দুর্গাপুজো বাঙালিদের একটি পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। সারা ভারতে খুব ধুমধাম করে পালিত হয় এই উৎসব, তবে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুজো গোটা বিশ্বে বিখ্যাত। ২০২৪ সালে দুর্গাপুজো ষষ্ঠীর সঙ্গে শুরু হচ্ছে ৯ অক্টোবর। তবে দুর্গাপুজোর এক সপ্তাহ আগে পালিত হয় মহালয়া। ২০২৪ সালে মহালয়া পড়েছে ২ অক্টোবর, বুধবার। এই মহালয়ার দিনকে কেন্দ্র করে রয়েছে অনেক পৌরাণিক কাহিনী। তবে আজ জেনে নেব মহালয়া সম্পর্কে দুটি পৌরাণিক কাহিনী। প্রথম পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, অসুরদের রাজা ছিলেন মহিষাসুর, তাঁর পিতা হলেন রাক্ষস রাজা রম্ভ। ভগবানের বর হিসেবে দানবরাজ রম্ভ পুত্ররূপে পেয়েছিলেন মহিষাসুর। মহিষ এবং মানুষের মিলনে জন্ম হয় অসুররাজ মহিষাসুরের। তিনি ইচ্ছা অনুযায়ী মহিষ বা মানুষের রূপ ধারণ করতে পারতেন।

মহিষাসুর ব্রহ্মদেবের তপস্যা করে অমরত্বের বর দেওয়ার প্রার্থনা করলে ব্রহ্মাজি বলেন, এই পৃথিবীতে জন্ম হলে মৃত্যু নিশ্চিত। ব্রহ্মাজি অমরত্বের পরিবর্তে অন্য বর চাইতে বললে মহিষাসুর বলেন যে কোনও দেবতা, অসুর ও মানুষ তাকে যেন হত্যা করতে না পারে। তবে তিনি নারীদের উল্লেখ করেন না, কারণ মহিষাসুরের মতে নারী দুর্বল ও শক্তিহীন হয়। বর পাওয়ার পর প্রথমে স্বর্গে আক্রমণ করে দেবরাজ ইন্দ্র সঙ্গে এক ভয়ানক যুদ্ধ করে অসুররাজ মহিষাসুর। এই যুদ্ধে ভগবান ইন্দ্রকে পরাজিত করে স্বর্গ দখল করেন মহিষাসুর। এরপর গোটা বিশ্বে অত্যাচার শুরু করেন তিনি। মহিষাসুরের এই ধ্বংসলীলা দেখে মা দুর্গার কাছে মহিষাসুরের বিনাশের প্রার্থনা করেন সকল দেবতা। এরপর যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত করেন মা দুর্গা। সেই থেকে মা দুর্গা পরিচিত হন মহিষাসুর-মর্দিনী নামে।

এছাড়াও আরও একটি কাহিনী রয়েছে, যা রাম ও রাবণের যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত। রাবণের সঙ্গে যুদ্ধের পরিকল্পনা করার সময় রাম অনুভব করেছিলেন যে মা দুর্গার আশীর্বাদ ছাড়া রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় পাওয়া সম্ভব নয়। তাই মা দুর্গার পুজো করা শুরু করেন তিনি। মা দুর্গার পুজোর জন্য প্রয়োজন‌ অনুযায়ী ১০৮টি পদ্ম ফুল সংগ্রহ করে পুজো শুরু করেন রাম। তবে রামের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ১টি পদ্মফুল লুকিয়ে রাখেন দেবী দুর্গা। রাম ১০৮তম পদ্মফুল নিবেদন করার সময় খুঁজে পান না। এদিকে পুজোর নিয়ম অনুযায়ী পুজোয় বসার পর পুজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই স্থান থেকে ওঠাও যাবে না। এমন সময় রামের মনে পড়ে মা তাঁর চোখকে পদ্ম চোখ বলতেন। তখন রাম ঠিক করেন ১০৮তম পদ্মের পরিবর্তে তিনি তাঁর চোখ অর্পণ করবেন দেবী দুর্গাকে। চোখ অর্পণের জন্য চোখে তীর ঢোকাতে যাবেন এমন সময় দেবী দুর্গা পূর্ণ রূপে অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ের আশীর্বাদ দেন রামকে। এই দুটি পৌরাণিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে হয় মহালয়া।