কী হতে চলেছে লোকসভা নির্বাচন ২০১৯-এর ফল! চলছে জোর জল্পনা। ((Photo Credits: PTI))

কলকাতা, ১৫মে: সাত দফার লোকসভা নির্বাচন ২০১৯ (Lok Sabha Elections 2019) -এর ৬টা দফায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হল। বাকি আর এক দফা। দেশের মোট ৫৯টি লোকসভা আসনে ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ হল। মানে ৬ দফা মিলিয়ে দেশের মোট ৪৮৩টি আসনে ভোট হয়ে গেল। ভোটগ্রহণ বাকি থাকল আর মাত্র ৫৯টি আসনে। সবার এখন একটাই প্রশ্ন দিল্লির সিংহাসনে আবার নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi), না রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi),নাকি তৃতীয় শক্তি (GRAND ALLIANCE)-র নতুন কেউ। বেটিং বাজারে কিছুটা ফেভারিট বিজেপি। যদিও বিজেপি একক ক্ষমতায় সরকার গড়তে পারবে না বলেই সাট্টা বাজারের দর। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, এবং গুজরাট-এর বুকি বাজারে বলা হচ্ছে বিজেপি ২২০টি-র বেশি আসন জিততে পারে। যেটা একটা সময় বলা হচ্ছিল বিজেপি ২৪৫-২৫০ আসন জিততে পারে। অন্যদিকে, সপ্তম দফার আগে পর্যন্ত সাট্টা বাজার অনুযায়ী কংগ্রেস জিততে পারে ১০০টি-র কাছাকাছি আসনে জিততে পারে।

দিন দশেক আগেও মধ্যপ্রদেশ নেমুচ সাট্টা বাজারের মত ছিল বিজেপি ২৪৭-২৫০টি আসন জিততে পারে। সেখানে কংগ্রেস পেতে পারে ৭৭-৭৯টি আসন। রাজস্থানের বিখ্যাত ফালুড়ি সাট্টা বাজার অনুযায়ী, বিজেপি একাই পেতে পারে ২৪০-২৪৫টি আসন। আর এনডিএ পেতে পারে ৩২০-৩২৫টি আসন। যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে লাগে ২৭২জন সাংসদের সমর্থন । এমনও বলা হচ্ছে ক মাস আগে রাজস্থান বিধানসভার ভাল ফলটা কংগ্রেস এবারের লোকসভায় করে দেখাতে পারবে না।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের ভোটের ফলের আগাম আঁচ দেওয়া খুব কঠিন। কারণ কোনওরকম হাওয়া এবার ভোটে কাজ করেনি। ভোটদানের হার দেখেও বোঝা যাচ্ছে না জনমত কী হতে চলেছে। তবে বিভিন্ন জনসমীক্ষার ফলাফলে যা আভাস তাতে মোদীর পক্ষে ফের সিংহাসনে ফেরার কাজটা বেশ কঠিন হতে চলেছে। পালে হাওয়া কারও পক্ষে না থাকলেও মমতা ব্যানার্জি (Mamata Banerjee)-অখিলেশ যাদব (Akhilesh Yadav)-মায়াবতী (Mayawati), কেসিআর(KCR),আরজেডি (RJD)-দের নিয়ে গড়া তৃতীয় শক্তির জোট নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

কে বসবেন দিল্লির মসনদে! চলছে জোর জল্পনা। (Photo Credits: File Image)

যদিও তৃতীয় শক্তি ভোটের ফলের পর কতটা একজোট থাকবে তা নিয়েও সন্দেহ আছে। Newsclick-নামের এক ওয়েবসাইটের সমীক্ষায় প্রকাশ পঞ্চম দফার ভোটের পর দেখা যাচ্ছে গতবারের থেকে এনডিএ (NDA) -র আসন সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হতে চলেছে। পঞ্চম দফা পর্যন্ত দেশে মোট ৪২৪টি লোকসভা আসনে ভোট হয়েছে। গতবার এই ৪২৪টি আসনের মধ্যে এনডিএ জিতেছিল ২৫১টি আসনে। কিন্তু এবার বিপর্যয় এতটা বেড়েছে যে এনডিএ-র আসন ২৫১ থেকে ১২৪-এ নেমে যেতে পারে। সেখানে ইউপিএ (UPA)-র আসন মাত্র ৫৫ থেকে ১৬৯-হয়ে যেতে পারে। এই সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেতে চলেছে উত্তরপ্রদেশে। অখিলেশ-মায়াবতীর মহাগটবন্ধন জোটের কাছে মোদী-শাহের রথ থেমে যেতে চলেছে বলে সেই সমীক্ষার মত। ষষ্ঠ দফার ভোটের পর সমীক্ষা অনুযায়ী বিজেপি কিছুটা জমি উদ্ধার করলেও, তাদের বিপর্যয় রুখতে পারছে না।

যদিও বিজেপি নেতারা বলছেন, এসব সমীক্ষা ভিত্তিহীন। মোদী-ই ফের সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সিংহাসনে বসছেন। বিজেপি নেতারা এই কথাটা অবশ্য খুব জোর দিয়ে বলতে পারছেন না। পঞ্চম দফার ভোটের পর বিজেপি-র অন্যতম শীর্ষ রাম মাধব তো প্রকাশ্যে বলেই ফেলেছিলেন এককভাবে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার সম্ভবনা নেই। শরিকদের সমর্থন নিয়ে এনডিএ সরকারের প্রধান মোদীজি ক্ষমতায় ফিরবেন বলে এই বিজেপি নেতা দাবি করেন। এনডিএ-র শরিক দল শিবসেনার গলাতেও একসুর। ভোট শুরুর আগে বিভিন্ন চ্যানেলের সমীক্ষায় যেখানে বলা হচ্ছিল, বিজেপি একাই ৩০০টা আসনে জিততে চলেছে। কিন্তু এক একটা দফা পার হওয়ার পর বিজেপি নেতারাও ক্রমশ বুঝছেন, লড়াই কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। বিজেপি-র আক্রমণাত্মক মরিয়া প্রচার, অক্ষয় কুমারকে দিয়ে পিএম মোদীর অরাজনৈতিক ইন্টারভিউ করিয়ে, সাক্ষ্মী প্রজ্ঞাকে ভোটের ময়দানে নামিয়ে, রাজীব গান্ধীর দুর্নীতি প্রসঙ্গ টেনেও ফায়দা বিশেষ হয়নি।

শুধু নিউজ ক্লিক নয়, Pollsters(সব সমীক্ষাকে এক জায়গায় করার পর হিসেব করা হয়)-এর সমীক্ষাতেও দেখা যাচ্ছে বিজেপি-র বিপর্যয় হতে চলেছে। বিজেপি ১৮৫-২২০টি, আর কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ ১৬০-১৮০টি আসনে জিততে পারে বলে সেই সমীক্ষায় বলা হয়েছে। সাট্টা বাজারেও বিজেপির পালে হাওয়া নেই। কিন্তু সব জায়গাতেই মমতা-অখিলেশদের মহাজোটের পালা হাওয়া আছে। তবে এটাও ঠিক এইসব সমীক্ষার ফলাফল যদি মিলে যায় তাহলেও স্বস্তিতে থাকবেন না মমতা-অখিলেশরা। কারণ এনডিএ বা ইউপিএ এমন একটা জায়গায় থাকবে যেখানে তৃতীয় ফ্রন্টের কয়েকটা দলের সমর্থন পেলেই সরকার গড়া যাবে। তাই তৃতীয় শক্তিতে সামান্য ফাটালও মমতা-অখিলেশ-মায়াবতীদের যাবতীয় হিসেব বানচাল করে দিতে পারে। যাই হোক। এসব শুধুই সমীক্ষা। ভারতবর্ষের নির্বাচন এতটাই ব্যাপক আকারের যে, বেশিরভাগ সময়ই সমীক্ষা মেলে না। মার্কশিটের জন্য এখন ২৩ মে-র দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই। তার আগে যা হবে, সবটাই জল্পনা।