Kolkata Puja and Rains. (Photo Credits:X)

Kolkata Rains and Durga Puja: অনেকেই বলছেন, এত বৃষ্টি তারা আগে দেখেননি। কেউ কেউ বলছেন, পুজোর একেবারে মুখে এমন বৃষ্টি হয়েছে বলে তো মনে পড়ে না। হিসাব বলছে, এত বৃষ্টি শহর কলকাতায় স্মরণাতীত কালের মধ্য়ে হয়নি। কলকাতার বড় অংশ এখনও জলের তলায়। রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়েছে, মণ্ডপের ভিতর জল, চারপাশ কাদায় ভরা। এতটা বৃষ্টি শহরে কবে হয়েছিল, কেউ ঠিক জানে না। বেহালা থেকে দমদম, বালিগঞ্জ থেকে কলেজ স্ট্রিট, প্রায় সব জায়গায় জল জমে আছে। পুজোর মুখে শহর যেন এক লহমায় উতসব থেকে বিপর্যয়ে রূপ নিল।পুজোর প্য়ান্ডেলে ঢাকে কাঠি পড়ে যাওয়ার মুখে, এমন দুর্যোগ শহর কলকাতা শেষ কবে দেখেছে তা বলতে পারছেন না কেউ। আজ, মঙ্গলবার দুর্গাপুজোর দ্বিতীয়। এমনিতে বোধন ষষ্ঠীতে হলেও, গত কয়েক বছর ধরে মহালয়া থেকেই ঠাকুর দেখা শুরু করেন।

কাল সন্ধ্য়াতেও শহরে পুজোর আমেজ স্পষ্ট ছিল, রাতের বৃষ্টিতে সব তছনছ

গতবার, দ্বিতীয়াতেও শ্রীভূমি, সুরুচি সংঘ সহ বেশ কয়েকটি পুজোয় তৃতীয়াতেও লম্বা লাইন পড়েছিল। এবার রবিবার মহালয়াতেও অনেকে শহরের রাস্তায় বের হন উদ্বোধন হওয়া ঠাকুর দেখতে। গতকাল, সন্ধ্য়া থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়লেও পুজোর আমেজটা ছিল। শহরের প্রায় সব জায়গাতেই পুজোর লাইটিং শুরু হয়ে গিয়েছে, বেশ কয়েকটি জায়গায় বাজছে ঢাক, মাইকও চলছিল। সব মিলিয়ে গতকাল সন্ধ্য়াতেও পুজোর রঙে রঙীন ছিল শহর কলকাতা। কিন্তু এরপর রাতে ৬ ঘণ্টার রেকর্ড বৃষ্টিতে তছনছ হয়ে গেল সব কিছু। এক লহমায় উতসবের শহর বদল গেল বিপর্যয়ে। ঘুম থেকে উঠেই আঁতকে উঠল শহরবাসী। আসতে শুরু করল জল জমার খবর, মৃত্যুর খবর। বেশ কয়েকটি জায়গায় পুজো প্যান্ডেলে হাঁটু সমান জল। কোথাও আবার প্যান্ডেলের কাপড়ও উড়ে গিয়েছে। আরও পড়ুন- পুজো শুরুর ২ দিন আগে থেকেই ছুটি ঘোষণা, রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ বন্ধ থাকবে ২৪ সেপ্টেম্বর থেকেই, নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর  

দেখুন ছবিতে

শহরের পুজো আয়োজকদের এখন কী কী সমস্যা

কলকাতার ছোট, মাঝারি, বড়-সব পুজো উদ্য়োক্তাদেরই এখন মাথায় হাত। পুজো উদ্য়োক্তাদের সমস্যাগুলি এখন মোটামুটি পাঁচটি- ১) এত জলের মাঝে কুমারটুলি বা অন্য়ান্য জায়গায় স্টুডিও থেকে প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে আসা। রাস্তায় চারিদিকে জল। রাস্তাও বেশ কিছু জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। এমন অবস্থায় প্রতিমা মণ্ডপে নিয়ে আসার কাজটা মোটেও সহজ নয়, ২) দ্বিতীয় সমস্যাটা হল, মণ্ডপের ভিতর ও সংলগ্ন অঞ্চলে জল, আর কাদা। প্রতিমা পৌঁছে গেলেও চূড়ান্ত ঝক্কি শুরু হয়। মণ্ডপের ভিতরে জল জমে আছে, কাদা রয়েছে। পুজোর সাজ-সজ্জা, মণ্ডপের আসবাবপত্র, মাটির মণ্ডপ সবকিছুই প্রভাবিত হচ্ছে। প্রতিটি দিক-দিকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করতে গিয়ে সময় ও শ্রম দ্বিগুণ হচ্ছে। ৩) পুজোর খুঁটিনাটির আয়োজন, ৪) বাজেট বাড়বে, ৫) এত কিছুর পরেও আদৌ মানুষ আসবে কি না। আরও পড়ুন-ফের দুর্যোগ! জারি হলুদ সতর্কতা, বজ্রবিদ্যুৎসহ ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের

দেখুন কী বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়

আজ, মঙ্গলবার অনেক পুজোর উদ্বোধন হওয়ার কথা

কলকাতার বেশিরভাগই মণ্ডপেরই আজ, মঙ্গলবার ও বুধবার উদ্বোধন হওয়ার কথা। আজ, মঙ্গলবার যেমন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের ত্রিধারা সম্মিলনীতে উদ্বোধন করার কথা। কিন্তু দেশপ্রিয় পার্ক থেকে ত্রিধারার মুখের রাস্তায় এখন বেশ জল জমে। শহরের বেশিরভাগ মানুষের জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। এমন অবস্থায় কীভাবে পুজোর আয়োজন করা যায় তা পুজোর উদ্য়োক্তা থেকে প্রশাসনের চিন্তা। তবে দুপুর থেকে কিছু জায়গায় রোদ উঠতে শুরু করেছে। কলকাতা পুরসভার কর্মীরা দ্বিগুণ উদ্যোমে ঝাঁপিয়েছেন। জল নিকাষ করতে প্রাণপাত করছেন বিভিন্ন ক্লাবের ছেলেরাও। পুর কর্তাদের হিসাব বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি না হলে (আবহাওয়া দফতরের বৃষ্টির পূর্বাভাস) আবার সব কিছু স্বাভাবিক হতে পারে। শহরের বেশ কিছু জায়গায় পাম্প চলছে। বেশিরভাগ জায়গায় কাউন্সিলরার মাঠে নেমে কাজ করছেন। পুজো উদ্য়োক্তারাও ব্যক্তিগত চেষ্টায় জল নিকাষের চেষ্টা করছেন।

ফাইট কলকাতা ফাইট

সব মিলিয়ে দুর্গাপুজোর মুখে এখন বড় পরীক্ষা কলকাতাবাসীর। প্রাণের শহর কলকাতার এখন জীবনে ফেরার লড়াই। সবার নজর এখন আকাশে। বৃষ্টি যেন আর না আসে, পুজো তো বছরে এই একবারই আসে।