গ্লুকোমা হল চোখের একটি রোগ। চোখের অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি করে গ্লুকোমা। সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গগুলির মধ্যে একটি হল চোখ। চোখের উপর খুব বেশি চাপ পড়লে অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে, যা গ্লুকোমার মতো গুরুতর রোগের কারণ হয়ে ওঠে। গ্লুকোমা হলে চোখের ভিতরে থাকা তরল পদার্থের চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। এর ফলে অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি হতে শুরু হয়। চোখের এই স্নায়ুগুলি মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায়, যার কারণে মস্তিষ্কে একটি ছবি তৈরি হয়। গ্লুকোমা রোগীদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের এই গ্লুকোমার সমস্যা হয়। তবে প্রশ্ন হল এই রোগ কি কম বয়সী মানুষ এবং শিশুদেরও হয়?

বিশ্বব্যাপী দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্লুকোমার ঝুঁকি। এই চোখের রোগ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার জন্য এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ মার্চ পালন করা হয় বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস। চিকিৎসকদের মতে, সময়মতো যত্ন না নিলে বা চিকিৎসা না করলে গ্লুকোমার সমস্যার কারণে অন্ধও হয়ে যাওয়া সম্ভব। পরিবারে গ্লুকোমার সমস্যা থাকলে ঝুঁকি বেশি হতে পারে, এই ধরনের পরিবারের সদস্যদের প্রতিরোধের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬০ বছর বয়সের পর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের বিভিন্ন সমস্যার সঙ্গে গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। চোখের অভ্যন্তরে তরলের উচ্চ চাপের কারণে যেকোনও বয়সের মানুষের চোখে হতে পারে গ্লুকোমার সমস্যা। এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা গেছে শিশুদেরও। অনেকেই গ্লুকোমার সমস্যা নিয়ে জন্ম হয়, যার লক্ষণগুলি দেখতে পাওয়া যায় জন্ম থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে। এছাড়া চোখে আঘাত বা যেকোনও ধরনের অস্ত্রোপচারের কারণে অল্প বয়সেই বেড়ে যায় গ্লুকোমার সমস্যা। সকলের গ্লুকোমার লক্ষণগুলির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত।

প্রথমে গ্লুকোমায় আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কোনও সমস্যা হয় না, সমস্যাটি গুরুতর হওয়ার পর লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। গ্লুকোমার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অপটিক নার্ভ ফাইবারগুলি। গ্লুকোমার ফলে ঝাপসা দৃষ্টি থেকে শুরু করে চোখে তীব্র ব্যথা হয়। এছাড়া আলোর চারপাশে রংধনুর মতো বৃত্ত দেখতে পাওয়া যায়, বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে গ্লুকোমার চিকিৎসার জন্য প্রথমে চোখের উপর পড়া চাপ কমানোর চেষ্টা করা হয়। এর জন্য চোখের ড্রপ সহ অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কারণ চাপ বেশি হলে চোখ থেকে তরল অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে। শিশু সহ প্রত্যেককে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করা উচিত। চোখ পরীক্ষার মাধ্যমে সনাক্ত করা যায় স্নায়ুর উপর কতটা চাপ রয়েছে, এর ফলে সময়মতো যেকোনও গুরুতর ঝুঁকি সনাক্ত করা যায়।