একটি গবেষণায় জানা গেছে যে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ 'ভায়াগ্রা' সাহায্য করতে পারে গর্ভাবস্থায় বা জন্মের সময় অক্সিজেনের অভাবে ভুগছে এমন শিশুদের চিকিৎসাতেও। অক্সিজেনের ঘাটতিতে ভুগছেন এমন নবজাতকদের চিকিৎসার বিকল্প সীমিত। এই ধরনের ক্ষেত্রে, থেরাপিউটিক হাইপোথার্মিয়া মস্তিষ্কের ক্ষতি রোধ করার একমাত্র বিকল্প, তবে ২৯ শতাংশ শিশু যারা এটি গ্রহণ করে তাদের পরে তৈরি হয় স্নায়বিক ব্যাধি।
কানাডার মন্ট্রিল চিলড্রেন'স হসপিটালের (এমসিএইচ) গবেষকদের একটি দল গবেষণার পর বলেছেন, ভায়াগ্রা ব্র্যান্ড নামে পাওয়া সিলডেনাফিল একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে। গবেষকরা আরও বলেছেন, "এটি নবজাতক এনসেফালোপ্যাথি দ্বারা সৃষ্ট মস্তিষ্কের ক্ষতি ঠিক করার চেষ্টা করার প্রথম প্রমাণ-অধ্যয়ন"। থেরাপিউটিক হাইপোথার্মিয়া থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের শিশুদের মধ্যে সিলডেনাফিলের ব্যবহার নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এক গবেষক বলছেন, "বর্তমানে, যখন একটি শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়, তখন ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি বা বিশেষ যত্ন ছাড়া অন্য কিছু সুবিধা নেই"৷ "যদি এমন ওষুধ থাকত যা মস্তিষ্ক ঠিক করতে পারে, তবে এটি এই ধরনের শিশুদের ভবিষ্যত পরিবর্তন করতে পারে। এটি তাদের এবং তাদের পরিবারের জন্য এবং সাধারণভাবে সমাজের একটি জয় হবে।"
ইঁদুরের মডেলগুলির উপর করা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে সিলডেনাফিলে প্রাপ্তবয়স্ক স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকা রোগীদের মধ্যে নিউরোস্টোরেটিভ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। তাই গবেষকদের দলটি নবজাতক শিশুদের মস্তিষ্কে এর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা করার কথা ভেবেছিলেন। ক্লিনিকাল অধ্যয়নের প্রথম পর্যায়ে মাঝারি থেকে গুরুতর নবজাতক এনসেফালোপ্যাথির সঙ্গে ৩৬ সপ্তাহ বা তার বেশি গর্ভাবস্থায় জন্মগ্রহণকারী ২৪ শিশুকে যুক্ত করা হয়েছিল, যাদের থেরাপিউটিক হাইপোথার্মিয়াতে রাখা হয়েছিল এবং চিকিৎসা সত্ত্বেও তাদের মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়েছিল।
গ্রুপের আটজনকে জন্মের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন থেকে ৭ দিনের জন্য দিনে দুবার (মোট ১৪ টি ডোজ) সিলডেনাফিল দেওয়া হয়েছিল। অন্য তিনটি শিশুকে দেওয়া হয়েছিল প্লাসিবো। আটটি শিশুর মধ্যে দুই শিশুর, সিলডেনাফিলের প্রথম ডোজের পরে রক্তচাপ সামান্য হ্রাস পেয়েছিল, কিন্তু তারপরে এটি পুনরাবৃত্ত হয়নি, অন্যদিকে প্লাসিবো গ্রুপের শিশুদের মধ্যে কেউ মারা যায়নি।
গবেষকরা জানান, "গবেষণাটির ফল হিসেবে জানা যায় যাদের মস্তিষ্কে এনসেফালোপ্যাথির কারণে ক্ষতি হয়েছে তাদের উপর সিলডেনাফিল ভালোভাবে কাজ করেছে।" এছাড়া সিলডেনাফিল দিয়ে চিকিৎসা করা ৫ নবজাতকের আঘাত আংশিকভাবে ঠিক হয়ে গিয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে সেই শিশুদের মধ্যে খুব ভালো ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়। গবেষকরা আরও জানান, "সিলডেনাফিল সস্তা এবং ব্যবহার করাও সহজ। গবেষণার পরবর্তী পর্যায়েও যদি এটি সহায়ক প্রমাণিত হয় তাহলে এটি গোটা বিশ্বের এনসেফালোপ্যাথিতে আক্রান্ত শিশুদের জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে।"