Election, Representational Image (Photo Credit: File Photo)

নতুন দিল্লি, ২৪ অগাস্ট:  লোকসভা ভোটের পর দেশের প্রথম বড় নির্বাচন হতে চলেছে আগামী মাসে (সেপ্টেম্বর)। দশ বছর পর জম্মু-কাশ্মীরে হতে চলেছে বিধানসভা নির্বাচন। সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হরিয়ানায় (Haryana । ৪০০ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফেরার দাবি জানিয়ে নরেন্দ্র মোদী লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেয়েছেন। টিডিপি, জেডি (ইউ)-এর মত অতীতে বিরোধিতা করা দলগুলিকে নিয়ে কোনও রকমে দেশের ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। তবে এবার থেকে প্রতিটি বিধানসভা নির্বাচন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।

সংবিধানের ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর জম্মু-কাশ্মীরের প্রথম বিধানসভা নির্বাচনটা বিজেপি-র কাছে অগ্নিপরীক্ষার। যে ৩৭০ ধারাকে প্রশাসক নরেন্দ্র মোদীর সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত বলে প্রচার চালিয়েছে বিজেপি, সেই সিদ্ধান্তটা জম্মু-কাশ্মীর-বাসী কীভাবে নিয়েছে তার পরীক্ষা এবার। ভূ স্বর্গে ক্ষমতায় আসতে না পারলে তা, ক মাস আগে লোকসভা অযোধ্যায় হারের মতই বিজেপির পক্ষে অস্বস্তির হতে চলেছে। লোকসভায় ভূ স্বর্গে কোনও আসন না পাওয়া কংগ্রেসের কাছেও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভা নির্বাচনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রত্যাশিতভাবে লোকসভা ভোটে ৯৯টি আসন জিতে দেশের রাজনীতিতে দারুণভাবে প্রাসঙ্গিক কংগ্রেসের কাছে আগামী দু বছরে সব কটি বিধানসভা নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মোদীকে চাপে রাখতে হলে বেশ কয়েকটি রাজ্যে সরকার গড়তেই হবে কংগ্রেসকে। আর তার শুরুটা জম্মু-কাশ্মীর হলে সবচেয়ে খুশি হবেন সোনিয়া-রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস এবার ভূ স্বর্গে ফারুক আবদুল্লা-র ন্যাশনল কনফারেন্সের সঙ্গে জোট গড়ে লড়ছে। আরও পড়ুন-প্রবল ঝড়বৃষ্টির জেরে আছড়ে পড়ল হেলিকপ্টার, কী অবস্থায় যাত্রীরা?

অন্যদিকে, দশ বছর ধরে হরিয়ানায় এবার ক্ষমতা ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টায় বিজেপি। হরিয়ানায় লোকসভা ভোটে বড় ধাক্কা খেয়েছে পদ্ম-শিবির। ২০১৯ লোকসভায় হরিয়ানার সব কটা লোকসভা আসনে জিতেছিল বিজেপি, সেখানে এবার তারা ৫০ শতাংশে হেরেছে। রাজ্যে পদ্ম-শিবিরের ভোটবাক্সে ধস নেমেছে। কিছুটা জায়গা ছাড়া হরিয়ানায় বিজেপি-র গড় পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। মনোহর লাল খট্টার-কে সরিয়ে নায়াব সিং সাইনি-কে মুখ্যমন্ত্রী করে আনলেও হরিয়ানায় বিজেপির তেমন লাভ হয়নি। হরিয়ানায় কংগ্রেসের কাছে বড় সুযোগ। তবে সেখানে হাত শিবিরের বড় কাঁটা হুডা পরিবারের সঙ্গে কুমারী সেলজা-র মধ্যে দ্বন্দ্ব।

দেখুন এই দুই রাজ্যে নির্বাচন নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা--

১) কবে দফায় ভোট- জম্মু-কাশ্মীরে তিন দফায় ভোট। হরিয়ানায় ভোট এক দফায়।

২) কবে ভোট, ফলপ্রকাশ- জম্মু কাশ্মীরে তিন দফায় ভোটের দিনগুলি হল-১৮ সেপ্টেম্বর,২৫ সেপ্টেম্বর ও পয়লা অক্টোবর। হরিয়ানায় এক দফায় ভোটগ্রহণ পয়লা অক্টোবর। ফলপ্রকাশ ৪ অক্টোবর।

৩) রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন: জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুব জটিল। সাধারণত ভূ স্বর্গে গত কয়েক বছরের ট্রেন্ড হল জম্মু-তে দাপট দেখায় বিজেপি, আর কাশ্মীরে ন্যাশনাল কনফারেন্স ও পিডিপি। এর মাঝে কিছু জায়গায় কংগ্রেসের ভাল ভোট আছে। তবে এবারের বিধানসভা ভোটে এভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহলের মতে, ভূ স্বর্গের ফলে বড় চমক থাকবে এটা নিশ্চিত। কিন্তু কে এগিয়ে, বা কে পিছিয়ে তা বলা খুব কঠিন। তবে একটা মহলের ধারনা কংগ্রেস-ন্যাশনল কনফারেন্স এবার সরকার গড়তে পারে। ২০১৪ বিধানসভায় সবচেয়ে বেশী আসনে জেতা মেহবুবা মুফতির দল পিডিপি-র ভোটব্যাঙ্কে ধস নামতে পারে। ভূ স্বর্গে সরকার গড়তে হলে প্রয়োজন ৪৬ জন বিধায়কের সমর্থনের। বিজেপি-কে একা এই ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে হলে চমকপ্রদ কিছু করতে হবে। কাশ্মীরের কয়েকটি জেলায় বিজেপির পক্ষে আসন জয় কার্যত অসম্ভব হওয়ায় গেরুয়া শিবিরের কাজ কঠিন।

অন্যদিকে, হরিয়ানায় দশ বছর পর ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে এগিয়ে কংগ্রেস। তবে কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়তে হবে। ২০১৯ হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে ৯০টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৪০, কংগ্রেস ৩০টি, জেজেপি ১০টি ও নির্দলরা ১০টি আসনে জিতেছিল। এবার জেজেপি-র ভোটব্যাঙ্কে কংগ্রেস ভাগ বসাতে পারে। তাহলে হরিয়ানায় হাত সরকার নিশ্চিত হয়ে যাবে। তবে বিজেপি প্রচারে ঝড় তুলে খেলা ঘোরানোর চেষ্টায়।

৪) কারা এগিয়ে- জম্মু-কাশ্মীর ৫০:৫০। হরিয়ানায় কংগ্রেসের পক্ষে ৫২:৪৮। বিশেষজ্ঞদের এমনই মত। তবে প্রচার শেষে বলা যাবে ঠিক কী হতে পারে।

৫) দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিক থেকে এই দুই রাজ্যের ভোট কতটা গুরুত্বপূর্ণ- বিজেপি ২৪০টি আসনে জিতে দেশের ক্ষমতায় এসেছে। যেখানে ম্যাজিক ফিগার ২৭২। এবার নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেড ও চন্দ্রবাবু নাইডু-র টিডিপি-র সমর্থনে এনডিএ এখন ২৯৩-এ দাঁড়িয়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে যা মাত্র ২০-২১ বেশী। এমন সময় প্রতিটি বিধানসভা নির্বাচন, বিশেষত যেখানে বিজেপি বা এনডিএ ক্ষমতায় আছে সেগুলি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজ্যস্তরের ভোটে হারতে শুরু করলে দেশের রাজনীতির ভারসাম্যের খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হবে গেরুয়া শিবিরের কাছে।