Mamata Banerjee, Dev, Suvendu Adhiukari. (Photo Credits: FB)

পার্থ প্রতিম চন্দ্র: Lok Sabha Elections 2024: দেখতে দেখতে দেশের সঙ্গে রাজ্যেও পাঁচটা দফার ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি রয়েছে আর মাত্র দুটি দফায়। ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ। জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার থেকে শুরু হয়েছিল রাজ্যে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ভোটপর্ব। এরপর দার্জিলিং, বালুরঘাট হয়ে একে একে উত্তর বঙ্গের সব আসনে ভোট মিটে গিয়েছে। তারপর মালদা, মুর্শিদাবাদেও শেষ হয় ভোট। দেখতে দেখতে নদিয়া, বীরভূম, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি-তেও শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ। পাঁচ দফায় রাজ্যে ২৫টি লোকসভা আসনে ভোট মিটে গিয়েছে। বাকি দুটি দফায় ১৭টি লোকসভা আসনে ভোটগ্রহণ হবে।

তৃণমূলের দাবি, প্রথম পাঁচ দফায় তারা অধিকাংশ আসনেই জিতছে। আবার বিজেপির হিসেব হল, গতবারের প্রায় সব আসনই ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে, পাশাপাশি এবার কৃষ্ণনগর, হাওড়া-র মত আসনেও পদ্ম ফুটছে। কংগ্রেসের দাবি, এবার তাদের আসন গতবারের চেয়ে বাড়তে পারে। বাম শিবিরের দাবি, মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিমের পক্ষে ভাল ভোট পড়েছে। পাশাপাশি এবার তাদের ভোট বাড়বে অনেকটাই।  আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীকে কুকথা, বিজেপি প্রার্থী অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায়কে কঠোর শাস্তি কমিশনের

আগামী শনিবার,২৫ মে ষষ্ঠ দফায় ভোটগ্রহণ হবে ৮টি আসনে- দুই মেদিনীপুর (তমলুক, কাঁথি, ঘাটাল,মেদিনীপুর), জঙ্গলমহল (ঝাড়গ্রাম), বাঁকুড়া (বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া) এবং পুরুলিয়া (পুরুলিয়া লোকসভা)-য়। তারপর একেবারে শেষ দফায়, পয়লা জুন ভোট কলকাতা, শহরতলী, বারাসত, ও দুই ২৪ পরগণায়। রাজনৈতিক মহলের মতে শনিবার, ষষ্ঠ দফায় ফয়সালা হয়ে যাবে বাংলায় এবার কাদের পাল্লা ভারী হতে চলেছে। কারণ সপ্তম দফায় যে ৯টি আসনে ভোট হবে সেটাকে তৃণমূলের ঘাঁটি বলা চলে। বিজেপি-কে বঙ্গে ভাল কিছু করতে হলে ষষ্ঠ দফায় ছক্কা হাঁকাতেই হবে। আর ষষ্ঠ দফায় বিজেপি-র সব দায়িত্ব শুভেন্দু অধিকারীর কাঁধে।

গত লোকসভা নির্বাচনে ষষ্ঠ দফায় হতে চলা ৯টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৫টি-তে, সেখানে তৃণমূল পায় ৩টি আসনে। পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী গড় ও দেবের ঘাটাল ছাড়া গত লোকসভা বাকি সব আসনে বিজেপি-র কাছে পরাস্ত হয়েছিল তৃণমূল। ঝাড়গ্রামে তৃণমূল অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গিয়েছিল। মানস ভুঁইয়া-র মত প্রার্থীও হেরেছিলেন মেদিনীপুর থেকে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুরও হাতছাড়া হয়েছিল তৃণমূলের। এবার তৃণমূলের আরও চাপ হল অধিকারী পরিবারের বিজেপিতে যোগ। তবে তৃণমূলের আবার সুবিধা হল, শুভেন্দু হাতছাড়া হওয়ার পরেও ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে দারুণ ফল করা।

এবার দেখা যাক ষষ্ঠা দফায় হিসেব কী বলছে। তমলুক, মেদিনীপুর, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া-র মত কেন্দ্রগুলিতে তৃণমূল ও বিজেপির লড়াই একেবারে হাড্ডাহাড্ডি। ক্লোজ আসনগুলিতে যারা জিতবে তারাই শেষ হাসি হাসবে। পঞ্চম দফায় তৃণমূল এগিয়ে থাকছে ঘাটাল, ঝাড়গ্রামে। বিজেপি আবার এগিয়ে থাকছে পুরুলিয়া ও কাঁথি আসনে। বিষ্ণুপুরে সৌমিত্র-সুজাতা দ্বৈরথ ৫০:৫০ ধরা হচ্ছে। মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের প্রার্থী হিসেবে অনুপস্থিতিটা তৃণমূলের জুন মালিয়াকে ফ্রন্টফুটে রাখছে। আবার বাঁকুড়ায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে চাপে থাকলেও সুভাষ সরকার কিছুটা হলেও সুবিধাজনক অবস্থায়। যদিও প্রচারের মাপকাঠিতে বাঁকুড়ায় তৃণমূল সবাইকে অনেকটা টেক্কা দিয়েছে।

দেবের সঙ্গে প্রচারে এঁটে উঠতে পারেননি বিজেপির টলিউড তারকা প্রার্থী হিরণ। বিধায়ক হিরণকে সাংসদ হতে হলে বড় অঘটন ঘটাতে হবে। কাঁথিতেও মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের বিশাল জনসভার পর খেলা ঘুরেছে এমন দাবি তৃণমূল করলেও অধিকারী সাম্রাজ্য এখনও এগিয়ে। অন্তত এমনটা দাবি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। বরং তমলুকে 'খেলা হবে' দেবাংশু-র লড়াইয়ে জমে উঠেছে মমতা বনাম শুভেন্দু লড়াই। পুরুলিয়ায় মাহাতো দ্বৈরথে অনেক কিছু নির্ভর করবে কংগ্রেসের নেপাল মাহাতোর ভোটের ওপর।

গতবার পুরুলিয়ায় ২ লক্ষের বেশী ভোটে জিতেছিলেন বিজেপি-র জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। এবারও তিনিই বিজেপির প্রার্থী। সেখানে তৃণমূল এবার প্রার্থী করেছে রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো-কে। বিজেপি-র সুবিধা হল ২০২১ বিধানসভায় এই লোকসভার সাতটির মধ্যে পাঁচটিতেই পদ্ম ফুটেছিল, তৃণমূল শুধু জিতেছিল বাঘমুন্ডি ও মানবাজারে। বাম ভোটের সবটা কংগ্রেসে না গেলে এবারও পুরুলিয়ায় পদ্ম ফোটার সম্ভাবনা।

তবে রাজ্যে এবার গতবারের থেকে ভাল ফল করতে হলে বিজেপি ষষ্ঠ দফায় অন্তত ৬-৭টি আসনে জিততেই হবে। কারণ সপ্তম তথা শেষ দফায় যে ৯টি আসনে ভোট হবে- (বারাসত, দমদম ,বসিরহাট, জয়নগর (এসসি) ,মথুরাপুর(এসসি), ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা দক্ষিণ, কলকাতা উত্তর) সেগুলিতে দু একটি-তে বাদ দিলে তৃণমূলকে এখনও অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে। তাই ষষ্ঠ দফাকেই বাংলা ভোটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্ব বলে মনে করা হচ্ছে।

ষষ্ঠ দফায় জোর টক্কর যাদের মধ্যে

দেব (তৃণমূল) বনাম হিরণ (বিজেপি) (কেন্দ্র: ঘাটাল)

জুন মালিয়া (তৃণমূল) বনাম অগ্নিমিত্রা পাল (বিজেপি) (কেন্দ্র:মেদিনীপুর)

অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় (বিজেপি) বনাম দেবাংশু ভট্টাচার্য (তৃণমূল)(কেন্দ্র: তমলুক)

সৌমিত্র খাঁ (বিজেপি) বনাম সুজাতা মণ্ডল (তৃণমূল) (কেন্দ্র: বিষ্ণুপুর)

সুভাষ সরকার (বিজেপি) বনাম অরুপ চক্রবর্তী (তৃণমূল)(কেন্দ্র: বাঁকুড়া)

দিব্যেন্দু অধিকারী (বিজেপি) বনাম উত্তম বারিক (তৃণমূল) (কেন্দ্র: কাঁথি)

তারকা প্রার্থীরা-অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় (বিজেপি), দেব (তৃণমূল), হিরণ (বিজেপি), জুন মালিয়া (তৃণমূল),অগ্নিমিত্রা পাল (বিজেপি), সুভাষ সরকার (বিজেপি) সৌমিত্র খাঁ (বিজেপি)।