মানভূমের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম জয়পুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। ঐতিহ্য ও পরম্পরা সঙ্গেএই পুজোয় রয়েছে এক অন্যরকম আভিজাত্য। এই দুর্গাপূজোয় যে দুর্গা মূর্তি পূজিত হয়, তা সম্পূর্ণ সোনা দিয়ে তৈরি। তাই সারা বছরই মা দুর্গা থাকেন ব্যাঙ্কের লকারে। পুজোর মাত্র চারটে দিন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মা দুর্গা পূজিত হন রাজবাড়িতে।শুনতে অবাক লাগলেও যুগ, যুগ ধরে এই রীতি পালিত হয়ে আসছে জয়পুর রাজবাড়িতে।
জানা গিয়েছে , প্রায় ৩৫২ বছর আগে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী থেকে ঔরঙ্গজেবের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে রাজা, জয়সিংহ স্ব-পারিষদ ছোটনাগপুর মালভূমিতে চলে আসেন। তথাকালীন সময়ে ভিল-মুণ্ডাদের রাজত্ব ছিল। মুণ্ডাদের হত্যা করে রাজত্ব স্থাপন করেন রাজা জয়সিংহ। মুণ্ডাদের মন্ত্র দেওয়া তরবারি ও খাড়া ছিনিয়ে নিয়ে তাদের হত্যা করেছিলেন রাজা। তাই সেই তরবারি সামনে রেখে আজও মা দুর্গার আরাধনা করা হয়।
কেন সোনার দুর্গা?
১৮৬৬ সাল পর্যন্ত মাটির মা-দুর্গার আরাধনা করা হত। সেই সময় ঘটে যায় দুর্ঘটনা। ঠাকুরদালানে জ্বলতে থাকা প্রদীপ উল্টে গিয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতেই পুড়ে যায় মা দুর্গার মূর্তি। তারপরই মায়ের স্বপ্নাদেশ মেলে। সেই স্বপ্নাদেশ অনুসারে বেনারসের স্বর্ণকারদের দ্বারা মায়ের সোনার মূর্তি তৈরি করা হয়। বেনারসের কনকদুর্গার আদলে তৈরি হয়েছিল এই মূর্তি। এই মূর্তি তৈরির জন্য রাজকোষ থেকে দেওয়া হয়েছিল ১০৮টি আকবরি স্বর্ণমুদ্রা। এরই সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল বেনারসের মনিমুক্ত , হীরে , জহরত। এই মূর্তির উচ্চতা দু-ফুট। ওজন প্রায় দেড় কেজি। দেড়মন রুপো দিয়ে তৈরি হয়েছে মায়ের চালচিত্র।
১৮৬৭ সালে তৈরি হওয়ার পর থেকে সেই সোনার মূর্তি পূজিত হয়ে আসছে। ১৯৬৯ সালে মায়ের মূর্তি চুরি করতে ডাকাত দল হানা দেয় রাজবাড়িতে।কিন্তু তারা সেই সোনার দুর্গা লুট করতে ব্যর্থ হয়। তারপর থেকেই এই সোনার দুর্গা রাখা হয় ব্যাঙ্কের লকারে। পুলিশি প্রহরায় পূজোর চারটে দিন মা দুর্গাকে আনা হয়। দশমীর দিন ঘট বিসর্জনের পর পুনরায় পুলিশি প্রহরার মধ্যে দিয়ে মা দুর্গার মূর্তি ব্যাঙ্কের লকারে রাখা হয়।
এই ভাবেই প্রথা মেনে জয়পুর রাজবাড়িতে পূজিত হয়ে আসছেন মা দুর্গা। এই সোনার দুর্গামূর্তি দেখতে বহু দুর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমান।