পার্থ প্রতিম চন্দ্র: এখনও বছর ঘোরনি। দিনটা ছিল ১৯ নভেম্বর, ২০২৩। আমেদাবাদে বিশ্বকাপের ফাইনালে রোহিত শর্মাদের জন্য সব কিছুই পুরো সাজানোই ছিল। স্টেডিয়াম ভরা দর্শক, টিভিতে কয়েক কোটি মানুষের চোখ, মন্দিরে লক্ষ লক্ষ ভক্তের বিশ্বকাপ জয়ের কামনায় পুজো, উপবাস। কিন্তু শেষ অবধি ১৫০ কোটি ভারতবাসীর চোখের জল ফেলে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ভারতকে হারিয়ে কাপ হাতে জিতেছিল প্যাট কামিন্সের অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয়দের সব প্রার্থনায় জল ঢেলে দিয়েছিল অজিরা।
সাত মাস পর আরও একটি বিশ্বকাপ ফাইনাল। এবার টি টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে। গতবারের মত সেই উন্মাদনটা নেই। কারণ ভাঙা বুকে মেঘের রঙ সিঁদুরই দেখায়। তবে অনেকেই এবার আশাবাদী রোহিতরা অবশেষে বিশ্বকাপ জিতবেন। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের টিম ইন্ডিয়ার হয়ে শেষ ম্যাচটা বিশ্বকাপ জিতেই উপহার দেবেন রোহিত-রা এমনটাই মনে করছেন সবাই। কিন্তু এবার ভারতীয়রা গতবারের চেয়ে সতর্ক। বিশ্বকাপ জয়ের আশা নিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় টিভির সামনে বসল দেশবাসী। টিভিতে চোখ, হাতে মোবাইল। তার মানেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন বিশ্বকাপই ট্রেন্ডিং। দেশের নেটিজেনদের পোস্ট, রিল, স্টেটাস দেখলেই বোঝা যায় ১৫০ কোটি মানুষের ভারত ঠিক একটা বিশ্বকাপের জন্য ঠিক কতটা চাতক পাখির মত অপেক্ষা করছে। সেখানে ৬ কোটি জনসংখ্যার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে সুযোগ ক্রিকেটে তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জেতার। আরও পড়ুন-সরাসরি দেখুন বিশ্বকাপ ফাইনাল
ছবিতে যে পিচে হবে ফাইনাল
FIRST LOOK OF PITCH FOR T20I WORLD CUP FINAL. [ICC]#INDvsSAFinal #INDvsSA2024 #T20WorldCup2024 #T20WorldCupFinal #RohitSharma #ViratKohli #IndiavsSouthAfrica #T20WorldCup #Barbados #IndiavsSouthAfrica pic.twitter.com/ioLGjAU4Is
— Himanshu Chaurasia (@_cricketguru) June 29, 2024
১৩টা বছর হয়ে গেল ক্রিকেটে (যে কোনও ফর্ম্যাটে) বিশ্বকাপ জেতেনি ভারত। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কথা হলে ১৭ বছর। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চালুর পর থেকে দুবার ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ধারেকাছে যেতে পারেনি টিম ইন্ডিয়া। তবে এবার বড় সুযোগ। শনিবার বার্বাডোজে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামছে ভারত। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ফের ভারতের সামনে সুযোগ বিশ্বসেরার হওয়ার। এর মাঝে ক্রিকেটের তিন ধরনের ফর্ম্যাট মিলিয়ে হয়ে গিয়েছে ১০টি বিশ্বকাপ (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ধরে)। তার মধ্যে টেস্টে দু বার এবং ওয়ানডে ও টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে একবার করে খেলেও কাপ আসেনি। এবার প্রশ্ন হল, পঞ্চমবারে সাফল্য আসবে কি? রোহিত শর্মা-রা চলতি টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য ক্রিকেট খেলেছেন। গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ডকে দাপট দেখিয়ে হারানোর পর সুপার এইটে আফগানিস্তান, বাংলাদেশের মত অস্ট্রেলিয়া-কেও একেবারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন রোহিত-রা। আর সেমিফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে তিন বিভাগেই পরাস্ত করে টিম ইন্ডিয়া।
ফাইনালে রোহিতদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাও ভাল খেলে ফাইনালে উঠেছে। তবে রোহিতদের মত অপ্রতিরোধ্য দেখায়নি আইডেন মার্করামের দলকে। সুপার এইট গ্রুপের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে একটা সময় হারের মুখে দাঁড়িয়ে বিপদের সম্ভাবনা ছিল। যদি সেই যাত্রায় প্রোটিয়াদের উদ্ধার করেন মার্কো জেনসেন। এমনকী গ্রুপের খেলায় নেদারল্যান্ডস, বাংলাদেশ, নেপালের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ে ভাগ্যের সহায়তাই বেশী ছিল। সেই তুলনায় রোহিতরা অনেক সহজ জয় পেয়েছেন।
তবে ফাইনাল সব সময়ই অন্য খেলা। তার ওপর সেটা শুধু টি টোয়েন্টির মত খামখেয়ালি ফর্ম্যাট হয়। এখানে রেকর্ড-পরিসংখ্যান-ইতিহাসের চেয়ে সেই সময়টা, সেই বলটা, আর সেই মুহূর্তটাই শেষ কথা বলে। দক্ষিণ আফ্রিকা এই প্রথম ক্রিকেটের কোনও বিশ্বকাপে খেলছে। হ্যানসি ক্রোনিয়ে-গ্যারি কার্স্টেন থেকে ল্যান্স ক্লুজনার-শন পোলক, গ্রেম স্মিথ থেকে এবি ডেভিলিয়ার্স-রা যেটা করতে পারেনি, সেটাই এবার মার্করাম, ডি কক, রাবাদা, মিলার-দের সামনে সুযোগ। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব ক্রিকেটে সবাই ডাকে চোকার্স নামে। কারণ দলটা দারুণ, ভাল ফর্মে থাকে, কিন্তু মোক্ষম মঞ্চে এসে বারবার চোক করে। ভারতীয়রা অবশ্য প্রোটিয়া-দের চোকার্সের খোঁচাটা দিতে চাইছেন না, কারণ তাহলে গত কয়েক বছর ধরে আইসিসি টুর্নামেন্টে টিম ইন্ডিয়ার পারফরম্যান্স দেখলেই চোকার্স তকমাটা তাদেরও লেগে গিয়েছে।
এখন দেখার, ১৩ বছরের অপেক্ষার শেষ হয় নাকি এই প্রথম একটা দেশ ক্রিকেটে বিশ্বসেরা হয়।