হাওড়া, ৩১ জানুয়ারি: ডুমুরজলা সভায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন,"আজকের সভায় আমি আসতে না পারায় ক্ষমাপ্রার্থী। কমিউনিস্ট ভাইয়েরা যেখানে রাজ্যকে ছেড়ে গেছিলেন তার থেকেও পিছনে নিয়ে গেছেন মমতা ব্যানার্জি। ১০ বছরে মা-মাটি-মানুষের স্লোগান উধাও হয়ে গেছে। কেন্দ্র সরকার গরিবের ঘরে বাড়ি, শৌচালয় দিয়েছে। কিন্তু বাংলার মানুষ কোনও সুবিধাই পাচ্ছে না। বাংলার মানুষ পরিবর্তন চায়। তৃণমূল বাংলা থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। বাংলায় গুণ্ডারাজ, তোলাবাজি চলেছে। যেভাবে সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূলের নেতারা যোগদান করছে এরপর দেখবেন আপনার পাশে কেউ নেই। বাংলায় এলেই আয়ুষ্মান ভারত আসবে। মমতা ব্যানার্জির সরকার ভাইপোর কল্যাণে ব্যস্ত, তাই জনতার কল্যাণের কথা তিনি ভাবছেন না। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস, রবীন্দ্রনাথ টেগোরের স্বপ্ন আমরা পূরণ করব।'
মঞ্চে বক্তৃতা রাখেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি,"যাঁরা জয় শ্রী রাম ধ্বনিকে সম্মান করেন না, তাঁরা কখনওই দেশভক্ত হতে পারে না। লকডাউনে লুঠ করেছে তৃণমূল। নরেন্দ্র মোদিজি যে চাল-ডাল দিয়েছে, তৃণমূল তা চুরি করেছে। লকডাউনে দিদি কী করেছেন? কুপন দিয়েছেন, তাও তৃণমূল কর্মীদের। গরিবরা যখন খাবার চেয়েছেন পুলিশ লাঠিচার্জ করেছেন। লকডাউনে কেন্দ্র শ্রমিক ট্রেন দিয়েছিল। দিদি তা ঢুকতে দেননি, করোনা এক্সপ্রেস বলেছিলেন। আজ দিদিকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, শ্রমিকদের এত অপমান কেন করেছ? দিদি প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা দিদি আনতে দেননি। তৃণমূলের নেতারাই দলের বিরুদ্ধে সরব। কেন্দ্র সরকার ১০০০ টাকা আম্ফানের জন্য দিয়েছিলেন, আপনার পঞ্চায়েত নেতারা তা লুঠ করে নিল। বাংলার কৃষকেরা আপনার কি ক্ষতি করেছেন? আপনি দু'বছর তাদের কেন্দ্রীয় কৃষি সম্মান নিধি যোজনা থেকে বঞ্চিত করেছে। তৃণমূল কাটমানি নিয়েছে। তৃণমূল চাল চোর, ত্রিপল চোর। বাংলার মানুষ ঠিক করেছে, তৃণমূল যাচ্ছে, বিজেপি আসছে। আপনি প্রভু রামের নাম ত্যাগ করেছেন, কিন্তু একদিকে উত্তরপ্রদেশে রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে রামরাজ্য তৈরি হচ্ছে।"
মঞ্চে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন,"আমরা সব কা সাথ, সব কা বিকাশ-র রাজনীতি করি। আগে হাওড়া জেলায় বাইরে থেকে কত মানুষ চাকরি করতে আসত। আজ সকলেই বাইরে।"
মঞ্চে রাজীব বন্দোপাধ্যায় বক্তৃতা রেখে বলেন, আমি যখন রাস্তা দিয়ে আসছিলাম ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য যে উন্মাদনা দেখেছি, তা যদি থাকে তবে বাংলাজুড়ে পদ্ম ফুটবে। বিজেপিতে যতদিন থাকব ততদিন কর্মীদের অসম্মান করব না। আগেও মানুষের জন্য কাজ করেছি। তৃণমূলে যোগদান করলে উন্নয়নের স্বার্থে। বিজেপিতে যোগদান করলে বিশ্বাসঘাতক বলে। দরকার হলে পাড়ায় পাড়ায়, বুথে বুথে যাব। তাদের শেষের শুরু হয়ে গেছে। বাংলার ছেলেমেয়েরা সব বাইরে চাকরি করতে যাচ্ছে। বাংলায় শিল্প নেই, শ্মশানে পরিণত হয়েছে। আমরা শিল্প নিয়ে আসব। বাংলার শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না। তাদের বাইরে যেতে হচ্ছে। আসুন আমরা এমন একটা সোনার বাংলা করি যেখানে বাংলার মানুষকে বাইরে যেতে হবে না। আজ কৃষকদের দুরাবস্থা! আমি কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধিতা, ঝগড়াকে সমর্থন করিনা। কেন্দ্র রাজ্যের সুসম্পর্ক না থাকলে কোনোদিন রাজ্যে উন্নয়ন হয় না। বাংলার মানুষের মুক্তি চাই। সংখ্যালঘু ভাইবোনদের জন্য ওই রাজনৈতিক দল কী করেছে? ভোটার মেশিন হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভারতীয় জনতা পার্টি কোনও জাত পাত নয়, সকলের জন্য কাজ করবে। পারে পারে সমাধান আনতে হচ্ছে ভোটের মুখে। আমরা কথা দিচ্ছি, ভারতীয় জনতা পার্টি প্রথম দিন থেকে দুয়ারে দুয়ারে মানুষের কাছে গিয়ে পৌঁছবে। বাংলা বাঁচান, রাজ্য বাঁচান।'
তারপর বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন,'আমার পর রাজীব আসায় একটা বৃত্ত পূর্ন হল। আমি কেন তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়লাম? তৃণমূল কংগ্রেস একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি রাজ্যে আনা হয়নি। দুয়ারে সরকার 'যমের দুয়ারে সরকার' হয়ে গেসে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কিছু পাওয়া যাবে না। আমরা আয়ুষ্মান ভারত আনব। অমিত শাহের কথায় 'ইস বার দো'শ পার' পূর্ণ করব। দেশকে রক্ষা করতে গেলে বিজেপিকে আসতে হবে। তৃণমূল আম্ফানের চাল চুরি করেছে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী জয় শ্রী রাম বললে রেগে যাচ্ছেন, ভাইপোকে তোলাবাজ বললে রেগে যাচ্ছেন।'
সর্বপ্রথম বক্তব্য রাখেন মুকুল রায়। তিনি বলেন,"মানুষ ইতিমধ্যে মনস্থির করে ফেলেছে। বাংলায় এবার পরিবর্তন আসবে।"
আজ হাওড়া ডুমুরজলায় বিজেপির যোগদান মেলায় উপস্থিত হয়েছেন রাজীব বন্দোপাধ্যায়, প্রবীর ঘোষাল, রথীন চক্রবর্তী, বৈশালী ডালমিয়া, রুদ্রনীল ঘোষ। রয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি (Smriti Irani)। সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ বহু ব্লক স্তরের কর্মীদের বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, শুক্ররাত রাতে দুদিনের রাজ্য সফরে আসার কথা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah)। তারপর রবিবার যোগ দিতেন ডুমুরজলায় মেগা সভায়। কিন্তু শুক্রবার বিকালে দিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের সামনে বিস্ফোরণের জেরে শেষ মুহূর্তে স্থগিত হয়ে যায় অমিত শাহের রাজ্য সফর। তাই শনিবার স্পেশাল চার্টার্ড ফ্লাইটে দিল্লি উড়ে যান রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee), প্রবীর ঘোষাল (Prabir Ghosal), বৈশালি ডালমিয়া, রথীন চক্রবর্তী, রুদ্রনীল ঘোষ প্রমুখ। অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর সন্ধ্যায় দিল্লিতেই বিজেপিতে যোগ দেন তাঁরা।