কলকাতা, ২৫ নভেম্বর: ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার পর থেকে বঙ্গ ভোটে ধাক্কা খাওয়ার ট্রেন্ডটা অব্যাহত থাকল বিজেপির। রাজ্যের ৬টি বিধানসভা আসনের উপ নির্বাচনে শুধু হারা নয়, একেবারে বড় ধাক্কা খেল বিজেপি। গত দুটি বিধানসভা আসনে অনায়াসে জেতা আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটও হাতছাড়া হয়ে কপালে ভাঁজ পড়ল বঙ্গ বিজেপি নেতাদের। একটা সময় নীশিথ প্রমাণিকের গড় হিসেবে পরিচিত কোচবিহারের সিতাইয়ের মত আসনেও ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটে হারল বিজেপি। ৬টির মধ্যে দুটি লক্ষাধিক ভোটে হার, একটিতে জামানত জব্দ, একটি আসনে হাতছাড়া হল বিজেুপির।
কোন আসনে কত শতাংশ ভোট পেল বিজেপি
নৈহাটি: ২৩.৫৮ শতাংশ (ছিল ৩৮ শতাংশ)
মাদারিহাট: ৩৪.৮৩ শতাংশ (ছিল ৫৪.৩৫ শতাংশ)
মেদিনীপুর: ৩৭.৬৫ শতাংশ (ছিল ৪০.৫১ শতাংশ)
সিতাই: ১৬.২০ শতাংশ (ছিল ৪৯.৪২ শতাংশ)
তালডাংরা: ৩৪.১৩ শতাংশ (ছিল ৩৯.৯ শতাংশ)
হাড়োয়া: ৬.৬২ শতাংশ (ছিল ১৭ শতাংশ)
*ছিল (২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে)
হাড়োয়ায় মাত্র মাত্র ১৩ হাজারের মত ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়ে জামানত জব্দ হল বিজেপি প্রার্থী বিমল দাসের। দিলীপ ঘোষের মেদিনীপুরেও রীতিমত শোচনীয় ফল হল বিজেপির। সাংসদ জুন মালিয়ার ছেড়ে যাওয়া মেদিনীপুরে তৃণমূলের ভোটের মার্জিন বেড়ে হল ৩২ হাজার। অথচ বছর চারেক আগেও সময় মেদিনীপুর গেরুয়া গড়ের দিকে ঝুঁকেছিল। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড: সুভাষ সরকারের বাঁকুড়ার তালডাংরাতেও একেবারে খারাপ ফল হল বিজেপির। সেখানে তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের মার্জিন দাঁড়াল ৩২ হাজার। আরও পড়ুন- এক নজরে রাজ্যের ৬টি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল
জুলাইয়ে লোকসভা ভোটের পর হওয়া মানিকতলা, বাগদা, রানাঘাটা দক্ষিণ, রায়গঞ্জে বড় হারের পর বিজেপি নেতারা ততটা হতাশ হননি। কিন্তু আরজি কর ইস্যুতে মমতাকে নিয়ে রাজ্যবাসীর ক্ষোভের পরেও তা ভোটবাক্সে একবারেই প্রতিফলিত না হওয়ায় পুরোপুরি হতাশ গেরুয়া শিবির। প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্য বিজেপির সংগঠনে রদবদল হতে পারে। ২০২৪-র লোকসভা ও ১০টি আসনের বিধানসভা উপনির্বাচনের ফল বুঝিয়ে গেল, দু বছর বাদে বাংলায় বিজেপির কাছে কোনও আসনই নিশ্চিত নয়।
আরজি কর আন্দোলনে মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সরকারকে ব্যাকফুটে দেখে বেজায় খুশি দেখিয়েছিল বিজেপি নেতাদের। ডাক্তারদের আন্দোলন থেকে একেবারে সুবিধা করতে পারেনি বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু নাগরিক আন্দোলন আর বিভিন্ন জায়গায় বামেদের প্রতিবাদের সুফলটা তাদের ভোট বাক্সেই পড়বে, তেমনটা আশা করেছিলেন বঙ্গ বিজেপি নেতারা। মাদারিহাটে শেষবেলায় সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছিল পদ্ম শিবির। শুভেন্দু অধিকারী বেশ কয়েকটি বড় জনসভা করে মমতার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। কিন্তু সেসবের কোনও লাভই হল না। কোনও আসনেই বিজেপি প্রার্থীর ভোট ৩৫ শতাংশের বেশী হল না। ভোটপ্রাপ্তিতে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট সবচেয়ে কম হাড়োয়া (৬.৬২%)।
পঞ্চায়েত, পুরসভা ভোটে কার্যত মুছে যাওয়ার পর ২০২৪ লোকসভা নিয়ে বাংলা থেকে বড় আশা ছিল বিজেপির। মিডিয়ার একাংশ, এক্সিট পোলে বলা হয়েছিল বাংলা থেকে বিজেপি ৩০টি লোকসভা আসনও জিততে পারে। কিন্তু মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ম্যাজিকে ম্লান হয়ে দক্ষিণবঙ্গে (পূর্ব মেদিনীপুর বাদে) কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বিজেপি।