বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Photo Credits: Getty Images)

১৯৪১ সালের ৭ অগস্ট, বাংলায় ২২ শে শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) চলে গেলেন অমৃতলোকে। হাজার হাজার ভক্তের অশ্রু ঝরেছিল তাঁর প্রয়াণে। ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্তকমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান।’ ভানুসিংহের পদাবলীতে মৃত্যুকে

এভাবেই বন্দনা করে গিয়েছিলেন তিনি। কাব্য সাহিত্যের বিশাল একটি অংশে রবীন্দ্রনাথ যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এ দিন।

মৃত্যুকে তিনি একাধিকবার সামনে থেকে দেখেছেন। চোখের সামনে এক এক করে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন। কবির জীবনেও বাইশে শ্রাবণ একটি মৃত্যুর দিন। কবির সবচেয়ে প্রিয় দৌহিত্র নীতিন্দ্রনাথের আকস্মিক মৃত্যু সংবাদ এসেছিল এই বাইশে শ্রাবণের দিনে। তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্তও প্রিয়জনদের হারানোর বেদনা থেমে থাকেনি। বিয়ের পর চার মাস অতিক্রান্ত হতে না হতেই তাঁর নতুন বৌঠান, জ্যোতিরিন্দ্র নাথের স্ত্রী কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেন। মৃত্যু এসে আর একজনের শিয়রে দাঁড়ায়। মাত্র আটাশ বছর বয়সে কবি পত্নীরও মৃত্যু হয়। তার আগে প্রথম সন্তান বেলার জন্ম হয় ১৮৮৮ সালে। তারপর সেজো মেয়ে রেনু এবং ছোট মেয়ে মীরা। ১৯০১ সালে বড় মেয়ে বেলার বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের অল্প কিছুদিন পরেই বেলার মৃত্যু হয়। আরও পড়ুন, শ্যামল চক্রবর্তীর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির

শান্তিনিকেতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে কলকাতায় আনা হয়। ৩০ জুলাই ১৯৪১, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপাচার হয়। তার কিছু পূর্বে তিনি শেষ কবিতা রচনা করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনাজালে হে ছলনাময়ী।’ চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করে নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত সংকটজনক হতে শুরু করে। জ্ঞান হারান। শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাখীপূর্ণিমার দিন মধ্যাহ্নে- বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণ, ইংরেজি ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট। শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে দুই বাংলার মানুষ-সহ সকল ভক্তেরা।

সেদিনের পর থেকে আজও রবীন্দ্র ভক্তরা বাইশে শ্রাবণে অশ্রুসিক্ত নয়নে প্রিয় কবিকে স্মরণ করেন।