প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস (International Mother Language Day)। এই দিনের উদ্দেশ্য হল ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং বহুভাষিকতার প্রচার করা। এটি প্রথম ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো কর্তৃক ঘোষণা করা হয় এবং তারপর ২০০২ সালে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব গ্রহণের মাধ্যমে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ (UNGA) দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রথম ইচ্ছা প্রকাশ করে বাংলাদেশ (Bangladesh)। ২১ ফেব্রুয়ারি সেই দিন যেদিন বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) মানুষ বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য লড়াই করেছিলেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পালিত হয় এই দিনটি। চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক রাষ্ট্রীয় ভাষা, সরকারি ভাষা এবং মাতৃভাষার মধ্যে পার্থক্য কী।

  • মাতৃভাষা হল যেই ভাষা আমরা জন্মের পর কথা বলতে শেখার সময় শিখি। আমরা যেখানে জন্মগ্রহণ করি সেখানকার কথ্য ভাষা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিখি আমরা। আরও সহজ ভাষায় বুঝতে হলে, যে ভাষা আমরা জন্মের পর প্রথম বলি, তাই হল আমাদের মাতৃভাষা। যেমন কেউ পাঞ্জাবে জন্ম নিলে পাঞ্জাবি হবে তার মাতৃভাষা। আবার কেউ মহারাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করলে মারাঠি হবে তার মাতৃভাষা।
  • অন্যদিকে একটি দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাকে বলে রাষ্ট্রীয় ভাষা। রাষ্ট্রীয় ভাষা দেশের সরকারী ভাষা হয় এবং এই ভাষাই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার রাষ্ট্রীয় ভাষা ইংরেজি , যার জন্য ২০০৬ সালের মে মাসে সিনেট দ্বারা একটি বিল পাস হয়েছিল। তবে ভারত বৈচিত্র্যের দেশ এবং এটিই ভারতের সবচেয়ে বড় পরিচয়। অনেক ভাষা ও উপভাষা নিয়ে ভারত গঠিত। এমন অবস্থায় কোনও একক ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়নি। ভারতের একটি বিশাল জনসংখ্যা হিন্দিভাষী, অন্যদিকে বিপুল সংখ্যক মানুষ হিন্দি বোঝে না। তাই এই দেশে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে কোনও ভাষা শেখার এবং কথা বলার বাধ্যবাধকতা নেই।
  • সরকারী ভাষা হল সেই ভাষা যা সরকারী বা প্রশাসনিক কাজে ব্যবহৃত হয়। হিন্দি হল ভারতের সরকারী ভাষা। ভারতের সরকারী অফিস এবং অন্যান্য জায়গায়, বেশিরভাগ কাজ শুধুমাত্র হিন্দি ভাষায় হয়। ১৯৪৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারী ভাষার মর্যাদা পায় হিন্দি ভাষা। এরপর ১৯৫৩ সাল থেকে, প্রতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর সরকারি ভাষা প্রচার কমিটি দ্বারা আয়োজন করা শুরু হয় হিন্দি দিবসের।