নয়াদিল্লি, ১৭ মে: আগামী রবিবার, ১৯মে দেশজুড়ে লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Elections 2019) সপ্তম তথা (Seventh Phase) শেষ দফার ভোটগ্রহণ। ১১ এপ্রিল থেকে দেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল, আগামী রবিবার তাতে যবনিকা পাত ঘটতে চলেছে। শেষ দফার ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) থেকে বিজেপি-র তারকা প্রার্থী সানি দেওল (Sunny Deol), কংগ্রেসের তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা (Shatrughan Sinha) , কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ (Ravi Shankar Prasad)-দের মত হেভিওয়েটদের ভাগ্যপরীক্ষা হতে চলেছে। বিজেপি-র তারকা প্রার্থী কিরণ খেরের কেন্দ্রেও ভোটগ্রহণ হবে রবিবার, শেষ দফায়। বাংলায় মোট ৯টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে। ভাগ্যপরীক্ষা হতে চলেছে-তৃণমূল কংগ্রেসের নম্বর টু অভিষেক ব্যানার্জি, অভিজ্ঞ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায়দের মত নেতাদের ভাগ্যপরীক্ষা হতে চলেছে।
আসুন দেখে নেওয়া যাক শেষ দফায় ভোট হতে চলা কিছু হেভিওয়েট কেন্দ্রের লড়াইয়ের কথা--
কেন্দ্র: পটনা সাহিব (বিহার)
লড়াই- রবিশঙ্কর প্রসাদ (বিজেপি) বনাম শত্রুঘ্ন সিনহা (কংগ্রেস)
একেবারে জোরদার লড়াই। বিহারের এই কেন্দ্রে গতবার বিজেপির টিকিটে লড়ে বড় ব্যবধানে জিতেছিলেন বলিউড তারকা শত্রুঘ্ন সিনহা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ-র সঙ্গে বিরোধের জেরে বিজেপি ছেড়ে শত্রুঘ্ন যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। আর গতবার বিজেপি থেকে জিতে আসা শত্রুঘ্ন এবার লড়ছেন কংগ্রেসের টিকিটে। একসময় ঘরের শত্রু শত্রুঘ্নের হারাতে বিজেপি প্রার্থী করেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে। ২০০৯ লোকসভা নির্বাচনেও রাহুল গান্ধীর ঝড়ের মাঝেও বড় ব্যবধানে বিজেপির টিকিটে এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন শত্রুঘ্ন। এবার দেখার পটনা সাহিব কি শত্রুঘ্ন নাকি বিজেপি-র!
কেন্দ্র: বারাণসি (উত্তরপ্রদেশ)
লড়াই- নরেন্দ্র মোদী (বিজেপি) বনাম অজয় রাই (কংগ্রেস)
গতবার উত্তরপ্রদেশের এই কেন্দ্রে আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এবার মোদীর বিরুদ্ধে কোনও হাইপ্রোফাইল প্রার্থী দেয়নি বিরোধীরা। প্রথমে শোনা যাচ্ছিল কংগ্রেস মোদীর বিরুদ্ধে এখান থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে দাঁড় করাতে পারে। কিন্তু রাহুল গান্ধী মোদীর বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কাকে দাঁড় করানোর ঝুঁকি নেননি। অন্যদিকে, সমাজবাদী পার্টি জওয়ান তেজ বাহাদুরকে দাঁড় করালেও কমিশনে তাঁর প্রার্থীপদ খারিজ হয়। মোদীর বিরুদ্ধে তাই এবার প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের বাহুবলী নেতা অজয় রাই। যে অজয় রাই গত লোকসভা ভোটে মোদীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মাত্র ৭৫ হাজার ভোট পেয়ে ছিলেন। অজয় রাই ছাড়াও মোদীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী শালিনী যাদব।
কেন্দ্র: পাটলিপুত্র (বিহার)
লড়াই- রাম কৃপাল যাদব (বিজেপি মন্ত্রী) বনাম মিসা ভারতী (আরজেডি)
একটা সময় এখান থেকে দাঁড়াতেন লালুপ্রসাদ যাদব। ২০০৯-লোকসভা ভোটে অবশ্য এই কেন্দ্রে হেরেছিলেন লালু। ২০১৪ লোকসভা ভোটে লালুপ্রসাদের কন্যা মিসা যাদবকে এই কেন্দ্রে হারিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন রাম কৃপাল যাদব। রাম কৃপাল যাদব গতবার ৪০ হাজার ভোটে লালুর মেয়ে মিসাকে হারিয়েছিলেন। এবার কিন্তু কঠিন লড়াই। যদিও রাম কৃপালের পক্ষে যেতে পারে এই কেন্দ্রে জেডি (ইউ)-এর লাখ খানেক ভোট। আর লালু-র মেয়ের পক্ষে যেতে পারে মোদী বিরোধী হাওয়া।
কেন্দ্র: চণ্ডীগড় (চণ্ডীগড়)
লড়াইয়ে- কিরণ খের (বিজেপি) বনাম পবন কুমার বনসল (কংগ্রেস)
একেবারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। গতবার ছোট্ট এই কেন্দ্রে ৭০ হাজার ভোটে জিতেছিলসেন অনুপম খের-এর স্ত্রী তথা অভিনেত্রী কিরণ খের। গতবার কংগ্রেস-আপ-এর মধ্যে ভোট কাটাকাটির সুবিধা পেয়ে সাংসদ হয়েছিলেন মিসেস খের। গতবার আপ প্রার্থী হয়ে তৃতীয় হওয়া অভিনেত্রী গুল পানাং পেয়েছিলেন লক্ষাধিক ভোট। এবার সরাসরি লড়াইয়ে এখানকার প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনসল ও কিরণ খেরের।
কেন্দ্র: গুরুদাসপুর (পঞ্জাব)
লড়াইয়ে- সানি দেওল (বিজেপি) বনাম সুনীল কুমার জাখার (কংগ্রেস)
অভিনেতা সানি দেওলকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করে চমক দিয়েছে বিজেপি। ২০১৪ লোকসভা ভোটে বিজেপি-র টিকিটে এই কেন্দ্রে প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে জিতেছিলেন বিনোদ খান্না। বিনোদ খান্নার মৃত্য়ুর পর ২০১৭ সালে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপিকে প্রায় দু লক্ষে ভোটে হারায় কংগ্রেস। এবার এই আসন পুনরুদ্ধারে বিজেপি-র বাজি গদর অভিনেতা। সানি দেওল তাঁর ফিল্মি ডায়লগ দিয়ে খুব প্রচার করেছেন।
কেন্দ্র: উত্তর কলকাতা (বাংলা)
লড়াইয়ে- সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায় (তৃণমূল) বনাম রাহুল সিনহা (বিজেপি)
খুব কঠিন লড়াই। অমিত শাহ-র জনসভায় ঝামেলাটা এই কেন্দ্রের প্রচারেই হয়েছিল। গতবার বিজেপি-র হেভিওয়েট প্রার্থী রাহুল সিনহাকে হারিয়েছিলেন তৃণমূলের অভিজ্ঞ সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অঞ্চলের বেশ কিছু অঞ্চলে বিজেপি তখনও শক্তিশালী ছিল যখন রাজ্যে পদ্মফুলের প্রতীকটা কার্যত অজানা ছিল। এবার বিজেপির রাহুলের অগ্নিপরীক্ষা।