কলকাতা, ২৭ সেপ্টেম্বর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে (Ishwar Chandra Vidyasagar) নিয়ে ছেলেখেলা শুরু করেছেন বাংলার রাজনীতিকরা। কিছুদিন আগেই দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন বিদ্যাসাগরের সহজপাঠ পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তো দিন দুয়েক আগে মাইল স্টোনের সঙ্গে বিদ্যাসাগরকে প্রায় লটকেই দিয়েছিলেন। তাঁর থেকে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে সতীদাহ প্রথা রদের দায়িত্বভার রামমোহনের (Rammohan Roy) কাঁধ থেকে বিদ্যাসাগরের কাঁধে ফেলে দিলেন বিজেপির মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। এমনিতেই কলকাতার রাজনৈতিক পরিবেশে একেবারে ট্রেন্ডিং টপিক বাবুল সুপ্রিয় Babul Supriyo), তায় তিনি কি না দিলীপ ঘোষের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইতিহাসকে বদলে দিতে শুরু করেছেন। হাসির রোল উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক। মজার বিষয় হল শিল্পী কম বাউন্সার বেশি বাবুল সুপ্রিয় তো এই খিল্লিকে সহজে হজম করবেন না।
তাই সাত তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ভুল স্বীকার করেও বিরোধীদের পাল্টা খোঁচা মারতে ছাড়লেন না কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। জনান্তিকে শোনা যাচ্ছে, বাবুলবাবুর মন্ত্রীত্বের অহঙ্কার নাকি চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে। সে যাদবপুর কাণ্ডে উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের উপরেই হোক বা বাচিক শিল্পী ঊর্মিমালা বসু। কেউই সেই সুধারস থেকে ব্রাত্য নন। সেখানে বিদ্যাসাগরই বা কেন তা পাবেন না, যতই তিনি দয়ার সাগর হোন না কেন। আফটার হল আচ্ছে দিন চলছে। ফেসবুকে বাবুল লিখেছেন, তাঁকে নাকি এসএমএস-এর মাধ্যমে ক্ষমা করে দিয়েছেন রাজা রামমোহন রায়। ভুল স্বীকার করতে গিয়ে গোটা বাঙালি জাতির দিকেই ব্যাঙ্গাত্বক রসবোধ ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। এরপরেই নিন্দুকরা বলতে শুরু করেছে ভুলটা তো আজকাল আর ভুল নয় রীতিমতো পালিসিটিস্ট্যান্ট। একবার ভুল করো, তারপর ঘটা করে ক্ষমা চাও, ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে সামান্য কটাক্ষের সুর মিশে থাকলে জলঘোলা একটু বেশি হবে। চর্চায় থাকবেন আপনি, ট্রেন্ডিং থাকবেন বাবুল। না চেয়েও বাঙালি বিজেপির নাম করতে বাধ্য হবে। আরও পড়ুন-Jadavpur University Row: ঊর্মিমালা বসুকে নিয়ে মিম আক্রমণ কাণ্ডে বাবুল সুপ্রিয়-র টুইট, ' তীব্র নিন্দা করছি'
জানা গিয়েছে, টলিউডের কলাকুশলীদের নিয়ে ‘খোলা হাওয়া’ সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান ছিল আজ। সেখানেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বক্তব্য রাখতে গিয়ে দাবি করে বসেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সতীদাহ প্রথা রদ করেছিলেন। বাবুল বলেন, “সতীদাহ প্রথার বিলোপ, বিধবা বিবাহ চালু করেছিলেন বিদ্যাসাগর। তাঁর জন্মদিনে একটা সংগঠন শুরু হচ্ছে, এটা অনেক বড় ব্যাপার।”
এই মন্তব্যের পরেই স্বাভাবিক ভাবেই চার দিকে সমালোচনা ও হাসির ঝড় ওঠে। কিছু দিন আগেই যাদবপুর-কাণ্ডে গণবিক্ষোভের মুখে পড়ে বাবুল ছাত্রদের জিজ্ঞেস করছিলেন, এনআরসি-র ফুল ফর্ম কী। সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেও বাবুলের সাধারণ জ্ঞানের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন অনেকে। ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইটারে ও ফেসবুকে ভুল স্বীকার করে একটা ব্যাঙ্গাত্বক পোস্ট দিলেন। শুরুতেই ‘হা হা’ হাসি লিখখেন, “রামমোহন রায় অলরেডি আমাকে মাফ করে দিয়ে হাসিমুখে এসএমএস করেছেন। আশীর্বাদও করেছেন।” রামমোহন রায়ের মতো এক জন সমাজ সংস্কারককে নিয়ে ওই মাপের রসিকতা ও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করা যায় কি না, হা হা করে হাসা যায় কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।