বঙ্গ রাজনীতিতে নয়া মোড়- বিজেপি-কে ঠেকাতে এবার কি মমতা-সিপিএম জোট! থাকল সম্ভাবনার হিসেব-নিকেশ
তৃণমূল-সিপিএম কি এবার জোট হবে! (File Photo)

কলকাতা, ২৪ মে:  রাজ্যে গেরুয়া ঝড়ের পর এবার বঙ্গে দেখা যেতে পারে চমকপ্রদ জোট। উত্তরবঙ্গ (North Bengal) থেকে জঙ্গলমহল (Jangal Mahal), নদিয়া (Nadia) থেকে বনগাঁ (Bangaon)- রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বিজেপি (BJP)-র দাপটে কোণঠাসা তৃণমূল (TMC) আর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া বামেরা কি এক জায়গায় আসতে চলেছে? এই প্রশ্নটাই এখন রাজ্য রাজনীতির গলিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। সঙ্কটে পড়লে মানুষ চিরশত্রুকেও বন্ধু বানায়। ভারতীয় রাজনীতিতে কথাটা আরও সত্যি। এবার যেমন বিজেপি-কে ঠেকাতে উত্তরপ্রদেশে যুযুধান দু পক্ষ সমাজবাদী পার্টি (এসপি) -বিএসপি হাত মিলিয়েছিল। অতীতে যেমন, বিহারের যুযুধান দুই পক্ষ লালু-নীতীশ হাতে মিলিয়েছিলেন। সেই মডেলে কি এবার তৃণমূল-সিপিএম হাত মেলাবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

বামেদের ভোট কমতে কমতে একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১টিতেই জামানত জব্দ হয়েছে বাম প্রার্থীদেকর। সংখ্যার বিচারে রাজ্য রাজনীতিতে একেবারে অপ্রাসঙ্গিক বামেরা। কিন্তু এরপরেও বামেদের দরকার মমতার। কারণ বাম ভোট ব্যাঙ্ক আবার লাল দিকে ফিরলে, বিজেপি (BJP)-র উত্থান রোখা যাবে। তা ছাড়া বামে-দের পাশে পেলে রাজ্যজুড়ে বিজেপি বিরোধী হাওয়া তৈরি করা যাবে।  পাশাপাশি বাম সংগঠনও এখন মমতাকে সাহায্য করতে পারে। একটা জিনিস পরিষ্কার, বামেরা প্রাসঙ্গিক না হলে, বিজেপির উত্থান কোনও মতেই ঠেকানো যাবে না। এখন মমতার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হারানো জমি ফেরানো। বিজেপি-র থেকে হারানো জমি ফেরানো অত সহজ কাজ নয়। যেখানে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি এখন একেবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সিপিএমকে

লোকসভা নির্বাচনের পর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে 'অপশন' কম। তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে  সিঙ্গুর থেকে ঝাড়গ্রাম, এমনকি আরামবাগ-বর্ধমান বিজেপি এমন কিছু জায়গায় ভাল করেছে, যেখানে তৃণমূলের সংগঠন বেশ মজবুত। সংগঠনে রদবদল করলেই হারানো জমি ফেরত পাওয়া যাবে তেমন নিশ্চিয়তা নেই। এমন সময় কংগ্রেস, সিপিএম, এমনকি SUCI-কেও প্রয়োজন দিদির। সিপিএমের এখন যা অবস্থা তাতে দিদিকে ফেরানোর ক্ষমতাও তাদের থাকবে কি! উত্তরটা সময় দেবে! আলিমুদ্দিনের বাইরে থেকে যদি মমতা চেঁচিয়ে বলেন, সিপিএম ঘরে আছো! তাহলে বিমান বসু-রা কি করেন সেটাই দেখার।

মমতা-সিপিএম জোটের পক্ষে কী কী যুক্তি

১) বিজেপিকে ঠেকাতে হলে দুজনের হাত না ধরা ছাড়া উপায় নেই। সঙ্গে অবশ্য কংগ্রেসকেও চাই।

২) সর্বভারতীয় স্তরে এরপর থেকে সব মোদী বিরোধীকে এবার এক হতেই হবে। বিজেপি-র এই ঐতিহাসিক জয়ের পর আর কোনও অপশনই নেই বিরোধীদের।

৩) সিপিএম ঘর গোছাতে পারলে, মমতা-সিপিএম জোট বিজেপি-র পক্ষে রাজ্যে খারাপ খবর আনবে।

মমতা- সিপিএম জুটির বিপক্ষে যুক্তি

১) সিপিএমের একটা অংশ কিছুতেই মমতার সঙ্গে জোট মেনে নেবেন না। মমতার ডাকে সাড়া দিলেই দলে ভাঙন স্পষ্ট হবে।

২) মমতার সঙ্গে এখন জোটে যাওয়া মানে আদপে দুর্নীতির সঙ্গে থাকা, আর এতে দলের সংগঠন আরও খারাপ হবে। এই আশঙ্কা থাকবে সিপিএমের।

৩) তৃণমূল, সিপিএম জোট হয়ে লড়লে আসলে সেটা বিজেপি-র লাভ হয়ে যাবে। কারণ তাহলে বিরোধী ভোটের সবটাই বিজেপি পাবে।