পযুসান উৎসব জৈন ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। প্রায় ৮ থেকে ১০ দিন ব্যাপী এই মহা উৎসবে জৈন সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ সময় কাটে আধ্যাত্মিকতায়। পযুসান উৎসবের সমাপ্তি হয় সম্বতসরি, যা পালন করা হয় পযুসানের শেষ দিনে। অনেক জায়গায় এই উৎসব ধীরজ উৎসব নামেও পরিচিত। উৎসবটি গভীর আধ্যাত্মিক মনন, স্ব-শৃঙ্খলা এবং তপস্যার প্রতীক, যা অহিংসা, সত্য এবং ক্ষমার নীতির প্রতি জৈন সমাজের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। এটি উল্লেখযোগ্য যে শ্বেতাম্বর জৈন সম্প্রদায় ৮ দিন ধরে পালিত হয় পযুসান উৎসব, যেখানে দিগম্বর জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ ১০ দিন ধরে পালন করে এই উৎসব।
২০২৪ সালে পযুসান উৎসব শুরু হবে ৩১ আগস্ট এবং শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর। পযুসান উৎসব পালন করে প্রধানত দুটি প্রধান সম্প্রদায়, শ্বেতাম্বর এবং দিগম্বর। দুই সম্প্রদায়ের রীতিনীতি ভিন্ন হয়। পযুসানের সময় স্ব-অধ্যয়ন এবং উপবাসের উপর জোর দেয় জৈন সমাজ। আত্মার পবিত্রতা এবং জীবনের বাস্তবতা বোঝার সময় এটি। এই উৎসবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হল ক্ষমা, লোকেরা তাদের সমস্ত ভুলের জন্য একে অপরের কাছে ক্ষমা চায় এই দিনে। উৎসবের দিনগুলিতে ধর্মীয় আচার, উপাসনা এবং উপদেশে অংশগ্রহণ করে জৈন ধর্মের লোকেরা। অনেকে এই সময়টি সাধকদের সঙ্গে ধ্যান এবং তপস্যায় ব্যয় করেন, যাতে আত্মার পবিত্রতা বজায় থাকে।
পযুসান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'পর্যুসিত' থেকে, এর অর্থ 'সম্পূর্ণ হওয়া'। জৈন সমাজের ঐতিহ্য ও দর্শন থেকে এর উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। পযুসান মানে 'একত্র হওয়া', যা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের মাধ্যমে নিজের আত্মার কাছাকাছি আসা বোঝায়। বিশ্বাস অনুসারে, ২৪ তম তীর্থঙ্কর ভগবান মহাবীর জৈন সম্প্রদায়ের গভীর ধ্যান, আত্ম-নিয়ন্ত্রণ এবং মননে নিযুক্ত করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই উৎসবটি। জনশ্রুতি আছে যে, প্রাচীনকালে জৈন সন্ন্যাসীরা জৈন ধর্মের নীতি প্রচারের জন্য জায়গায় জায়গায় ভ্রমণ করতেন এবং বর্ষাকালে এক জায়গায় বসতি স্থাপন করতেন, এই সময়টিকে আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্য ব্যবহার করতেন তারা।