
এক দশকে আধ ডজন বার ভোটে হেরে শেষ অবধি রাজনীতি ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন ভারতীয় ফুটবলের প্রবাদপ্রতিম চরিত্র বাইচুং ভুটিয়া (Baichung Bhutia )। ভারতীয় ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকার নাম এলে একেবারে প্রথম দিকের নামটা তাঁরই থাকবে। ক্লাব ফুটবলই হোক বা দেশের জার্সিতে বাইচুং ভুটিয়ার মত স্টারডম ভারতীয় ফুটবলে তেমনভাবে কেউ পাননি। ইংলিশ লিগের ক্লাবে নজির থেকে দেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশী গোলের নজির-সবই নিজের বর্ণময় ফুটবল কেরিয়ারে নজির গড়েছেন বাইচুং। কিন্তু ফুটবল থেকে অবসরের পর রাজনীতির কেরিয়ারটা একেবারে মনে রাখার মত হল না পাহাড়ি বিছের। দশ বছর সক্রিয় রাজনীতির পর বাইচুং এবার ঘোষণা করলেন তিনি আর রাজনীতিতে থাকবেন না। ফুটবল কেরিয়ারে যেটাতেই হাত দিয়েছেন বা বলা ভাল পা দিয়েছেন মিডাস টাচের মত সোনা ফলিয়েছেন বাইচুং। কিন্তু রাজনীতিতে হয়েছে ঠিক উল্টো। রাজনীতিবিদ বাইচুং প্রতিটি নির্বাচনে হারের লজ্জার নজির গড়েছেন। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিং লোকসভা নির্বাচনে বাইচুং লড়েন তৃণমূলের টিকিটে। কিন্তু বিজেপির সুরিন্দর সিং আলুওয়ালির কাছে বাইচুং হেরেছিলেন ২ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে। দু বছর পর বিধানসভায় ফের বাইচুংকে টিকিট দেন দিদি। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হারেন বাইচুং।
মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ঝড়ের মাঝেও শিলিগুড়িতে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে সিপিআইএমের অশোক ভট্টাচার্যের কাছে ৯ হাজার ভোটে হেরেছিলেন পাহাড়ি বিছে। এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল ছেড়ে নিজের পার্টি খোলেন সিকিমের ছেলে বাইচুং। হামরো সিকিম পার্টি খুলে বাইচুং সিকিমের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। কিন্তু গ্যাংটক বিধানসভা আসনে মাত্র ৫৭৯টি ভোট পেয়ে পঞ্চম হন পাহাড়ি বিছে। তাঁর দলও সিকিমে সব কটি আসনে একেবারে খারাপভাবে হারে। বাইচুং গ্যাংটক এবং তুমেন-লিঞ্জি কেন্দ্রে লড়ে দু’টিতেই হেরেছিলেন। ২০২৩ সালে নিজের হামরো সিকিম পার্টিকে এসডিএফ-এ মিশিয়ে দেন তিনি। চলতি বছর সিকিমে বিধানসভা ভোটে বাইচুং সরাসরি লড়েন। কিন্তু বারফাং বিধানসভা আসনে সিকিমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পবনকুমার চামলিংয়ের দল 'সিকিম ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট' (এসডিএফ)-এর প্রার্থী রিকশাল র্জি ভুটিয়ার কাছে সিএডএফের প্রার্থী বাইচুং হারেন ৪ হাজার ভোটে। এর মাঝে এআইএফএফ সভাপতি পদে লড়ে কল্যাণ চৌবের কাছে ১-২৩ ব্যবধানে হেরেছিলেন। এতবার ভোটে হারের পর আর রাজনীতিতে থাকবেন বলে জানিয়েছেন বাইচুং।
কিন্তু এত ঈর্ষণীয় ফুটবল কেরিয়ারের পরেও কেন বাইচুং সফল হতে পারলেন না? যেখানে তৃণমূলের হয়ে ভোটে লড়ে প্রাক্তন ফুটবলার লোকসভা ভোটে জয়ের হ্যাটট্রিক করেছেন প্রসূণ বন্দ্য়োপাধ্যায়। ক মাস আগে বাংলা থেকেই তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েছেন দুই প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ ইউসুফ পাঠান (বহরমপুর) ও কীর্তি আজাদ (পূর্ব বর্ধমান)। অনেকেই বলেন, রাজনীতিতে নেমে ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারেননি বাইচুং। সব কিছুতেই তাড়াহুড়ো, হিসেব করে পা ফেলা, রাজনীতিবিদদের পরামর্শ না শুনে কাজ করাই রাজনীতিতে বাইচুংকে সফল হতে দিল না। যদিও অনেকেই বলেন, পাহাড়ি বিছের রাজনৈতিক কেরিয়ারে ভাগ্যটাও একেবারে সঙ্গ দিল না। তা না হলে তৃণমূলের টিকিটে যে তিনবার লড়েছিলেন, অন্তত একবার তিনি জিততে পারতেন।