রাজ্যে ভোটে হিংসার ফাইল ছবি। ( (Photo Credits: PTI)

কলকাতা: দেশজুড়ে চলা লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election 2019) সবচেয়ে বেশী অশান্তির খবর আসছে বাংলা (Bengal) থেকেই। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ভোট চলাকালীন অশান্তিতে মৃত্যু, প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ, লাঠিহাতে পার্টি কর্মীদের দাপাদাপি, মিডিয়ার ওপর হামলা --সব কিছুই দেখা যাচ্ছে এবারের লোকসভা নির্বাচনে। কিন্তু কেন! ভোটের অশান্তি কীভাবে কেন ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যজুড়ে! শাসক দলের বেলাগাম সন্ত্রাস নাকি রাজ্যের নামে কালিমা ছড়ানোর জন্য সবটাই চক্রান্ত! পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা ১০-১৫ বছর আগের বিহারের মত, এমন দাবি করেছিলেন নির্বাচন কমিশন (Election Commission)-এর নিযুক্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক (Ajay Nayak)। এই মন্তব্যের পর অজয় নায়েকের সমালোচনা করেছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহল। তবে রাজ্য ভোটের দফা যত এগিয়েছে, হিংসা তত বেড়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)- র অভিযোগ বিজেপি বাইরে থেকে লোক এনে বাংলার নামকে কালিমালিপ্ত করার জন্য এসব করছে। আর বিজেপি-র অভিযোগ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস করে একচেটিয়া ভোটে জেতার ছক কষার ফলেই এত রক্ত ঝরছে। কিন্তু যারাই করুক, ঘটনা হল গোটা দেশের সামনে বাংলার ছবিটা মোটেও ভাল যাচ্ছে না। সাত দফার এই লোকসভা ভোটে হিংসা, রক্ত, মিডিয়ার গায়ে হাতে, বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা, নেতাদের কু কথার ভাষণ, সাম্প্রদায়িক উস্কানি -সবকিছুতেই দেশসেরা হয়ে উঠছে বাংলা। বাংলার ভোট দেখাচ্ছে গণতন্ত্রে 'কীভাবে ভোটে লড়তে হয় না'।

এক নজরে রাজ্যের ভোটে অশান্তি

প্রার্থীদের ওপর হামলা

ব্যারাকপুরে অর্জুন সিং, পূর্ব মেদিনীপুরে ভারতী ঘোষ, আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয়, গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়। রায়গঞ্জে মহম্মদ সেলিম, ডায়মন্ড হারবারে ফুয়াদ হালিম। বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলার ছবি দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। ভিডিও-তে দেখা গিয়েছে কেশপুরের মত অঞ্চলে মানুষ ঢিল ছুড়ছে। পুলিসের গাড়িতে আক্রমণের খবরও প্রকাশিত হয়েছে। কমিশনের অনেক বজ্র আটুনির পরও ফস্কা গেরো হয়ে প্রার্থীরা আক্রমণের মুখে পড়েছেন।

পার্টি কর্মীদের হত্যা

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছিলেন, ২০১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে বাংলায় ১০০জন বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীর হত্যা হয়েছে। রাজ্যকে এই বিষয়ে সতর্ক হতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সতর্কতার পরেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। বিরোধী কর্মীরা তো বটেই, শাসক দলের কর্মীরাও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। ২৬ এপ্রিল মালদায় তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। ১১ মে, ষষ্ঠ দফার ভোটের মাঝে ঝাড়গ্রামে বিজেপি-র এক বুথস্তরের কর্মী হিংসায় প্রাণ হারান। রাজনৈতিক হিংসায় পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ এলাকায় শেখ কামরুল নামের এক সিপিআইএম কর্মীর মৃত্যু হয়।

মিডিয়ার ওপর আক্রমণ

রাজ্যের ভোট কভার করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রান্তে সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণের ছবি দেখা গিয়েছে। সাংবাদিকের মাথা ফেটেছে, চিত্র সাংবাদিকের হাত থেকে ঝরছে রক্ত। মিডিয়ার গাড়িতে ভাঙা কাঁচ। এমন ভিডিও দেখা গিয়েছে। মিডিয়ার ওপর হামলার বেশিরভাগ অভিযোগের তীরই গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে। পঞ্চম দফার ভোটে মিডিয়ার ওপর হামলার পর এডিটারস গিল্ড বিবৃতি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

ছবি বিকৃতকাণ্ড

মেট গালায় বলিউড ডিভা প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার ছবিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ বসিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন বিজেপির যুব মহিলা মোর্চার নেত্রী প্রিয়াঙ্কা শর্মা। স্থানীয় তৃণমূল নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে তোলা হলে, প্রিয়াঙ্কাকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এরপরই প্রিয়াঙ্কার জামিনের আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় প্রিয়াঙ্কার পরিবার। মঙ্গলবার সেই মামলায় প্রিয়াঙ্কাকে মুক্তির নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বাধীনতার হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে মমতা সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা চলছে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।

প্রিয়াঙ্কা শর্মা ও তার শেয়ার করা মমতা ব্যানার্জির সেই বিকৃত ছবি। (Photo Credit: Facebook)

কমিশনের ভূমিকা

কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন থেকে বাহিনীকে সঠিক জায়গায় রাখা। স্পর্শকাতর অঞ্চলে বাহিনীর ভূমিকা। কখনও নির্বাচন কমিশনের কর্তাদের দুর্বল মন্তব্য। রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মমতা ব্যানার্জির দোষ?

৩৫ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা সিপিএমের বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ উঠেছিল তার সবগুলোই তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে উঠছে। কেশপুর, নানুরে বাম শাসনে যা ছবি দেখা যেত তা জোড়া ফুল শাসনেও দেখা যাচ্ছে। দিদির অভিযোগ, বাইরের লোক এনে সবটাই বিজেপির চক্রান্ত। সিপিএমের শীর্ষ নেতাদের মতে বিজেপি, তৃণমূল হল একই কয়েনের দুটো দিক।

ব্যাপার যাই হোক। রাজ্যে ভোটে হিংসা এবার চরমে উঠেছে। রাজ্যের ভাবমূর্তিতে দাগ লাগছে। সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব পড়ছে। এবার থামুক হিংসা। বাংলা বিখ্যাত তার ভদ্রতার জন্য, শিল্পকর্মের জন্য। শান্তি ফিরুক রাজ্যে।