পার্থ প্রতিম চন্দ্র: ভোট এসে গেল। আর এক সপ্তাহ বাদেই ভারতে সাধারণ নির্বাচন শুরু হয়ে যাচ্ছে। তার আগে শেষ মুহূর্তের প্রচারে সব রাজনৈতিক দল। এবার লোকসভা নির্বাচন দেশজুড়ে সাত দফায় হতে চলেছে। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু, চলবে ১ জুন। ৪ জুন ফল ঘোষণা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিম বাংলায় সাত দফায় ভোটগ্রহণ হবে।
আসুন তার আগে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন লোকসভা আসনে প্রথম দফায় সবার নজর থাকবে।
এক নজরে প্রথম দফার ভোট কোন কোন আসনের দিকে সবার চোখ থাকবে---
পশ্চিমবঙ্গ-কোচবিহার, জলপাইগুড়ি।
উত্তরপ্রদেশ- পিলিভিট, মুজফরনগর, সাহারানপুর, বিজনোর, নাগিনা, মোরাদাবাদ, রামপুর, কৈরানা।
বিহার- ঔরাঙ্গাবাদ, জামুই, নওদা, গয়া।
মহারাষ্ট্র- নাগপুর, চন্দ্রপুর, ভান্ডারা-গোন্ডিয়াস, রামতেক।
রাজস্থান- বিকানের, চুরু, দাউসা, জয়পুর।
মধ্যপ্রদেশ- ছিন্দেওয়াড়া।
উত্তরাখণ্ড- নৈনবিতা-উধমসিং নগর, হরিদ্বার।
ছত্তিশগড়-বস্তার
দক্ষিণ ভারত
তামিলনাড়ু- কন্যাকুমারী, চেন্নাই সেন্ট্রাল, কোয়াম্বাটোর, ভেলোর, ইরোদে।
উত্তর পূর্ব ভারত-
অসম- জোরহাট, ডিব্রুগড়, কাজিরাঙ্গা, লাখিমপুর।
ত্রিপুরা- পশ্চিম ত্রিপুরা।
মেঘালয়-শিলং, তুরা।
নাগাল্যান্ড-নাগাল্যান্ড
অরুণাচল প্রদেশ- অরুণাচল প্রদেশ পূর্ব, অরুণাচল প্রদেশ পশ্চিম।
মিজোরাম-মিজোরাম
মণিপুর-ইনার মণিপুর, আউটার মণিপুর।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল
পুদুচেরি-পুদুচেরি
লাক্ষাদ্বীপ- লাক্ষাদ্বীপ
জম্মু-কাশ্মীর- উধমপুর।
প্রথম দফার দশ দ্বৈরথ
১) জিতিন প্রসাদ বনাম ভগবত গ্যাংওয়ার বনাম আনিস খান (পিলিভিট, উত্তর প্রদেশ): দীর্ঘ ৩৫ বছর পর পিলিভিটে লড়ছেন না কোনও গান্ধী। ১৯৯১ লোকসভা থেকে হয় মেনকা গান্ধী বা তাঁর ছেলে বরুণ গান্ধী বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়ে জিতে আসছেন। তবে এবার আর বরুণ গান্ধীকে পিলিভিটে টিকিট দেয়নি বিজেপি। মেনকা পুত্রর বদলে এখানে পদ্ম- প্রার্থী প্রাক্তন কংগ্রেস মন্ত্রী জিতিন প্রসাদ। দলবদলে বিজেপিতে আসা জিতিনের বিরুদ্ধে ত্রিমুখী লড়াইয়ে সমাজবাদী পার্টির পাঁচবারের বিধায়ক ভগবত সরন গ্য়াংওয়ার ও বহুজন সমাজ পার্টি-র প্রভাবশালী নেতা মিস আহমেদ খান। বরুণ গান্ধী গতবার জিততে বেগ পেয়েছিলেন। তবে সেবার এসপি, বিএসপি-র জোট ছিল। এবার তারা আলাদা আলাদা লড়ছে। বিরোধী ভোট এককাট্টা হলে সমস্যায় পড়তে পারে বিজেপি।
২) নীতীন গডকরি বনাম বিকাশ থাকরে (নাগপুর, মহারাষ্ট্র): মোদী সরকারের সবচেয়ে সফল মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত নীতীন গডকরি। কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ, জাতীয় সড়ক মন্ত্রী গড়করি এবার আরএসএস গড় নাগপুরে হ্যাটট্রিক করতে নেমেছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ এবার কংগ্রেসের নাগপুর জেলার সভাপতি বিকাশ থাকরে। মোটের ওপর গডকরির জয়ের ব্যবধান আড়াই লক্ষের ওপরে থাকে। তবে এবার বিজেপির বিকাশের মুখ বনাম কংগ্রেসের প্রার্থী বিকাশের লড়াই জমে যেতে পারে।
৩) বিপ্লব দেব বনাম আশিস সাহা (পশ্চিম ত্রিপুরা): পশ্চিম ত্রিপুরায় এবার বিজেপির প্রার্থী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব। বছর দুয়েক আগে ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটের মুখে বিপ্লবকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মানিক সাহাকে বসিয়েছিলেন শাহ-নাড্ডারা। সান্তনা হিসেবে বিপ্লবকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়েছিল। এবার তাঁকে লোকসভায় লড়তে দেওয়া হল। বিপ্লবের প্রতিপক্ষ তাঁর এক সময়ের সহকর্মী তথা আশিস সাহা। গতবার বিজেপি এখানে সহজে জিতলেও এবার জোর লড়াই।
৪) গৌরব গগৈ বনাম তপন গগৈ (জোরহাট, অসম)- রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গৈগ-এর ছেলে গৌরব এবার জোরহাটে প্রার্থী। গতবার যে আসন থেকে গৌরব গগৈ জিতেছিলেন সেই আসনের অস্তিত্ব নেই। এবার তাই বিজেপি-র গড় জোরহাটে প্রার্থী হয়েছেন গৌরব। গত দু বার বিজেপি এখান থেকে প্রায় লাখ খানেক ভোটে জিতে আসছে। তবে এবার গৌরব ফেভারিট। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জোরহাটে গৌরবকে হারাতে যাবতীয় শক্তি উজাড় করছেন।
৫) কে আন্নামালাই বনাম গণপতি কে রাজকুমার (কোয়াম্বাটোর, তামিলনাড়ু): তামিলনাড়ু বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী কে আন্নামালাই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লড়াইয়ে নেমেছেন আন্নামাল্লাই। মাঝে মাঝেই বিতর্কিত কথা বলা আন্নামাল্লাই নাকি শুধু উত্তর ভারতের মিডিয়ার প্রোডাক্ট, জমি বলতে কিছুই নেই। এমনটাই দাবি বিরোধীদের। বিজেপির আবার দাবি আন্নামাল্লাই এবার একাই বিজেপিকে মোদী ঝড়ে ভর করে জিতিয়ে আনবেন। কোয়াম্বাটোরে আন্নামালাইয়ের প্রতিপক্ষ ডিএমকে-র দাপুটে নেতা তথা প্রাক্তন মেয়র গণপতি রাজকুমার ও এআইএডিএমকে-র সিংহাই রামচন্দ্রন। গতবার এই আসনে ডিএমকে সমর্থিত সিপিআই (এম) প্রার্থী ১ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটে বিজেপি-কে হারিয়েছিলেন। শেষবার বিজেপি এই আসনে জেতে ১৯৯৯ লোকসভায়। তবে সেবার বিজেপি-কে সমর্থন করেছিল এআইএডিএমকে। এবার সেখানে পদ্ম পার্টি একাই লড়ছে।
৬) নিশীথ প্রামাণিক বনাম জগদীশ বর্মা বসুনিয়া (কোচবিহার, পশ্চিমবঙ্গ): কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে এবার তৃণমূল প্রার্থী করেছে সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া-কে। এবার কোচবিহারের লড়াই গত দু বারের চেয়ে বেশী কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অঙ্কের বিচারে বিজেপি এগিয়ে। কোচবিহার লোকসভার অধীনে যে সাতটি বিধানসভা আছে, তার মধ্যে পাঁচটিতেই বিজেপির বিধায়ক। তবু অমিত শাহ-র ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিককে জিততে হলে মাঠে নেমে লড়তেই হবে।
৭) নকুলনাথ বনাম বিবেক শাহু (ছিন্দেওয়াড়া, মধ্যপ্রদেশ)- গত লোকসভায় মধ্যপ্রদেশে ২৬টি-র মধ্যে কংগ্রেস মাত্র একটি আসনেই জিতেছিল। সেটা ছিল কমলনাথের গড় হিসেবে পরিচিত ছিন্দেওয়াড়া। কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের ছেলে নকুলনাথ এবারও হাত প্রার্থী। যদিও ভোটের ঠিক আগে কমলনাথ ও নকুলনাথ প্রায় বিজেপিতে নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কংগ্রেসের টিকিটেই লড়ছেন নকুলনাথ।
৮) কিরণ রিজ্জু বনাম নবম টুকি (অরুণাচল পূর্ব): মোদী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী কিরণ রিজ্জু গতবার ৬৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। যদিও ২০১৪ লোকসভায় ততটা সহজ ছিল না তাঁর জয়। এবার কিরণের সামনের রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নবম টুকিকে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস। জোর লড়াই।
৯) সঞ্জীব বালিয়ান বনাম হরেন্দ্র সিং মালিক (মুজফরনগর, উত্তর প্রদেশ)- ত্রিমুখি কঠিন লড়াই। গতবার মাত্র ৭ হাজার ভোটে এখান থেকে জিতেছিলেন বিজেপির সঞ্জীব কুমার বালিয়ান। এবারও তিনি পদ্ম প্রার্থী। তাঁর সামনে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হরেন্দ্র সিং মালিক ও বিএসপি-র দারা সিং প্রজাপতি। সঞ্জীব কুমারের সবচেয়ে বড় ভরসা গতবার এখানে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ দল আরএলডি এবার বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। বিরোধী ভোট এক বাক্সে পড়ে গেলে চাপে পড়ে যাবে বিজেপি।
১০) রাহুল কাসওয়ান বনাম দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া (চুরু, রাজস্থান)- গতবার যিনি বিজেপির টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েছিলেন, সেই রাহুল কাসওয়ান এবার পদ্ম শিবিরে টিকিট না পাওয়ায় কংগ্রেসের প্রতীকে লড়ছেন। তাঁর প্রতিপক্ষ প্যারা অলিম্পিকে দুটি সোনার পদক পেয়ে ইতিহাস গড়া জ্যাভলিন থ্রোয়ার দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া। বেশ কঠিন লড়াই এই কেন্দ্রে।