Flood Situation West Bengal (Photo: Twitter)

আরামবাগ, ১ অক্টোবর: নিম্নচাপের জেরে একনাগাড়ে বৃষ্টি (Rain)। তার উপর বিভিন্ন জলাধার থেকে ছাড়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জলরাশি। এই দুইয়ের যোগফলে বন্যা (Flood) পরস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের (South Bengal) একাধিক জেলায়। ইতিমধ্যেই ভাসছে দুই মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি এবং নদীয়ার একটি অংশ। এখনও পর্যন্ত ৫৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আজ সকালে মাইথন জলাধার থেকে ৮০ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে দেড় লাখ কিউসেকেরও বেশি জল ছাড়া হয়েছে। ফলে নতুন করে হাওড়া, হুগলির বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই হুগলির আরামবাগ, খানাকুলের বিস্তীর্ণ এলাকাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

একটানা বৃষ্টিপাতের জেরে ও ডিভিসির ছাড়া জলে প্লাবিত হয়েছে দ্বারকেশ্বর নদী। তাতে আরামবাগ পৌরসভার দৌলতপুর এলাকায় বাঁধ ভেঙে ১, ২, ৪, ৭, ১২, ১৫ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ড জলমগ্ন। একাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। বহু বাড়িতে জল ঢুকে ঘরের দেওয়াল পড়ে গিয়েছে। আরামবাগ থেকে বেশ কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আরামবাগ থেকে বর্ধমান, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে জল বইছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন উঁচু জায়গায় বা বাঁধের উপর। রাস্তার উপর ত্রিপলের নীচে রাত কাটাচ্ছেন অনেকে। কয়েক হাজার মানুষকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আরও পড়ুন: LPG Price Hike: পুজোর মুখে ৪৩ টাকা বাড়ল বাণিজ্যিক রান্নার গ্যাসের দাম

গতকাল পর্যন্ত আসানসোলে ৪৩৪.৫ মিমি বৃষ্টি হয়েছে, যা সর্বকালীন রেকর্ড। দুর্গাপুরে বৃষ্টির পরিমাণ ১৯৯.৪ মিমি, পুরুলিয়ায় ১৭৫ মিমি। অন্যদিকে বাঁকুড়ায় গত ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বৃষ্টি হয়েছে ৩৫৪.৩ মিমি। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যে, হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলায় উদ্ধারকাজে নামানো হয় ৮ কম্পানি সেনাকে। এছাড়াও কেন্দ্র ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ১২টি দল কাজ করছে বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে।

প্রবল বৃষ্টি কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমায়। শুক্রবার সকাল থেকে কল্লা, ছত্রপুর, গুন্দুরিয়া-সহ বিস্তীর্ণ গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কান্দি-ভরতপুর রাজ্যে সড়কের উপর দিয়ে জল বইছে। দুর্গাপুর, ম্যাসেঞ্জোর ও তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার ফলে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। একই অবস্থা দুই মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। ভগবানপুর, এগরা, পটাশপুর এলাকায় আবারও জল ঢুকছে। ঘাটাল মহকুমায় শিলাবতী ও ঝুমি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। চন্দ্রকোণার বসনছরা গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

ইতিমধ্যেই বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী-সহ অন্যান্য আধিকারিকদের কাছ থেকে খোঁজ নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গত এলাকাগুলিতে ত্রাণ নিয়ে যাতে কোনও সমস্যা তৈরি না হয়, তার নির্দেশ দিয়েছেন। ত্রাণ নিয়ে যাতে কোনও মানুষজন কোনও সমস্যায় না পড়ে, সেদিকে কড়া ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতি বৃষ্টির জেরে রাজ্যের জলাধারগুলির ধারণ ক্ষমতা বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। সেই কারণেই জল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ২ লাখ ৭৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছে। এর জেরে পশ্চিম বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়ার বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।