(Photo Credits: Getty Images)

ভুবনেশ্বর, ১৫ নভেম্বর: জাতির জনক মহাত্মা গান্ধি (Mahatma Gandhi) নাকি দুর্ঘটনায় ( accidental reasons) মৃত্যু হয়েছিল। এই তথ্যই রয়েছে ওড়িশার (Odisha) সরকারি স্কুলে বিলি হওয়া একটি পুস্তিকায়। আর এই কারণে জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গোটা ঘটনায় বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা মুখ্যমন্ত্রী নবীন পটনায়েকের (Chief Minister Naveen Patnaik) ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া ত্রুটি সংশোধনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন। মহাত্মা গান্ধির দেড়শতম জন্মবার্ষিকী (150th birth anniversary of Mahatma Gandhi) উপলক্ষ্যে প্রকাশিত "আমাদের বাপুজি: এক ঝলকে" ( "Aama Bapuji: Eka Jhalaka") এই নামে দু'পাতার পুস্তিকা বের করা হয়। সেই পুস্তিকায় গান্ধিজির শিক্ষা, আদর্শ, কাজ ও ওড়িশার সঙ্গে তাঁর মেলবন্ধনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে। সেই বইতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে গান্ধিজি ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি দিল্লির বিড়লা হাউসে (Birla House) আকস্মিক দুর্ঘটনার কারণে মারা গেছিলেন। বিষয়টি সামনে আসতেই নবীন পটনায়েক সরকার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। স্কুল ও গণশিক্ষা দফতর এই পুস্তিকা ছাপিয়েছিল সরকার পরিচালিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে বিতরণের জন্য। কী কারণে ও কী পরিস্থিতিতে এই ভুল হয়েছে তা দেখার জন্যই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, সরকার ইতিমধ্যেই স্কুল থেকে এই পুস্তিকা প্রত্যাহারের কাজ শুরু করেছে।

সরকার তদন্তের নির্দেশ দিলও তাতে চিড়ে ভিজছে না বিরোদীদের। কংগ্রেসের তরফে এই ত্রুটিকে অমার্জনীয় কাজ বলে দাবি করা হয়েছে। রাজ্যের প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী নরসিংহ মিশ্র (Narasingha Mishra) বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী সরকারের প্রধান হওয়ায় এই ভুল তথ্যের জন্য তাঁকেই ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।" কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা বলেন, "পটনায়েককে অবশ্যই এই ভুলভ্রান্তির দায় নিতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাত্ক্ষণিকভাবে পুস্তিকাটি প্রত্যাহারের নির্দেশ জারি করতে হবে।" বিজু জনতা দল (BJD) সরকার গান্ধি বিদ্বেষীদের পক্ষ নিচ্ছে বলে অভিযোগ করে মিশ্র বলেন, "মহাত্মা গান্ধিকে কে হত্যা করেছে এবং কী পরিস্থিতিতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল তা জানার অধিকার সব শিশুদের রয়েছে।" তিনি আরও যোগ করেন, "জাতির পিতার মৃত্যুকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যাতে এটি তাঁর শত্রুদের খুশি করা যায়।" আরও পড়ুন: Ahmedabad: 'বয়ফ্রেন্ড বা স্বামীর সামনে মহিলাদের ধর্ষণ করত এই ব্যক্তি'

একই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন সিপিআই-র রাজ্য সম্পাদক আশিস কানুনগো। তাঁর অভিযোগ, "এই পদক্ষেপটি ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার এবং সত্যকে আড়াল করার ষড়যন্ত্রের অংশ।" তিনি আরও বলেন, "প্রত্যেকেই জানেন যে নাথুরাম গডসে গান্ধিজিকে হত্যা করেছিলেন, তারপরেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাচ্চাদের সত্য বলা উচিত এবং পুস্তিকাটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত।"

সরকার বাচ্চাদের বিভ্রান্ত করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে চেষ্টা' করেছে বলে দাবি করে সিপিআই (এম) এর প্রবীণ নেতা জনার্দন পাতি বলেন, "মিথ্যা ধূর্ত পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে এই ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।" রাজ্যের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনোরঞ্জন মহান্তি সরকারি প্রকাশনায় তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপনের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। গডসের প্রতি সহানুভূতিশীলরা অবশ্যই লেখক এবং প্রকাশককে প্রভাবিত করেছেন বলে দাবি করেন সামাজকর্মী প্রফুল্ল সামন্তরা। এই বিষয়ে রাজ্য স্কুল ও গণশিক্ষা মন্ত্রী সমীর রঞ্জন দাশ বলেন, "বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সহকারে দেখছে। এই কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"