কলকাতা, ২৬ এপ্রিল: সহ্যশক্তির সব মাত্রা যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছে কলকাতার গরম। তাপমাত্রা কী বলল, 'ফিল লাইক টেম্পারেচার'টা ঠিক কত-সেসব হিসেব একবার গুগল করলেই মিলে যাচ্ছে। কিন্তু এই অসহ্য গরম নিয়ে শহরের মুডটা ঠিক কেমন? চিংড়িহাটা থেকে চেতলা, সরশুনা থেকে সল্টলেক, বেহালা থেকে বেলগাছিয়া-সর্বত্র এক ছবি। কাজের সূত্রে যাদের বেরোতে হয়েছে, তারা অনেকেই একেবারে ক্লান্তবোধ করছেন। অনেকে অসুস্থও হয়ে পড়ছেন। রাস্তায় ভিড় একবারে কম। ট্র্যাফিক পুলিশরা নিজেদের কর্তব্যে অটল থাকলেও, তাঁরা গরমের সঙ্গে লড়াইয়ে মাঝেমাঝে হার মানছেন বলে স্বীকার করছেন। এই গরমে যাদের রাস্তায় কাজ, বেরোতেই হচ্ছে তারা ক দিন এভাবে লড়াই করবেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। হাওয়া অফিস থেকে সাবধানবাণী এসেছে আগেই, দুপুর হলেই কলকাতার রাস্তা শুনশান। যেন অঘোষিত লকডাউন। তবু তো পেট চালাতে বেরোতেই হচ্ছে। তাদের জন্য অনেকেই সমাজসেবায় নেমে পথচারীদের ঠান্ডা জল দিচ্ছেন। ছবিগুলো প্রমাণ করছে, কলকাতা আছে কলকাতাতেই।
তাপপ্রবাহের তিলোত্তমায় কয়কে জনের সঙ্গে কথা বলা গেল। বেহালা ট্রামডিপো থেকে সেক্টর ফাইভে নিত্য যাতায়াত করা আইটি কর্মী সুদীপ্ত বাসে লাফিয়ে উঠে বললেন, এই গরমকে দুয়ারে মরুভূমি ছাড়া আর কিছু বলা যাচ্ছে না। গড়িয়াহাটের মোড়ের কাছে অফিস থাকা এক ট্রাভেল এজেন্ট জানালেন, তিনি কাজের সূত্রে দুনিয়ার অনেক গরমের জায়গায় ঘুরেছেন, কিন্তু বাজি রেখে বলতে পারেন কলকাতার এবারের গরম সেসবকে টেক্কা দিয়ে দেবে। উনি যা বলতে চাইলেন, তার মোদ্দা কথা হল কলকাতার গরম সাহারার শিহরণকেও হার মানাতে পারে। আরও পড়ুন-মোদী-শাহ থেকে রাহুল-অভিষেক, হেভিওয়েটদের বিরুদ্ধে লড়া প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনা কতটা
কলেজ ছাত্রী প্রিয়া আবার হাসতে হাসতে শহরের তাপমাত্রা নিয়ে মজা করে বলল, "এখনই ফিল লাইক তাপমাত্রা ৪৪ দেখাচ্ছে। গোটা মে এখনও বাকি, জুনেও খেলা হবে। লিখে রাখুন, ইস বার ৫০ পাড়।" শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে চাঁদিফাটা রোদে বাইকে দাঁড়িয়ে রুদ্রদেব মল্লিক আবার বললেন, 'সামনে ভোট। এবার বৃষ্টি চিহ্নে যে দাঁড়াবে তার জয় নিশ্চিত। এখন বৃষ্টি ছাড়া জীবনের ইভিএমের বাকি সব প্রতীক স্রেফ নোটা'।
১৯১৩ সালের জুলাইয়ের কোনও এক দিন মার্কিন মুলুকের ক্যালিফোর্নিয়া-নাভেদা বার্ডারে 'ডেথ ভ্যালি'তে তাপমাত্রার পারদ উঠে গিয়েছিল ৫৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। আজ পর্যন্ত এটাই রেকর্ড হওয়া সবচেয়ে উষ্ণতম তাপমাত্রা অঞ্চল বলে ধরা হয়। উষ্ণতম এই অঞ্চলে সিনেমার শ্যুটিংয়ের কাজে, নিছক পর্যটক হিসেবে অনেকেই যান। ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কের এক মহিলা সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে চাঞ্চল্য দাবি করেছিলেন। তিনি 'ডেথ ভ্যালি'-তে দাঁড়িয়ে কিছু সেলফি তোলেন, যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখতে পারেন, দুনিয়ার উষ্ণতম অঞ্চলে উষ্ণ ছবি। কিন্তু সেই ছবি তোলার পর গাড়িতে উঠে তিনি দেখেন, তার গালে ঠিক যেন চুম্বন করার মত একটা স্পষ্ট দাগ ফুটে উঠেছে। ইনস্টাগ্রামে সেই ছবি, 'ডেথভ্যালিস সান কিস' হিসেবে বেশ ভাইরাল হয়েছিল।
একটু বাড়াবাড়ি হলেও বলতে হচ্ছে, কলকাতার তাপমাত্রার পারদ যেভাবে দিন দিন বাড়ছে, তাতে ডেথ ভ্যালি-র মত এই শহরেও সূর্যি মামা গালে যদি চুম্বনের রেখা ফেলে যান অবাক হওয়ার থাকবে না। অন্তত চাঁদিফাটা রোদে যারা এই দুপুরে যারা কাজে যাচ্ছেন, তারা সেই সূর্যিমামার চুম্বন রেখা খুঁজতে ঘরে গিয়ে আয়না দেখতে পারেন। যতই হোক, এই গরমে কলকাতা ডেথ ভ্যালি নয় সেটা বলার লোক মিলবে না।