Kali Puja: পুজো এলেই মন আনন্দে ভরে ওঠে, আসলে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা দেখতে দেখতে প্রতিটি হতক্লান্ত বাঙালি সেই শৈশবের দিনগুলিতে ফিরে যায়। পুজো মানেই একরাশ আনন্দ আর খুশির সমাহার। ঝকঝকে রোদ্দুরের মধ্যে কাশের দোলার যে কী আকর্ষণ তা একমাত্র বাঙালিই বোঝে। আর দশমীতে দুর্গা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গেই দেবীপক্ষের অবসানে পিতৃপক্ষের সূচনা হতেই মনের কোণে ফের মেঘ জমতে শুরু করে। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হতে পারে না। কোজাগরী পূর্ণিমায় ঘরে আসে দেবী লক্ষ্মী। আর তারপর তো পাড়ায় পাড়ায় নতুন প্যান্ডেল। কুমোরটুলিতে ফের সাজ সাজ রব, কালীপুজো বলে কথা।
দুর্গাপুজো আর কালীপুজোর আনন্দের মধ্যে তফাত করা যায়। মা দুর্গার মুখ দেখলেই মনে হয় বাড়ির মেয়ে বছর ঘুরে বাপের বাড়ি এলো। কিন্তু নানা রূপে কালী প্রতিমা যেন চমক দিতেই তৈরি হয়েছে। আর দুপাশে ডাকিনী যোগিনী? উফ সেই মেয়েবেলা থেকেই এই ডাকিনী যোগিনীকে নিয়ে ভারী কৌতূহল। এমন ভয়াল বেশে এরা দুজন মণ্ডপে যে কী করছে ঠিক বুঝে উঠতে পারতুম না। আমার মনে হয় এখনও অনেকেরই কৌতূহলের কারণ এই ডাকিনী যোগিনী (Dakini & Jogini)। তবে সব পুজো মণ্ডপে কিন্তু কালী প্রতিমার (Goddess Kali) পাশে এই ডাকিনী যোগিনী থাকে না তা বলাই বাহুল্য। কুমোরটুলিতে (Kumartuli) প্রবেশ করে প্রতিমার সাম্রাজ্যের মাঝেই খোঁজ পাওয়া যায় ডাকিনী যোগিনীর বিশাল সম্ভারের। আলাদা করেই বেশিরভাগ বারোয়ারি পুজোর উদ্যোক্তারা ডাকিনী যোগিনী কিনে নিয়ে যান। ডাকিনী যোগিনী মিলিয়ে দাম মোটামুটি হাজার টাকা থেকে শুরু। আইফোন আর ইন্টারনেট গেমের যুগেও কালী প্রতিমার পাশে ডাকিনী যোগিনীর মতো কিছু চরিত্র বাস্তবিকভাবেই টিকিয়ে রেখেছে তাদের অস্তিত্ব। এখন পাড়ার মণ্ডপে ঠাকুর এলে আগে কিন্তু দেখা হয় ডাকিনী যোগিনী সঙ্গে এল কি না। আসলে মেয়েবেলার সেই ভয়টাকে যদি বাঁচিয়ে রাখা যায় তাহলেই তো পরম পাওয়া, তাই না।
কোনও মায়ের রং কালো, কোথাও শ্যামা। কোথাও মুখে রুদ্র ভাব, কোথাও অপেক্ষাকৃত শান্ত। তবে বড়দের কাছে মায়ের মূর্তি নিয়ে কৌতূহল থাকলেও ছোটদের কাছে কিন্তু মাতৃ প্রতিমার চেয়েও বেশি কৌতূহল তাঁর দুপাশে বসানো ডাকিনী যোগিনী নিয়ে। ছোট্ট মন মা কালীর দুপাশে রাখা ডাকিনী আর যোগিনীর বীভৎস মুখ ও ভঙ্গিমায় ক্ষণিকের জন্য হলেও আবিষ্ট হয়ে পড়ত। ছোটবেলার মনে দাগ কাটা সেই ২ চরিত্রের উৎস সন্ধানে বড়দের জন্য থাকত একগুচ্ছ প্রশ্ন। সে ভয়ও হতে পারে, আবার কৌতূহলও হতে পারে। কালীপুজোয় ডাকিনী যোগিনী আবশ্যক না তবে যে মণ্ডপে মায়ের সঙ্গে তারা আসে সেই মণ্ডপের আকর্ষণ কিন্তু একটু বেশিই থাকে।