প্রক্রিয়াজাত খাবার (Photo Credits: Unsplash)

ক্যান্সারের (Cancer) নাম শুনলে মনে ভয় ধরে না এমন মানুষ কমই আছেন। ক্যান্সার হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জিনগত সমস্যা, ধূমপান, শারীরিক পরিশ্রম, কিছু নির্দিষ্ট সংক্রমণ এবং বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদানঘটিত বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা। এছাড়াও চিকিৎসকেরা (Doctors) বলছেন, ভুল খাদ্যাভ্যাসও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি। ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার রিসার্চ ফান্ডয়ের মতে, আমেরিকাতে ২০ শতাংশ ক্যান্সার রোগীরই রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণ শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, মেদ, অতিরিক্ত মদ্যপান ও অপুষ্টি। তবে ভরসার কথা বিষয়টা আপনার নিয়ন্ত্রণে। তবে এই সবগুলো কারণগুলোর মোকাবেলা করতে হলে আপনার খাদ্যাভ্যাস থেকে বাদ দিতে হবে কিছু খাবার। আজ জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবস (National Cancer Awareness Day)। জেনে নিন কোন খাবারগুলি বাদ দেবেন আপনার খাদ্যতালিকা থেকে।

গবেষণা বলছে, ক্যান্সারের জন্য দায়ী আমাদের রোজকার খাদ্যতালিকায় থাকা আট ধরনের খাবার। আসুন সেইসব খাবারগুলো চিনে নেওয়া যাক-

স্মোকড মিট বা কাঠের ধোঁয়ার প্রস্তুতকৃত মাংস: স্বাস্থ্যের (Health) জন্য মোটেই সুবিধার নয় স্মোকড মিট বা কাঠের ধোঁয়ার প্রস্তুতকৃত মাংস। কারণ এই ধরনের খাবার তৈরির সময় মাংসে (Meat) টার অর্থাৎ ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করে নেয়। আরও পড়ুন: Skin Damage Prevention: সানস্ক্রীন ব্যবহার না করেও বাঁচাতে পারেন আপনার ত্বক, রইল এই ৩ টি টিপস

প্রক্রিয়াজাত মাংস: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াইয়ের গবেষণা অনুযায়ী, প্রক্রিয়াজাত মাংস অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় প্রায় ৬৭ শতাংশ। কারণ এতে থাকে উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ ও খাদ্য সংরক্ষক।

চাষ করা মাছ: বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা মাছ (Fish) অত্যন্ত জনাকীর্ণ পরিবেশে বড় হয়। মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবির আক্রমণ থেকে বাঁচতে ব্যবহার হয় বিভিন্ন জীবাণুরোধকারী ওষুধ, কীটনাষক ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। প্রাকৃতিক মাছের তুলনায় চাষ করা মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও কম থাকে। তাই যতটা সম্ভব নদী বা সমুদ্রের মাছ খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

আচার: এই খাবারে সাধারণত খাদ্য সংরক্ষক উপাদান যেমন নাইট্রেইট থাকে। দীর্ঘদিন এসব খাবার খেলে ওই খাদ্য সংরক্ষক উপাদানগুলো শরীরে জমা হতে থাকে। ফলে একসময় এই বিষাক্ত উপাদানগুলো কোষের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। ক্রমে যা ক্যান্সারের দিকে এগিয়ে যায়।

আলুর চিপস: হাইড্রোজেনেইটেড ভেজিটেবল অয়েলে (Oil) ভেজে তৈরি করা হয় এই চিপস। সঙ্গে থাকে অতিরিক্ত লবণ। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনয়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে প্রতিদিন মাত্র ৩০ গ্রাম চিপস খেলেই বছরে গড়ে প্রায় দুই পাউন্ড ওজন বাড়তে পারে। পাশাপাশি এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ট্রান্স-ফ্যাটও থাকে। যা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। আর লবণে থাকা সোডিয়াম বাড়ায় রক্তচাপ। আলুর চিপসকে মচমচে বানানোর জন্য উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা হয়। এতে অ্যাক্রিলামাইডনামক কারসিনোজেন ধরনের বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়। যা সাধারণত সিগারেটে মেলে। এজন্য দোকান থেকে চিপস কেনার পরিবর্তে ঘরেই চিপস বানিয়ে খাওয়া অভ্যাস করা ভালো।

হাইড্রোজেনেইটেড অয়েল বা ট্রান্স-ফ্যাট: মানুষের (Human Being) তৈরি এই উপাদান রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত করা হয়। যা ক্যান্সার ডেকে আনতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত ও কৃত্রিম চিনি: শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত চিনি (Sugar) ক্যান্সার কোষের প্রিয় খাবারগুলো মধ্যে অন্যতম। মেডিসিন বিভাগে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্ত জার্মান চিকিৎসক ওটো ওয়ারবার্গ ১৯৩১ সালে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন যে, টিউমার ও ক্যান্সার কোষ বেড়ে ওঠে উচ্চমাত্রায় ফ্রুক্টোজ যুক্ত চিনির কারণে। তাই প্রক্রিয়াজাত কিংবা কৃত্রিম চিনির পরিবর্তে মধু, গুড়, ম্যাপল সিরাপ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন: বেশিরভাগ মাইক্রোওয়েভ পপকর্নের (Popcorn) প্যাকেটের গায়ে থাকে পারফ্লুরোঅক্টানোইক অ্যাসিড নামক রাসায়নিক উপাদান। যা স্তন, বৃক্ক, মুত্রথলি, কোলোরেক্টাল, প্রোস্টেট, ফুসফুস, থাইরয়েড, লিউকেমিয়া এবং লিম্ফোমা ক্যান্সারের জন্য দায়ী।

পরিশোধিত সাদা আটা: আটা পরিশোধনের সময় প্রায় সকল পুষ্টিগুণই নষ্ট হয়ে যায়। পরে একে ক্লোরিন গ্যাসের সাহায্যে ব্লিচ করা হয় ক্রেতার চোখে আকর্ষণীয় করার জন্য। এই আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রাও অনেক বেশি। অর্থাৎ শরীরে পুষ্টি (Nutrition) সরবরাহ ছাড়াই ইনসুলিনের মাত্রা হুট করে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই পরিশোধিত সাদা আটার পরিবর্তে গম, কাঠবাদাম বা বার্লির আটা খাওয়া ভালো।

(বিশেষ দ্রষ্টব্য:  এই নিবন্ধে প্রদত্ত সমস্ত তথ্য কেবল তথ্যগত উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। আমরা এর বাস্তবতা, নির্ভুলতা এবং নির্দিষ্ট ফলাফলের গ্যারান্টি দিচ্ছি না। প্রদত্ত তথ্যগুলি কোনও রোগের চিকিৎসার জন্য বা চিকিৎসার পরামর্শ হিসেবে নেওয়া উচিত নয়। আমরা দাবি করি না যে এই নিবন্ধে উল্লিখিত টিপস পুরোপুরি কার্যকর হবে বা হবে না। তাই কোনও পরামর্শ দেওয়ার আগে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।)