প্রতি বছর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয় মহর্ষি বাল্মীকি জয়ন্তী। সনাতন ধর্মে, মহর্ষি বাল্মীকিকে প্রাচীন কালের প্রথম সংস্কৃত কবি হিসেবে স্বীকৃত দেওয়া হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ত্রেতাযুগে ভগবান শ্রী রাম যখন তাঁর স্ত্রী সীতাকে পরিত্যাগ করেছিলেন, তখন বাল্মীকি তাঁর আশ্রমে আশ্রয় দিয়েছিলেন মাতা সীতাকে। তাঁর আশ্রমেই সীতাজী লভ ও কুশের জন্ম দিয়েছিলেন এবং লাভ ও কুশকে বৈদিক ও অস্ত্র শিক্ষা দিয়েছিলেন বাল্মীকি। মহর্ষি বাল্মীকি রামকথার আকারে মহাকাব্য রামায়ণের (সংস্কৃত) মহাকবি হিসেবে স্বীকৃত। ২০২৪ সালে ১৭ অক্টোবর পালন করা হয় বাল্মীকি জয়ন্তী।

২০২৪ সালে আশ্বিন পূর্ণিমা শুরু হয়েছে ১৬ অক্টোবর, বুধবার, রাত ০৮:৪০ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, বিকাল ০৪:৫৫ মিনিটে। উদয় তিথি অনুসারে, ১৭ অক্টোবর পালন করা হয় বাল্মীকি জয়ন্তী। বাল্মীকি জয়ন্তীতে, সমগ্র ভারত বাল্মীকি জিকে শ্রদ্ধা জানায়। তবে এই দিনে বাল্মীকি সম্প্রদায়ের মানুষ ব্রহ্মমুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে, স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরে ধ্যান করে। অনেকে গঙ্গায় স্নানও করেন এই দিনে। স্নানের পর সূর্যদেবকে জল নিবেদন করা হয় এই দিনে। এরপর বাল্মীকিজির ছবিতে ফুল নিবেদন করে পুজো করা হয়। এই দিনে সারা দেশের বাল্মীকি মন্দিরে রামায়ণ গান গেয়ে মহান কবির ধ্যান করা হয়।

মহর্ষি বাল্মীকিকে 'আদি কবি'ও বলা হয়, যিনি সংস্কৃত ভাষার প্রথম মহাকবি, যিনি মহাকাব্য রামায়ণ রচনা করেছিলেন। বাল্মীকির প্রথমে নাম ছিল রত্নাকর। যৌবনকালে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ডাকাত হতে হয় তাকে। একবার বাল্মীকি ডাকাতির উদ্দেশ্যে বনের মধ্য আটক করেন নারদজিকে। ঋষি নারদ বাল্মীকিকে জিজ্ঞেস করেন, যাদের জন্য তুমি এসব পাপ করছ, তারাও কি তোমার পাপের অংশীদার হবে? বাল্মীকি এই প্রশ্ন তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞেস করলে তার পিতামাতা অস্বীকার করেন। এই উত্তরে মন খারাপ করে নারদ মুনিকে মুক্ত করার পর অনুতাপে ঘন বনে গিয়ে তপস্যা করেন বাল্মীকি। তার কঠোর তপস্যায় খুশি হয়ে শ্রী রামচরিত্র লেখার পরামর্শ দেন ব্রহ্মাজী। বাল্মীকি সংস্কৃতে রামায়ণ লিখেছিলেন এবং মহাবিশ্বের প্রথম সংস্কৃত মহাকবি হওয়ার গৌরব পেয়েছিলেন।