ICC World Cup 2019: অবিশ্বাস্য নাটকীয় ফাইনালে সুপার ওভারও টাইয়ের পর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, ফাইনালের ফয়সালা বাউন্ডারি সংখ্যায়, স্টোকস মহানায়ক-কিউইরা হৃদয় জিতল
বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। ((Photo Credits: Getty Images)

লন্ডন, ১৪ জুলাই:  ICC World Cup 2019-এর ফাইনাল সুপার ওভারেও টাই হওয়ার পর বাউন্ডারি বেশি মারার ভিত্তিতে ইংল্যান্ড জিতে নিল তাদের প্রথম বিশ্বকাপ।  বিশ্বকাপের ফাইনাল (ICC World Cup 2019 Final ) একেবারে নাটকীয়ভাবে সুপার ওভারেও টাই হয়। মানে টাই ভাঙতে সুপার ওভার করে সেখানেও টাই। তাই নিয়ম অনুযায়ী সুপার ওভারে টাই হলে যে দল ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি মারবে, সেই নিয়মেই চ্যাম্পিয়ন হল ইংল্যান্ড।

ম্যাচের ৫০ ওভারের শেষ ওভারে দুটো ডট বল, দুটো ছক্কা, দুটো রান আউটের পর রবিবার লর্ডসে একেবারে অবিশ্বাস্য ফাইনালের ফয়সালা হল সুপার ওভারে। সুপার ওভারেও শেষ বলে রান আউটের পর এত উত্তেজনার ওয়ানডে ম্যাচ এর আগে কখনও হয়নি। সেটাই হল একেবারে বিশ্বকাপের ফাইনালে। সুপার ওভারে শেষ বলে মার্টিন গুপ্তিলের রান আউটে ম্যাচ ফের টাই, শুধু বাউন্ডারি বেশি মারায় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হল ইংল্যান্ড। ফাইনালে ইংল্যান্ডের জয়ের মহানায়ক বেন স্টোকস। একা হাতে ইংল্যান্ডকে রক্ষা করা স্টোকসই ফাইনালের ম্যান অফ দি ম্যাচ। ৫৭৮ রান করে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হলেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

এত উত্তেজনার ফাইনাল এর আগে দেখেনি ক্রিকেটবিশ্ব। লর্ডসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকল এই ফাইনাল। সুপার ওভারে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে তোলে ১৫ রান। ,সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাটিং করেন স্টোকস, বাটলার। কিউইদের হয়ে বল করেন ট্রেন্ট বোল্ট। জবাবে কিউইদের হয়ে ব্যাট করতে নামেন জিমি নিশাম (JIMMY NEESHAM) ও মার্টিন গুপ্তিল (Martin Guptil)। সুপার ওভারে ইংল্যান্ডের হয়ে বল করেন জোফ্রে আর্চার। কিউইরা একেবারে জয়ের দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিল সুপার ওভারে নিশামের ছক্কা ও দু রানে। শেষ বলে জিততে হলে কিউইদের করতে হত দু রান। তবে শেষ অবধি গুপ্তিল রান আউট হওয়ায় কিউইরা পরপর দু বার বিশ্বকাপে রানার্স হলেন।

শেষ বলে জিততে হলে ইংল্যান্ডকে করতে হত ২ রান, বেন স্টোকস এক রান নেওয়ার পর, দু রান নেওয়ার চেষ্টায় অন্যপ্রান্তে রান আউট হয়ে যান মার্ক উড। ফলে প্রথমে ব্যাট করা নিউ জিল্যান্ডের ২৪১ রানের জবাবে, ইংল্যান্ড ২৪১ রানে অল আউট হয়। ফলে নিয়ম মেনে সুপার ওভারে ফয়সালা হল বিশ্বকাপের। ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্যভাবে জয়ের একেবারে কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন স্টোকস।  আরও পড়ুন- ফাইনালে এসেই চলতি বিশ্বকাপের দ্রুততম ডেলিভারি মার্ক উডের

শেষ ওভারে জিততে হলে ইংল্যান্ডকে করতে হত ১৫ রান, হাতে দু উইকেট। শেষ ওভারে কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট প্রথম দুটি বলে স্টোকসকে কোনও রান নিতে দেননি। ৪ বলে ৯ রান হয়ে যায় ইংল্যান্ডের টার্গেট। পরপর দু বলে বিট খাওয়ার পর, তৃতীয় বলে ছক্কা হাঁকান স্টোকস। তারপর চতুর্থ বলটাই দু রান রান নেওয়ার সময় ফিল্ডারের ছোঁড়া বল স্টোকসের ব্যাটে প্রতিহত হয়ে বাউন্ডারি হয়। ফলে দৌড়ে দু রান ও বল বাউন্ডারি যাওয়ায় সেই বলে মোট ৬ রান পায় ইংল্যান্ড। এতে ম্যাচ জেতার জন্য ইংল্যান্ডকে দু বলে তিন রানের সহজ অঙ্কে নামিয়ে আনেন স্টোকস। কিন্তু এই ফাইনালটা অত সহজে নিষ্পতি হওয়ার ছিল না বলেই বোধহয় রান আউট হয়ে যান আদিল রশিদ। শেষ বলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২ রান, হাতে এক উইকেট। স্ট্রাইকে স্টোকস, বল করতে গেলেন বোল্ট। ইয়র্কারটা ঠিক হল না বোল্টের। ফুলটস বলটা লেগ অনে মেরেই ছুটলেন স্টোকস, দু রান দৌড়ে নিতে পারলেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। কিন্তু স্টোকস পারলেও, মার্ক উড ডাইভ দিয়েও রান সম্পূর্ণ করতে পারলেন না। ফলে ইংল্য়ান্ড শেষ বলে এক রান পেল, কিউইরা পেল উইকেট। ম্যাচ হল টাই।

এক নজরে ক্রিকেট বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা

১৯৭৫ বিশ্বকাপ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৯৭৯ বিশ্বকাপ: ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৯৮৩ বিশ্বকাপ:ভারত

১৯৮৭ বিশ্বকাপ: অস্ট্রেলিয়া

১৯৯২ বিশ্বকাপ: পাকিস্তান

১৯৯৬ বিশ্বকাপ: শ্রীলঙ্কা

১৯৯৯ বিশ্বকাপ: অস্ট্রেলিয়া

২০০৩ বিশ্বকাপ: অস্ট্রেলিয়া

২০০৭ বিশ্বকাপ: অস্ট্রেলিয়া

২০১১ বিশ্বকাপ: ভারত

২০১৫ বিশ্বকাপ: অস্ট্রেলিয়া

২০১৯ বিশ্বকাপ: ইংল্যান্ড

প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হতে ইংল্যান্ডকে করতে হত ২৪২ রান। রবিবার, লর্ডসে ফাইনালে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে নিউ জিল্যান্ড করে ৮ উইকেটে ২৪১ রান। অনেকটা সেমিফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে যেমন ব্যাটিং করেছিলেন কিউইরা, আজ ফাইনালেও তেমন করলেন কেন উইলিয়ামসনরা। হেনরি নিকোলাস (৫৫), টম লাথাম (৪৭), কেন উইলিয়ামসন (৩০)-র সৌজন্যেই লড়ার মত স্কোর গড়তে পারল কিউইরা।

ইংল্যান্ডের পেসাররা আজ লর্ডসে দাপিয়ে বেড়ালেন। চার ব্রিটিশ পেসারই তাদের পেসে নাজেহাল করলেন কিউই ব্যাটসম্যানদের। ক্রিস ওকস ৩৭ রানে তিনটি ও লিয়াম প্ল্যাঙ্কেট ৪২ রানে তিনটি উইকেট পেলেন। জোফ্র আর্চার, মার্ক উড একটি করে উইকেট নিলেন। চলতি বিশ্বকাপের সবচেয়ে দ্রুতগতির ডেলিভারিটা করলেন মার্ক উড (১৫৪ কিমি/ঘণ্টা)।