কয়েক দশকের ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার ও অন্যায় সহ্য করে বহু ত্যাগ ও প্রাণের বিনিময়ে ১৯৪৭সালের ১৫ই অগাস্ট মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল দেশ ৷ বিদেশি শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করে সেদিন স্বাধীনতার এক অনির্বাণ জ্যোতি জ্বেলেছিল ভারতবাসী ৷ যা আজও স্বগর্বে প্রজ্জ্বলিত ৷ ওইদিন লালকেল্লা থেকে প্রথমবারের জন্য উত্তোলিত হয়েছিল স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা, তেরঙা ৷ উত্তোলন করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু ৷ বড় সাধের সেই স্বাধীনতা ৷ গর্বের, আবেগের, দেশের কোটি কোটি নাগরিকের পরিচয়ের সেই স্বাধীনতা নানা পথ পেরিয়ে ৭৫ বছর পার করেছে। বলা যায় ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট যে চারা গাছ মাথা তুলেছিল আজ তা ৭৫ বছরের মহীরূহ ৷
আজ দেশ যে স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে (75 Years of Independence), তার কৃতিত্বের সর্বপ্রথম দাবিদার নাম জানা-অজানা এমন বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী যাঁরা ব্রিটিশ দাসত্ব-শৃঙ্খল মোচনে লড়েছিলেন ৷ আজ শ্রদ্ধা জানাব সেই বীর সেনানিদের-
ভগৎ সিং: ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের উল্লেখযোগ্য নাম ভগৎ সিং (Bhagat Singh) ৷ সেই অগ্নিযুগের শহিদ বিপ্লবীদের মধ্যে অন্যতম হলেন তিনি ৷ দেশের স্বার্থে মাত্র ২৩ বছর বয়সে নিজের প্রাণ দিয়েছিলেন এই বীর বিপ্লবী ৷ ব্রিটিশ শাসকদের বার্তা দিতে ১৯২৯ সালের ৮ এপ্রিল সঙ্গী বটুকেশ্বর দত্তকে নিয়ে দিল্লির সেন্ট্রাল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলিতে বোমা মেরেছিলেন ভগৎ সিং ৷ যদিও কাউকে হত্যা নয়, ব্রিটিশদের ভয় পাওয়ানোই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য ৷ গ্রেফতার করা হয় তাঁকে ৷ এরপর জন সন্ডার্সের হত্যা-সহ একাধিক মামলায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ৷ ১৯৩১ এর ২৩শে মার্চ লাহৌর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসি হয় এই বিপ্লবীর ৷
ক্ষুদিরাম বসু:দেশের কনিষ্ঠতম স্বাধীনতা সংগ্রামী, যাঁরা দেশের স্বার্থে প্রাণ দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম বঙ্গ সন্তান ক্ষদিরাম বসু (Khudiram Bose) ৷ মাত্র ১৫বছর বয়সে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজেকে ব্রতী করেছিলেন মেদিনীপুরের এই বীর সন্তান ৷ কুখ্যাত ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়েছিলেন ক্ষুদিরাম ও তাঁর সঙ্গী প্রফুল্ল চাকি ৷ সেই চেষ্টা সফল না-হলেও ভুলবশত তাঁদের নিক্ষেপ করা বোমাতে মারা যান মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা ৷ পুলিশ ধরার আগেই প্রফুল্ল চাকি আত্মহত্যা করেন ৷ ক্ষুদিরাম বসুকে গ্রেফতার করা হয় ৷ বিচারের পরে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয় ৷ ১৯০৮ সালের ১১ অগস্ট মাত্র ১৮বছর বয়সে হাঁসতে হাঁসতে ফাসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করেন তিনি ৷
মাতঙ্গিনী হাজরা: মহাত্মা গান্ধীর ডাকে ভারত ছাড় আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। মেদিনীপুরে তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একটি মিছিল চলাকালীন ব্রিটিশ পুলিশের গুলি এসে লাগে তাঁর দেহে। তবু তিনি চলা থামাননি। হাতে তেরঙ্গা, মুখে বন্দেমাতরম স্লোগান নিয়ে শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও তিনি সেইদিন এগিয়ে গিয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন নিয়ে।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু: ভারতের স্বাধীনতা ইতিহাসের অন্যতম বীর সন্তান হলেন সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose) ৷ মহাত্মা গান্ধির কিছুটা উলটো পথে হেঁটেই সশস্ত্র আন্দোলন ও লড়াইয়ের মাধ্যমে দেশমাতৃকাকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন এই বাঙালি বীর সন্তান ৷ ব্রিটিশ রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে গড়েছিলেন পরাধীন ভারতের প্রথম সরকার ৷ তাঁর নেতৃত্বেই পূর্ণতা পেয়েছিল 'আজাদ হিন্দ বাহিনী' ৷ তাঁর দৃপ্ত কণ্ঠে, "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব" এই আহ্বান শতশত তরুণ-তরুণীকে উদ্বুদ্ধ করেছিল দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিতে ৷