ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। সরল জীবনযাপন এবং সততার জন্য স্মরণ করা হয় তাঁকে। ১৯০৪ সালের ২ অক্টোবর, উত্তরপ্রদেশের মুঘলসরাইতে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। শাস্ত্রীজির মাত্র দেড় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তাঁকে ও তাঁর দুই ভাইবোনকে অনেক কষ্টে বড় করেছেন শাস্ত্রীজির মা। একজন মেধাবী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্র ছিলেন শাস্ত্রীজি। প্রতিভার ভিত্তিতে বারাণসীর একটি জাতীয়তাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় কাশী বিদ্যাপীঠ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে ১৯২১ সালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন শাস্ত্রীজি।
অহিংস প্রতিবাদ ও আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য ব্রিটিশরা বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধ করেছিলেন শাস্ত্রীজিকে। এছাড়া ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর, উত্তর প্রদেশ সরকারের পরিবহন ও রেলপথ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাস্ত্রীজি। এরপর ১৯৫১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারে রেলমন্ত্রী এবং ১৯৫৬ সালে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬১ সালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। এই সময়ে অত্যন্ত দক্ষতা ও কূটনীতির সঙ্গে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত বিরোধের স্পর্শকাতর ইস্যুটি পরিচালনা করেন শাস্ত্রীজি।
১৯৬১ সালে পর্তুগিজ শাসন থেকে গোয়াকে মুক্ত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। এরপর ১৯৬৪ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাস্ত্রীজি। প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকাকালীন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন শাস্ত্রীজি, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। এছাড়াও তিনি ভারতের অর্থনীতি ও কৃষিকাজের জন্য সবুজ বিপ্লব সহ অনেক উদ্যোগ নিয়েছিলেন। একজন জনপ্রিয় এবং সম্মানিত নেতা ছিলেন শাস্ত্রীজি। ১৯৬৬ সালের ১১ জানুয়ারি মৃত্যু হয় এই মহান ব্যক্তিত্বের। পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি সম্মেলনে যোগদানের সময় উজবেকিস্তানের তাসখন্দে মৃত্যু হয় তাঁর। তবে দেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন লাল বাহাদুর শাস্ত্রী।