অর্জুন সিংয়ের বিজেপি-তে যোগদানের সেই ফাইল ছবি। (Photo Credits: ANI)

কলকাতা, ১৬ জুলাই: এক হাতে দলের পতাকা, গলায় দলের প্রতীক। দিল্লিতে দলের সদর দফতরে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান। এমনটাই বেশ কয়েক মাস ধরে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন সবাই। অর্জুন সিং (Arjun Singh) থেকে সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan) , সুনীল সিং (Sunil Singh) থেকে বিপ্লব মিত্র (Biplob Mitra)। তৃণমূল ছেড়ে একের পর এক ছোট-বড় মাপের নেতা বিজেপি-তে যোগদান করেছেন। লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপি-র চমকপ্রদ ফলের পর থেকে তো ফুল বদলের হিড়িক পড়ে গিয়েছে।

রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের ১৮টি জেতে বিজেপি। ভোটপ্রাপ্তির শতাংশের বিচারে চমকে দেয় নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের দল।রাজ্যের ১২৯টি বিধানসভা আসনে লিড নিয়ে বিজেপি এখন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে। আরও পড়ুন-মুকুল রায়কে মোক্ষম জবাব, কাঁচরাপাড়া পুরসভা দখল নিল তৃণমূল

এমন সময়ে প্রায় রোজই তৃণমূল থেকে রোজই বিজেপি-তে আসছেন কোনও না কোনও নেতা। আর তাদের ঘটা করে দিল্লিতে পার্টির সদর দফতরে গিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে পতাকা। বিধায়ক, কাউন্সিলর থেকে পঞ্চায়েত প্রধান, দলে দলে যোগদান করতে থাকেন বিজেপিতে।

কিন্তু দলবদলের প্রক্রিয়া কেমন একটা তৃণমূল কালচার চলে এসেছে, বলে রাজ্য বিজেপিতে চালু হচ্ছে নয়া নিয়ম। যেখানে বিজেপি-র পুরনো নেতাদের একাংশের দাবি, মুকুল রায়ের দলভাঙানোর খেলায় দলে অরাজকতা তৈরি হচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্ব এমনকী রাজ্য সভাপতির অজ্ঞাতে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে একাধিক বিধায়ক, কাউন্সিলরকে দলবদল করিয়েছেন মুকুল। কৈলাশ বিজয়বর্গীয় - মুকুল রায় জুটির এই কর্মকাণ্ডে সংগঠনে ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন পুরনোপন্থীরা। তাই এবার জারি হল কড়া নির্দেশ।

সংবাদমাধ্যমে বড় বড় করে কভার হচ্ছে সে সব। কিন্তু কিছু নেতা দিল্লিতে এসে ফুল বদলের পর, আার এরপর আর ভাল না লাগায় দিদির দলে ফিরে যাচ্ছেন। এতে বিজেপির ইমেজের ক্ষতি হচ্ছে দেশজুড়ে ৩০৩টি আসনে জিতে বিরোধীদের ধরাশায়ী করার পর এভাবে ইমেজে ক্ষতি হোক তা চাইছে না বিজেপি। আর তাই রাজ্য বিজেপিতে আসার প্রক্রিয়ায় নয়া নির্দেশিকা চালু হচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া দিল্লিতে গিয়ে যোগদান আর চলবে না। একমাত্র বড় মাপের নেতা ছাড়া আর দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে যোগদানেক আনুষ্ঠানিকতা করা যাবে না।

বেশ কিছু দিন ধরে বিজেপি-তে যোগদানের পর ফের কিছু নেতার তৃণমূলে ফিরে যাওয়ার ঘটনায় মারাত্মক অস্বস্তিতে বিজেপি। হালিশহর, কাঁচপাড়া, বালুরঘাট সহ নানা জায়গায় ঘটছে এই ঘটনা। দলে দলে যেমন যোগদানের পর ফের তৃণমূলে ফিরেও গিয়েছে দলে দলে। ভবিষ্যতে এই ধরণের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে এবার কড়া হল রাজ্য নেতৃত্ব। বন্ধ হল দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগদান। সোমবার দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) সুব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া দিল্লিতে গিয়ে যোগদান আর চলবে না।

রাজ্য বিজেপিতে দলে নেওয়ার অলিখিত নিয়ম চালু হতে চলেছে। যেখানে কোনও নেতাকে দলে নেওয়ার আগে অনেক কিছু খতিয়ে দেখতে হবে। তার মধ্যে যেমন আছে সেই নেতার ইমেজ-ইতিহাস, তার সঙ্গে সবার আগে দেখতে হবে তার দলে আসার ইচ্ছার বিষয়টি। দলবদলের কারণটা যদি শুধু ক্ষমতা পাওয়া হয়ে থাকে তাহলে তাঁকে দলে নেওয়ার দরকার নেই বলে জানানো হয়েছে। বিজেপি-র সাফ হিসেব এখন নেতার থেকেও বেশি দরকার কর্মী। পাশাপাশি দিলীপ ঘোষেদের সাফ হিসেব, যেসব নেতারা তৃণমূল ছেড়ে এসেছেন, আর লোকসভায় যা ফল হয়েছে, তা ধরে রাখা গেলেই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করাটা সময়ের অপেক্ষা।