করোনা-আবহে ১৯ বছর পর বেলুড় মঠের (Belur Math) মূল মন্দিরের ভিতরে হচ্ছে এবার দুর্গাপুজো। ১১৯ বছরের পুরোনো এই পুজো এবার বন্ধ থাকছে দর্শনার্থীদের জন্য; করা যাবে না দর্শন এবং দেওয়া যাবে না পুষ্পাঞ্জলিও। স্বামী বিবেকানন্দের (Swami Vivekananda) উদ্যোগে ১৯০১ সালে বেলুড় মঠে শুরু হয় দুর্গাপুজো, সারদা মাকে ১০৮টি পদ্ম দিয়ে জ্যান্ত দুর্গার পুজো করেন স্বামীজি। হাওড়ার ঘুসুরি থেকে সারদা মাকে আনা হয়েছিল বেলুড় মঠে, অষ্টমীর দিন কুমারী পুজোর পর সারদা মায়ের পুজো করা হয়। স্বামীজির হাত ধরেই বেলুড় মঠে শুরু হয় কুমারী পুজো, স্বামীজি তাঁর প্রিয় বেলগাছতলায় বসে দুর্গাপুজো করার জন্য মনস্থির করেন।
কুমোরটুলি থেকে সেবছর পঞ্চমীর দিন কৃষ্ণলাল মহারাজের হাত ধরে বেলুড় মঠে প্রতিমা এসেছিল। পঞ্চমীর দিন ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল, স্বামী নির্ভয়ানন্দ এবং আরও কয়েক জন সন্ন্যাসী ও ব্রহ্মচারী মিলে কুমারটুলি থেকে নৌকা করে দুর্গাপ্রতিমাখানি মঠে নিয়ে এলেন। মঠের উত্তর দিকের জমিতে দুর্গাপুজোর এক বিরাট মণ্ডপ বানানো হয়েছিল। স্বামীজির সঙ্গে এই পুজোয় সাহায্য করেছিলেন-সুকুল, গোবিন্দ, কালিকৃষ্ণ, সুধীর, সুশীল; এঁরা প্রত্যেকেই স্বামী বিবেকানন্দের কাছ থেকে সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। বেলুড় মঠের প্রথম দুর্গাপুজোয় পূজারি হয়েছিলেন ব্রহ্মচারী কৃষ্ণলাল। সেবার দুর্গাপুজোর তিথি পড়েছিল কার্তিক মাসে। ১ কার্তিক, শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ছিল ষষ্ঠী।
অষ্টমীর কুমারী পুজোয় কুমারী হিসেবে বেছে নেওয়া হয় রামলালদাদার কন্যাকে। স্বামীজির নির্দেশেই বেছে নেওয়া হয়েছিল তাকে। এরপর থেকে এত বছর পেরিয়ে গেলেও নিষ্ঠা-নিয়ম মেনে চলছে অষ্টমীর কুমারী পুজো। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে দেবী দুর্গাকে চার থেকে পাঁচ মাছ দেওয়ার প্রচলন ছিল দুর্গাপুজোয়। সন্ধিপুজোয় কালীঘাটে বলি দেওয়া মহাপ্রসাদ রান্না করে দেবী দুর্গাকে দেওয়া হত।
করোনা সংক্রমণ রুখতে এবছর পুজোয় দেওয়া যাবে না পুষ্পাঞ্জলি। ভক্ত এবং দর্শনার্থীরাও মঠ চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না। সরাসরি পুজো দেখা যাবে মঠের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের তরফে স্বামী জ্ঞানব্রতানন্দ বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর ছোট আকারে পুজো হচ্ছে। কুমারী পুজোও হবে। তবে সবই হবে দূরত্ব-বিধি মেনে। এই প্রস্তুতির বিষয়টিই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’’