প্রাচীনকাল থেকেই হিন্দু ধর্মে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রকৃতিকে। এই কারণেই পশু-পাখি থেকে শুরু করে গাছ, পাহাড়, নদী সবকিছুই পুজো করা হয়। নদী প্রকৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানব জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সমস্ত নদী। এ কারণে নদীকে মা রূপে পুজো করা হয়। নর্মদা অন্যতম পবিত্র একটি নদী। মধ্যপ্রদেশের অনুপপুর জেলার বিন্ধ্যাচল এবং সাতপুরা পর্বতমালার পূর্ব সংযোগস্থলে অবস্থিত অমরকন্টকের নর্মদা কুন্ড থেকে নর্মদা নদীর উৎপত্তি হয়েছে।

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে মান্যতা আছে, মাঘ শুক্লপক্ষের সপ্তমীতে নর্মদা নদীর আবির্ভাব হয়েছিল, তাই এই তিথিতে নর্মদা নদীর পুজো করলে জীবনে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। ২০২৪ সালে মাঘ শুক্লপক্ষের সপ্তমী পড়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার। এদিন সকাল ১০:১২ মিনিট থেকে শুরু শুভ সময় এবং শেষ হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, সকাল ০৮:৫৪ মিনিটে। উদয় তিথি অনুসারে, নর্মদা জয়ন্তী পালিত হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি। এবার জেনে নেওয়া যাক নর্মদা জয়ন্তীর গুরুত্ব এবং পুজোর পদ্ধতি সম্পর্কে...

ভারতের নর্মদা নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল নর্মদা জয়ন্তী। নর্মদা নদীর জন্মবার্ষিকীর প্রতীক হিসেবে পালিত হয় এই উৎসব, যা হিন্দু ধর্মে গঙ্গা নদীর মতোই একটি পবিত্র নদী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই নদীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক ঐতিহ্য। মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট এবং মহারাষ্ট্রের যে অংশের মধ্য দিয়ে নর্মদা নদী প্রবাহিত হয় সেখানে খুব জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয় নর্মদা জয়ন্তী। হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ভগবান শিবের ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপের ফলে নর্মদা নদীর জন্ম হয়। কথিত আছে যে ভগবান শিব সেই সব দেবতাদের শুদ্ধির জন্য নর্মদা নদীর সৃষ্টি করেছিলেন যারা অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে পাপের অংশীদার হয়েছিলেন।

নর্মদা জয়ন্তীর দিন হাজার হাজার ভক্ত নর্মদা নদীর পবিত্র জলে স্নান ও ধ্যান করে। দেবী নর্মদা নদীকে নারকেল ও মিষ্টি নিবেদন করা হয় এদিন। নর্মদা নদীতে জ্বালানো হয় ধূপ ও প্রদীপ। নারী ভক্তরা নর্মদা দেবীকে খুশি করার জন্য গেয়ে থাকেন লোকগান ও ভজন। নর্মদা জয়ন্তী উপলক্ষে নদীর তীরে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এছাড়া শহরে বের করা হয় শোভাযাত্রা, যা নর্মদা নদীর তীরে গিয়ে শেষ হয়।