডি-প্রিন্টারে ওই মমির ভোকাল ট্র্যাকের কপি করে ল্যারিংসে কৃত্রিমভাবে তাঁর কণ্ঠস্বর তৈরি করেন। তাতে তাঁকে ক্ষীণ কণ্ঠে ‘বেড’ বা ‘ব্যাড’ জাতীয় কিছু শব্দ উচ্চারণ করতে শোনা গিয়েছে। এটাই মৃত্যুর আগে শেষ ‘কথা’ ছিল তাঁর। আরও পড়ুন: Pakistan: বিয়ের আসর থেকে হিন্দু যুবতীকে অপহরণ! জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে পাকিস্তানি মুসলিম যুবকের
তবে এর অর্থ (Meaning) কী তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। স্কুপ ইম্পায়ারের খবর অনুযায়ী, আরও উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর শেষ বাক্য জানারও চেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেষ বলা কথাগুলো জানলে পারলে এত বছর পরও তাঁর শেষ ইচ্ছাপূরণ করা সম্ভব হবে বলেও দাবি করেছেন বিজ্ঞানীদের।