৭ মে, ২০১৯: শাসক দল থেকে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের মধ্যেই তারকাদের প্রার্থী (Celibrity candidate) করার হিড়িক গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকগুণ বেড়েছে। যাকে একেবারে ভোটের চমক বলাই ভাল। মিমি (Mimi), নুসরত (Nusrat), দেব (Dev) , মুনমুন, শতাব্দী, বাবুল, লকেট একের পর এক তারকা প্রার্থীর ভিঁড়ে সরগরম ভোটের বাজার। বাংলায় এই প্রবণতা গত কয়েকটি নির্বাচনেই দেখা যাচ্ছে। এর আগে কিন্তু এই ধরনের প্রবণতা কখনোই ছিল না। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ভীষণভাবে রাজনৈতিক কৌলিন্য বজায় রাখা হত। বলা যেতে পারে বাম শাসনের কড়াকড়ির কারণেই কখনও কোনও তারকাকে প্রার্থী করা হত না। কিন্তু বাম শাসনের অবসানের পর থেকে সরাসরি রাজনীতিতে তারকাদের যোগদান একটু বেশিই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই প্রবণতাকে দক্ষিণী কালচারের প্রভাব বলা যেতেই পারে। কারণ দক্ষিণ ভারতে প্রথম থেকে সিনেমা জগতের অভিনেতাদের সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান একটু বেশিই। এনটিআর থেকে জয়ললিতা বা হাল আমলের কমল হাসান। এরা সকলেই সিনেমা জগনের নামী তারকা।
কিন্তু বাংলার এই কালচার এসেছে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির (Mamata Banerjee)হাত ধরেই। তৃণমূল নেত্রী বরাবরই টালিগঞ্জের অভিনেতা–অভিনেত্রীদের সঙ্গে একটু বেশিই জনসংযোগ বজায় রেখেছেন। এই জনসংযোগের মূল কারণ জনপ্রিয়তা। তারকাদের জনপ্রিয়তার হাত ধরে অনায়াসেই মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়। এর জন্য রাজনৈতিক কারণ দরকার হয় না। মিমি,নুসরত, দেব এঁরা গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে অনেকটা আকাশের চাঁদের মত। সেই চাঁদ যখন তাঁদের ঘরে এসে ভোট চায় তখন সেই ভোটটা অনেক বেশি সুনিশ্চিত হয় অনেক সহজে। সেকারণেই বসিরহাটে বিজেপিকে ভোট টানতে নুসরতকে প্রার্থী করা। যে সমীকরণে নুসরতকে প্রার্থী করা হয়েছে তাতে অনেকটাই সফল মমতা। ভোটের আগেই যুদ্ধ জয়ের মত হয়েছে এই সিদ্ধান্তটি। নুসরতের প্রতিটি প্রচারসভা বলে দিচ্চে কি বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে তাঁর। আর সেই অভিনেত্রী জখন এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভোট চাইতে যাচ্ছেন তখন তাঁকে ফেরানোর মতো দুঃসাহস কেউই দেখাবেননা।
মিমির ক্ষেত্রেও ঘটনাটা তাই। যাদবপুরের মতো হাই প্রোফাইল কেন্দ্র যেখানে একসময় তৃণমূল নেত্রী নিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সেখানে মিমিকে প্রার্থী করার মূল কারণই হল সেই গিমিক। যাতে ভর করে অনায়াসে ভোট বৈতরণী পার করা যায়। মিমির প্রতিটি প্রচারসভা সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছে ভাল করে। বিরোধীরা যতই কটাক্ষ করুণ। মিমির পর্দার জনপ্রিয়তা সেই অনভিজ্ঞতার খুঁত ঢেকে দিচ্ছে অনায়াতে।
আর দেব, সে তো সুপার স্টার। এবার দ্বিতীয়বার ঘাটাল থেকে প্রার্থী হয়েছে দেব। রাজনৈতিক দিক থেকেও অনেকটাই পরিপক্ক। সেকারণেই দেবের প্রচারের ভাষাও অনেকটা পরিণত হয়েছে। ঘাটালে দেবকে হারানোর মতো কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধীরা দিতে পারেনি।
আর আসানসোলে বিজেপির বাবুলের প্রতিপক্ষ মুনমুন। জনপ্রিয়তার নিরিখে আসানসোলে বাবুল অনেকটা এগিয়ে থাকলেও মুনমুন সেনও যে পিছিয়ে নেই সেটা ভালমত জানে শাসক দল। মহানায়িকার মেয়ে হিসেবে মুনমুন সেনের জনপ্রিয়তা এখনও অমলিন। প্রচারে যখন দুই মেয়ে রিয়া এবং রাইমাকে নিয়ে মুনমুন সেন বেরোবেন তখন সে ভিড় যে বাবুলের প্রচারকে অনেকটাই ছাপিয়ে যাবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।