ধন ত্রয়োদশীর উদযাপন একটা সময় অবধি সীমাবদ্ধ ছিল অবাঙালিদের মধ্যে কিন্তু এখন বাংলার ঘরে ঘরেও পালিত হয় ধনতেরস। মানা হয় নানা রীতি। এই তিথির সঙ্গে জুড়ে আছে অনেক পুরাণ-কথা ও কিংবদন্তী।
ধনতেরসে সোনা-রুপো- ধাতু কেনার রীতি কেন? ধনতেরাসে কোন দেবতাদের পূজা করা হয়?
ধনতেরসের দিনে ভগবান ধন্বন্তরীর পূজা করা হয় যা ধন্বন্তরী ত্রয়োদশী বা ধন্বন্তরী জয়ন্তী হিসেবেও পালিত হয়।মনে করা হয় এই দিনে ভগবান ধন্বন্তরীর জন্ম হয়েছিল। শাস্ত্র অনুসারে, ভগবান ধন্বন্তরী ভগবান ধন্বন্তরী জন্মের সময় অমৃত কলশ বহন করছিলেন। তাই ধনতেরাসের দিন পাত্র কেনার রীতি রয়েছে। বাসনপত্র ছাড়াও, সোনা এবং রূপার মতো যে কোনও ধাতব জিনিস কেনাও শুভ বলে মনে করা হয়।
আবার আরেকটি বিশ্বাস অনুযায়ী, হিম রাজার ছেলেকে, তার বিয়ের পরে যমরাজের হাত থেকে বাঁচাতে তার স্ত্রী একটি ফন্দি এটেছিলেন। তিনি সোনা রুপো, ধনরত্ন, প্রদীপ, বাসনপত্র দিয়ে ঘরের দরজা ঘিরে রেখেছিলেন। এর ফলে এই সমস্ত ধাতুর উজ্জলতায় যমরাজের চোখ ধাঁধিয়ে যায়এবং তিনি দিকভ্রষ্ঠ হন। এইভাবে স্বামীকে যমের দুয়ার থেকে রক্ষা করেছিলেন তিনি।সেই থেকেই এই বিশেষ দিনে বিভিন্ন ধাতু কেনাকে শুভ বলে মনে করা হয়। তাই যমদীপ নামে পরিচিত একটি অনুষ্ঠান ত্রয়োদশী তিথির দিনে করা হয়। প্রচলিত আছে যে পরিবারের সদস্যদের অকালমৃত্যু থেকে রক্ষা করার জন্য এই পুজো করা হয়।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, কোনও এক সময়ে দুর্বাসা মুনির অভিশাপে স্বর্গলোক হয় লক্ষ্মীহীন। দেবতারা রাক্ষসের সঙ্গে লড়াই করে সমুদ্র মন্থন করার পর লক্ষ্মী দেবীকে ধনতেরাসেই ফিরে পেয়েছিলেন । সমুদ্রের ক্ষীরসাগর থেকে উঠে এসেছিলেন মহালক্ষ্মী। অমাবস্যার অন্ধকার থাকায় লক্ষ্মীকে বরণ করে স্বর্গে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুষ্ঠানে আলোকমালায় সজ্জিত করা হয় স্বর্গকে। লক্ষ্মীদেবীকে ফিরিয়ে আনার এই উৎসবই ধনতেরাস। তাই ধনতেরাসে ধন্বন্তরী দেবের পাশাপাশি দেবী লক্ষ্মীরও পূজা করা হয়। এছাড়া ধনের দেবতা ভগবান কুবেরকেও এই দিন পুজো করা হয়।
শ্রী ধন্বন্তরী দেবের পুজোর বিধানঃ
নিজের এবং তাদের পরিবারের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং সমস্ত অসুস্থতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় ধন্বন্তরির কাছে প্রার্থনা করেন। ভগবান ধন্বন্তরীকে স্নান করানো এবং তাঁর মূর্তির উপর সিঁদুর লাগানোর প্রক্রিয়ার পরে নব শস্য পরিবেশন করা হয়।এরপর ষোড়শ উপচারে বা ১৬ ক্রিয়ায় পুজো সম্পন্ন করা উচিত। আসন, পাদ্য, অর্ঘ্য, স্নান, বস্ত্র, আভুষণ, গন্ধ (কেসর-চন্দন), পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, আচমন (শুদ্ধ জল), দক্ষিণাযুক্ত তাম্বুল, আরতী, পরিক্রমা ইত্যাদি ১৬ ক্রিয়ার অন্তর্ভূক্ত।ভগবান ধন্বন্তরীকে খুশি করতে এই দিনে ধন্বন্তরী স্তোত্র পাঠ করা উচিত।
শ্রী কুবের পুজো বিধানঃ
ভগবান কুবেরকে পুজো করা হয় এই তিথিতে এবং ফুল দেওয়া হয়। ধূপ, দীপ, ফল এবং মিষ্টিও দেওয়া হয় । ভগবান কুবেরের আশীর্বাদের জন্য পূজার সময় 'ওম হ্রীম কুবেরায় নমঃ' এই মন্ত্রটি জপ করতে থাকুন।
শ্রী লক্ষ্মী পুজোর বিধানঃ
সোনা, রূপা, তামা বা পোড়ামাটির তৈরি একটি কলস স্থাপন করা হয়। কয়েকটি ধানের শীষ, একটি ফুল এবং একটি মুদ্রা রাখা হয় এবং কলসের তিন-চতুর্থাংশ জল ও গঙ্গাজলে ভরা হয়।একটি ধাতব থালা যার মধ্যে ধানের শীষ এবং উপরে পাঁচটি আমের পাতা কলসের ভিতরে রাখা হয়। ধানের শীষের উপরে হলুদের গুঁড়ো দিয়ে একটি পদ্ম আঁকা হয় এবং এর উপরে মুদ্রা দিয়ে লক্ষ্মীর মূর্তি স্থাপন করা হয়।দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে কলসের সামনে গণেশের একটি মূর্তিও স্থাপন করা হয়। প্রদীপ জ্বালানোর পর হলদি, কুমকুম ও ফুল দিয়ে পুজো শুরু হয়।