বেলাভূমি ছুঁয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা নীল জল মানেই মন্দারমণি
মন্দারমণির সৈকতে(Photo Credit: Wikimedia Commons)

ছুটির জন্য ছোটাছুটি হলে মন ভাল হয়ে যায়। যদি সেই ছোটাছুটিতে দুদিনের সুখকর ভ্রমণ সম্পন্ন হয় তাহলে মন ভাল হয়ে যায় বৈকি। হোক না বেলাভূমি কিম্বা ঐতিহাসিক স্থান। আজকের টইটইয়ের পঞ্চম পর্বে ঘুরে আসুন মন্দারমণি।

মন্দারমণি(Mandarmani)

মন্দারমণি এখন বাঙালির ঘরের কাছের বিচ ডেস্টিনেশন(Beach Destination)। বেলাভূমি ছুঁয়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা কখন যে নীল জলরাশি বালির আস্তরণ ফুঁড়ে পা ভিজিয়ে দেবে সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এই সমুদ্র সৈকতের নাম নিয়েও রয়েছে গল্পকথা।নানা গল্প। কেউ বলেন, জায়গাটা মন্দার গাছে ঘেরা, আর চাঁদের আলোয় বেলাভূমি মণির মতো ঝিকমিক করে, তাই নাম মন্দারমণি। অনেকে আবার বলেন, বিশাল বিচে হাজার হাজার সন্ন্যাসী কাঁকড়ার দলবদ্ধ দৌড় দেখে অনেক কাল আগে এক ডিসট্রিক্ট কালেক্টর মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর চোখে এই দৃশ্যটা মন্দার ফুলের মতো লেগেছিল। তিনিই নাকি জায়গার নাম রাখলেন মন্দারমণি। এখন অনেকেই দীঘ ভুলে মন্দারমণির দিকে ঝুঁকছেন। তাই একদা নিস্তব্ধ সৈকতে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

তবে গল্প যাই থাকুক না কেন সত্যিই জ্যোৎস্নারাতে অপরূপা এই মন্দারমণি। বাসপথে দিঘার ১৬ কিমি আগে চাউলখোলা। সেখান থেকে ১০ কিমি আঁকাবাঁকা পথ গ্রাম্যপ্রকৃতি ছুঁয়ে পৌঁছে দেয় দাদনপাত্রবাড়ে। এ বার বিচ ড্রাইভ। শক্ত সৈকতভূমি দিয়ে ছুটে চলা ৪ কিমি। পৌঁছে যাবে মন্দারমণি সৈকতে। তবে একটু খোঁজখবর করে নিতে সৈকত দিয়ে গাড়ি হাঁকিয়ে যাওয়ার আগে। কারণ জোয়ারের সময় সৈকত ভেসে যায় সমুদ্রের জলে। তাই ওই সময়টুকু বাদ দিয়ে পাড়ি দিতে হয় গাড়ি নিয়ে। চাউলখোলা মোড় থেকে গাড়ি পাওয়া যায় ভাড়ায়। বর্তমান প্রজন্মের হার্টথ্রব মন্দারমণিতে বাড়ছে ভিড়। সমুদ্র সৈকতের গা ঘেঁষে একের পর এক গড়ে উঠেছে বেসরকারি হোটেল। সামুদ্রিক মাছের জিভ জল আনা রেসিপি আপনার মন ভোলায়। বিনোদনের নানা পসরা, খাওয়া-দাওয়ার বিশাল আয়োজন এখানে আপনার অপেক্ষায়।

গৌড় ও পাণ্ডুয়া(Gour-Pandua)

মালদহকে(Malda) কেন্দ্র করে ঘুরে নেওয়া যায় বাংলার অতীত ইতিহাসের সাক্ষী গৌড় ও পাণ্ডুয়া। মালদহের দক্ষিণে গৌড় ও উত্তরে পাণ্ডুয়ার অবস্থান।মালদহ থেকে গৌড় যাওয়ার পথে পিয়াসবারি দিঘি। পিয়াসবারির পশ্চিমে বৈষ্ণবতীর্থ রামকেলি(Ramkeli)। রামকেলি থেকে আধ কিমি দক্ষিণে বারোদুয়ারি বা বড়সোনা মসজিদ(Baro Sona Masjid)। আর রয়েছে ফিরোজ মিনার(Firoz Minar), কদম রসুল মসজিদ(Kadam Rasul Masjid), চিকা মসজিদ(Chika Masjid), লুকোচুরি গেট(Lukochuri Darwaja), বাইশগজি প্রাচীর, ছোটসোনা মসজিদ, তাঁতিপাড়া মসজিদ, লোটন মসজিদ(Lotan Masjid), গুণমন্ত মসজিদ, চামকাটি মসজিদ(Chamkati Masjid) প্রভৃতি।রাজা শশাঙ্ক থেকে দেবপালের আমল পর্যন্ত গৌড়ের স্বর্ণযুগ বলে চিহ্নিত। ভেঙে পড়া প্রাচীন মসজিদ, মিনার, প্রাসাদ আজও অতীতের সমৃদ্ধির কথা বলে।

পাণ্ডুয়ার প্রধান আকর্ষণ সিকন্দর শাহ ও গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের আমলে নির্মিত বিখ্যাত আদিনা মসজিদ(Adina Masjid)। আদিনার ১ কিমি দূরত্বে সুলতান সিকন্দর শাহের গড়ের ধ্বংসাবশেষ সাতাশঘরা। পাণ্ডুয়ার অন্যান্য দ্রষ্টব্যগুলি হল বড়ি দরগাহ, সালামি দরওয়াজা, ছোটি দরগাহ, একলাখি মসজিদ(Eklakhi Mausoleum), কুতবশাহি মসজিদ(Qutb Shahi Masjid.)। মালদহর ৩৫ কিমি দক্ষিণে ফারাক্কা ব্যারেজ(Farrakka Barrage)। নিকটতম স্টেশন মালদা টাউন । বাসও যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের নানা জায়গা থেকে মালদহে। মালদহ থেকে ট্যাক্সি, টাঙ্গা বা বাসে গৌড়-পাণ্ডুয়া ঘুরে নেওয়া যায়। বাসে করে গৌড় যেতে হলে পিয়াসবারিতে নামতে হবে। মালদহে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের মালদা ট্যুরিস্ট লজ। পিয়াসবারিতে জেলা পরিষদের ট্যুরিস্ট লজ আছে। রায়গঞ্জে স্টেশনের (Raiganj Station)কাছে জেলা পরিষদের বাংলো। এ ছাড়া, মালদহ শহরে অনেক বেসরকারি হোটেল আছে।