সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন মহান নেতা এবং বিপ্লবী। নেতাজি তাঁর সাহস, দৃঢ় সংকল্প এবং অনন্য কৌশলের জন্য পরিচিত। নেতাজি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনকে এক নতুন দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং দেশবাসীর মধ্যে দেশপ্রেম ও ত্যাগের চেতনা জাগ্রত করেছিলেন। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর সর্বস্ব উৎসর্গ করেছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। দেশ ও সমাজের প্রতি কর্তব্য পালন করতে শেখায় তাঁর অনুপ্রেরণা।

১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িশার কটকে জন্মগ্রহণ করেন সুভাষ চন্দ্র বসু। তাঁর বাবার নাম ছিল জনকনাথ বসু, যিনি একজন বিখ্যাত আইনজীবী ছিলেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ১৯২০ সালে মর্যাদাপূর্ণ ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসেস (আইসিএস) পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অর্জন করেন, তবে ব্রিটিশ সরকারের হয়ে কাজ করার পরিবর্তে দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করাই ভালো মনে করেছিলেন নেতাজি।

সুভাষচন্দ্র বসুই প্রথম ব্যক্তি যিনি মহাত্মা গান্ধীকে জাতির পিতা বলে সম্বোধন করেছিলেন। ১৯৪৪ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থনের জন্য সিঙ্গাপুর রেডিও থেকে গান্ধীজিকে এই উপাধি দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে, মহাত্মা গান্ধী জাতির পিতা হিসেবে দেশে এবং বিদেশে বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বিশিষ্ট নেতা হয়ে ওঠেন নেতাজি। ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৪৩ সালে জাপানের সহায়তায় "আজাদ হিন্দ ফৌজ" প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষ চন্দ্র বসু। এই সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করা।

"আজাদ হিন্দ ফৌজ"-এর অধীনে "দিল্লি চলো" স্লোগান দেওয়া হয়েছিল, যা লক্ষ লক্ষ ভারতীয়কে অনুপ্রাণিত করেছিল। জার্মানি এবং জাপানের মতো দেশের সমর্থন পেয়েছিলেন নেতাজি। জার্মানিতে ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের কাছ থেকে আজাদ হিন্দ রেডিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তিনি। বলা হয় যে ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি, তবে এই বিষয়ে অনেক তত্ত্ব এবং বিতর্ক রয়েছে। এককথায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যু আজও রহস্যময়।