একের পর এক পেজার বিস্ফোরণে (Pager Blast) বিপর্যস্ত লেবানন। বিস্ফোরণের জেরে এখনও অবধি মৃতের সংখ্যা ২০। হাজার হাজার হিজবুল্লা (Hezbollah) সদস্য আহত। লেবাননের পাশাপাশি সিরিয়াতেও পেজার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। চারদিকে কেবলই স্বজনহারানোর হাহাকার। হাসপাতালগুলোতে উপচে পড়ছে রোগীর সংখ্যা। পেজার বিস্ফোরণের জেরে বিধ্বস্ত লেবানন (Lebanon) এবং সিরিয়ার বিস্তীর্ণ জনজীবন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, পেজার হামলার নেপথ্যে ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদকে কাঠগড়ায় তুলেছে হেজবুল্লা।
তবে কী এই পেজার?
পেজার হল যোগাযোগের একটি বেতার যন্ত্র। যা কেবল বার্তা আদান-প্রদান করতে সক্ষম। অতি-উচ্চ কম্পনের রেডিয়ো তরঙ্গের মধ্যে কাজ করে এটি। তবে মোবাইল ফোনের রমরমায় পেজারের ব্যবহার কমতে শুরু করলেও প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে নেটওয়ার্কের হাল খুবই খারাপ সেখানে এখনও এই যন্ত্র ব্যবহার হয়।
অন্যদিকে পেজারের মাধ্যমে যোগাযোগ মোবাইলের তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ, কারণ তা ট্র্যাক করা সহজ নয়। তাই মূলত জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে এই যন্ত্রের ব্যবহার এখনও অপরিসীম। এই পেজারের মধ্যে বিস্ফোরক রেখে লেবানন এবং সিরিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে খবর।
সাম্প্রতিক সময়ে লেবানন এবং সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া পেজার হামলার পর এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। যিনি এই হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও হামলাকারী এই পেজারের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে শোনা যাচ্ছিল। নরওয়ের নাগরিক তথা ব্যবসায়ী রিনসন জোস (Rinson Jose)। তবে তাঁর জন্ম কেরলে। এক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, 'নর্টা গ্লোবাল লিমিটেড' নামে একটি বুলগেরিয়ান কোম্পানি পেজারের চুক্তির পিছনে ছিল। আর সেই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রিনসন। কেরলের ওয়নাড়ে জন্মগ্রহণ করেন রিনসন। এমবিএ সম্পন্ন করে তিনি নরওয়ে চলে আসেন।
হাঙ্গেরি-ভিত্তিক BAC কনসাল্টিং পেজার নির্মাতা হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে নামে। গোল্ড অ্যাপোলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে শুরু হয়েছিল পেজারের ব্যবহার। আর এই চুক্তি স্বাক্ষরের পিছনে ছিল নর্টা গ্লোবাল। ২০২২ সালে নরওয়ের বাসিন্দা রিনসন দ্বারা প্রতিস্থিত হয়েছিল নর্টা গ্লোবাল।
তবে বুলগেরিয়ার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি সান্স (SANS) দ্বারা পরিচালিত একটি তদন্তে রিনসন জোস এবং তাঁর সংস্থা নর্টা গ্লোবালকে ক্লিন চিট দেওয়া হয়েছে। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ, ১৭ সেপ্টেম্বর লেবানন এবং সিরিয়ায় পেজার হামলার পিছনে রিনসন জোসের সংস্থার কোন ভূমিকা নেই।
তবে লেবাননে হিজবুল্লা সদস্যদের দ্বারা ব্যবহৃত বিস্ফোরক পেজারগুলি আসলে কে তৈরি করেছিল সে সম্পর্কে এখনও কোনও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কেরলে জন্মগ্রহনকারী ব্যবসায়ী এবং তাঁর সংস্থা প্রাথমিকভাবে তদন্তকারী সংস্থার স্ক্যানারের আওতায় এসেছিল ঠিকই, কিন্তু যাচাইয়েই পর প্রাণঘাতী পেজার বিস্ফোরণের জন্যে রিনসন এবং নর্টা গ্লোবালকে ক্লিন চিট দেওয়া হয়।