পার্থ প্রতিম চন্দ্র: চলতি লোকসভা নির্বাচনে চার দফার ভোট মিটে গিয়েছে। এরপরেও কলকাতায় তেমন লাগেনি ভোটের আঁচ। শহর কলকাতার দুটি আসন, ও শহরতলির লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে ভোটগ্রহণ হবে একেবারে শেষ দফায়, পয়লা জুন। তাই ভোটের আঁচটাও অনেকটা দেরিতেই লাগাটাই স্বাভাবিক। তবে অনেকেই বলছেন, গত দুটি লোকসভার থেকে এবারের ভোট নিয়ে শহরবাসীর আগ্রহ কম। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে কথাটা শোনা যাচ্ছে। তবে দেশের অন্যান্য জায়গাগুলির থেকে বাংলায় ভোটদানের হার বেশী। কলকাতায় ফের অসহ্য গরম পড়ছে। এরই মধ্যে ভোটের উষ্ণতার ছোঁয়া লাগছে।রোজ সন্ধ্যাতেই শহর কলকাতার অলিগলিতে কোথাও না কোথাও কোনও না কোনও দল প্রচার চালাচ্ছে।
কলকাতার দুটি লোকসভা আসন- দক্ষিণ কলকাতা ও উত্তর কলকাতা। গত তিনটি লোকসভা নির্বাচনেই কলকাতার দুটি লোকসভা আসনেই জিতে আসছে তৃণমূল। ২০০৪ লোকসভায় শেষবার তৃণমূলের বাইরে কোনও দল উত্তর কলকাতায় জিতেছিল (সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম জিতেছিলেন), আর কলকাতা দক্ষিণে তৃণমূল তাদের জন্মলগ্ন থেকে কখনও হারেনি। কলকাতা দক্ষিণে শেষবার কংগ্রেস বা তৃণমূলের বাইরে শেষবার কোন দল জিতেছিল ১৯৮৯ লোকসভায়। সেই ভোটে সিপিআই-য়ের বিপ্লব দাশগুপ্ত জিতেছিলেন। এরপর থেকে গত ৯টি লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতায় চলে আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ম্যাজিক। ২০০৪ লোকসভায় রাজ্যের সব কটি আসনে হেরেছিল তৃণমূল, ব্যতিক্রম ছিল শুধু এই দক্ষিণ কলকাতা।
এবার দক্ষিণ কলকাতায় বিরোধীদের স্লোগান, 'এবার মালাবদল হবে"। মানে মালা রায় এবার হারবেন। কিন্তু অঙ্কের হিসেবে সেটা অসম্ভব মনে হচ্ছে। কারণ এই লোকসভার সাতটি বিধানসভাতেই তৃণমূলের জয়ের মার্জিন অনেকটাই। অঙ্কের হিসেবে দক্ষিণ কলকাতার মূল লড়াইটা দ্বিতীয় হওয়ার। লড়াইয়ে সিপিআইএমের সায়রা শাহ হালিম ও বিজেপি-র দেবশ্রী-র চৌধুরী। প্রচার যুদ্ধে মালা রায় অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু সিপিএমের সায়রা শাহ হালিম ময়দানে লড়ছেন। সায়রার সভায় ভাল ভিড় নজরে আসছে। কয়েক বছর আগে বালিগঞ্জ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে দারুণ লড়াই করে নজর করেন সায়রা। বালিগঞ্জদের সেই লড়াইটা সায়রা এবার দক্ষিণ কলকাতা লোকসভাতেও করছেন। তবে অঙ্কের বিচারে সায়রার কাজটা 'মিশন ইমপসিবল' দেখাচ্ছে। তবে গতবার সিপিএম দক্ষিণ কলকাতায় ১১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, এবার সেটা নিশ্চিতভাবেই বাড়ার কথা।
রায়গঞ্জ থেকে গতবার দারুণভাবে জেতা দেবশ্রী এবার দক্ষিণ কলকাতায় লড়তে এসে তেমন কিছু করতে পারছেন না। তবে নরেন্দ্র মোদী প্রচারে নামলে খেলা ঘুরবে বলে আশায় পদ্ম-শিবির। তবে বেহালা থেকে বন্দর, বালিগঞ্জ থেকে হাজরা- কেন্দ্র ঘুরলেই পরিষ্কার মালা বদলের লক্ষ্যে নেমে দেবশ্রী-কে ছাপিয়ে যাচ্ছেন সায়রা। তবে প্রচারে ঝড় আর তা ইভিএমে প্রতিফলন-সেটা দুটো আলাদা জিনিস সিপিএম প্রার্থীরা সেটা গত তিন চারটি নির্বাচনে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন।
তবে দক্ষিণ কলকাতার চেয়ে কিছুটা হলেও উত্তরে কঠিন তৃণমূলের চ্যালেঞ্জ। যদিও মালা রায়ের চেয়ে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত ম্যাজিকের হাওয়া অনেক বেশী বইছে। সুদীপের অনুগামীরা লুকিয়ে বলছেন, দক্ষিণে মালার চেয়ে উত্তরে দাদার জয়ের মার্জিন বেশী থাকবে। তবে সে সব দাবি। ময়দানের হাওয়া বলছে, সুদীপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বিজেপির হয়ে লড়া তাপস রায় জান লড়িয়ে খাটছেন। বিজেপি সংগঠনের একটা অংশ তাপসের হয়ে লড়ছেন। কিন্তু উত্তর কলকাতার সুদীপের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার কাছে সেটা কতটা যথেষ্ট হবে সেটা বড় কথা। আরও বড় প্রশ্ন, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসেই প্রার্থী হয়ে যাওয়া তাপস রায়-কে পদ্মশিবিরের সবাই কতটা মেনে ভোট দেন। নিজের মত ভালই লড়ছেন কংগ্রেসের প্রদীপ ঘোষ। প্রদীপের পক্ষে সবচেয়ে বড় সুবিধা তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, লড়াকু চরিত্র আর অবশ্যই বাম কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়া।