IPL Point Table 2024 Photo Credit: Twitter@htTweets

পার্থ প্রতিম চন্দ্র- দেখতে দেখতে মাঝপর্বে চলে এল আইপিএল। প্রতিটি দলই অন্তত ৭টি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। যেখানে রাউন্ড রবীন লিগ পর্বে প্রতিটি দল ১৪টি করে ম্যাচ খেলার পর ঠিক হবে কারা প্লে অফ রাউন্ডে উঠবে। এবার থেকে শুরু হয়ে যাবে প্লে অফে ওঠার ইঁদুর দৌড়।

আসুন দেখে নেওয়া যাক টুর্নামেন্টের মাঝ পর্বে এসে কোন দল কোথায় দাঁড়িয়ে-

১) রাজস্থান রয়্যালস:

৭ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট

খাতায় কলমে চলতি আইপিএলের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল হিসেবে ধরা হচ্ছিল। বাস্তবেও তাই হল। ব্যাটে-বলে একদম সমান শক্তিশালী। দলে এক হাতে ম্যাচ জেতানো ক্রিকেটারের সংখ্যা অন্তত ৪-৫ জন। ২২৩ রান তাড়া করেও জিতেছে দলটা। আবার মুম্বই ইন্ডিয়ন্সের বিরুদ্ধে বিপক্ষকে মাত্র ১২৫ রানেও অল আউট করেছে রাজস্থান। আসলে সঞ্জু স্যামসনের মত অধিনায়ক ও ব্যাটার। জোস বাটলার, রিয়ান পরাগের মত দুরন্ত টাচে থাকা ব্যাটার। শেমরন হেটমারের মত ফিনিশার। ট্রেন্ট বোল্ট, আবেশ খানের মত ম্যাচ জেতানো বোলার। অশ্বিন-চাহালের যুগলবন্দি। এতগুলো বিষয়ে রাজস্থানকে অপ্রতিরোধ্য দেখাচ্ছে। চলতি আইপিএলে মাত্র একটি দলের কাছেই হেরেছে রাজস্থান,সেটি হল গুজরাট। প্লে অফে ওঠা সঞ্জুদের কাছে খুবই সহজ দেখাচ্ছে।

তুরুপের তাস- সঞ্জু স্যামসন। যিনি ডোবাচ্ছেন- ফিল্ডিং

২) কলকাতা নাইট রাইডার্স:

৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট

গৌতম গম্ভীরের প্রত্যাবর্তন দলটাকে বদলে দিয়েছে। কত কয়েকটি মরসুমের ব্যর্থতা ঝেড়ে দলটা একসঙ্গে ঝাঁপাচ্ছে। এটা বড় পজেটিভ। সাতটা ম্যাচ খেলে ৪ বার ২০০ প্লাস স্কোর গড়েছে। দুরন্ত সেঞ্চুরি করে সুনীল নারিন দলটার মনোবল অনেকগুণ বাড়িয়েছেন। ওপেনার ফিল সল্ট দারুণ খেলছেন। শ্রেয়স আইয়ার ফর্মে ফিরেছেন। নীতীন রানা চোট পেলেও তার বদলে খেলা অঙ্গকৃশ রঘুবংশী ভাল খেলছেন। রমনদীপ সিং এবার ব্যাট হাতে হিসেব বদলে দিচ্ছেন। রিঙ্কু সিংও ভাল টাচে আছেন। কিন্তু তাই বলে দলটার সঙ্গে মোটেও অল ইজ ওয়েল হচ্ছে না। দলটাকে ডোবাচ্ছে বোলিং। রাজস্থানের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ২২৩ রান করেও হেরেছেন শ্রেয়স আইয়ার। আসল সমস্যা হল সাড়ে ২৫ কোটি টাকার অজি পেসার মিচল স্টার্ক। স্টার্ক দায়িত্ব দিয়ে ডোবাচ্ছেন। প্লে অফে ওঠার লড়াই এবার জমবে। তখন স্টার্করা এমন ডোবালে কিন্তু তীরে এসে তরী ডুবতে পারে।

তুরুপের তাস- আন্দ্রে রাসেল। যিনি ডোবাচ্ছেন-মিচেল স্টার্ক

৩) সান রাইজার্স হায়দরাবাদ:

৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট

অবিশ্বাস্য ব্যাটিং। বলে বলে দলটা ২০০ প্লাস রান করছে। পরপর দুটো ম্যাচ করেছে যথাক্রমে ২৮৭ (প্রতিপক্ষ আরসিবি, বেঙ্গালুরুতে) ও ২৬৬ রান (প্রতিপক্ষ দিল্লি ক্যাপিটালস, দিল্লিতে)। ট্রাভিস হেড থেকে অভিষেক শর্মা, আইডেন মার্করাম, হেনরিক ক্লাসেন, আব্দুল সামাদ, শাহবাজ আহমেদরা মাতিয়ে দিচ্ছেন। সানরাইজার্স ব্যাট করতে নামলেই এখন বিস্ফোরণ। তবে বোলিং ইউনিট তুলনায় দুর্বল। প্লে অফে ওঠা কঠিন হবে না।

তুরুপের তাস-ট্রাভিস হেড। যেটা দুর্বলতা-বোলিং

৪) চেন্নাই সুপার কিংস:

৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট

এবারও ধোনি জাদু চলছে। শেষের দিকে মাহির ক্যামিও মন জিতেছে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন সিএসকে দুলকি চালে এগিয়ে চলেছে। বোলিং আর মাঝের দিকের ব্যাটিংটা আরেকটা সামলে নিলে হলুদ বাহিনীর আরও একবার প্লে অফ ওঠার রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে এটা ঠিক আগামী চারটে ম্যাচে সিএসকে-র কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তুরুপের তাস-মাথিসা পাথিরানা। যেটা দুর্বলতা- ক্লোজ ম্যাচ বের করা।

৫) লখনৌ সুপার জায়েন্টস:

৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট

লোকেশ রাহুলরা ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছেন। কিছু ক্লোজ ম্যাচ হেরেছেন। এখান থেকে দলটাকে পিক করতে হবে।

তুরুপের তাস-কেএল রাহুল। যেটা দুর্বলতা- ধারাবাহকিতার অভাব।

৬) গুজরাট টাইটান্স:

৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট

হার্দিক পান্ডিয়া মুম্বই ইন্ডিয়ন্সের নেতৃত্বে এসে কতটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু হার্দিক গুজরাট ছাড়াটা যে দলটার ভারসাম্য নষ্ট করছে তা পরিষ্কার। অধিনায়ক শুবমন গিল যথেষ্ট চেষ্টা করছেন। কিন্তু এবার গুজরাটের মধ্যে সেই অপ্রতিরোধ্যভাব, অসম্ভব জায়গা থেকে ম্যাচ জেতার মনানসিকতাটা চোখে পড়ছে না।

তুরুপের তাস- শুবমন গিল। যেটা দুর্বলতা- গত দুটো মরসুম যারা মাতিয়ে ছিলেন তারা এবার নিষ্প্রভ।

৭) মুম্বই ইন্ডিয়ন্স:

৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট

হার্দিক পান্ডিয়া অধিনায়ক হিসেবে আসার পর অনেক বিতর্ক হয়েছে। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতি হার্দিককে নেতৃত্বে মেনে নিতে না পেরে সমর্থকরা তাঁকে অনেক কটাক্ষ করেছেন। হার্দিক যেন কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছেন। কিছু ইনিংস বাদ দিলে হার্দিক ব্যাট হাতে টাচে নেই। বল হাতে ডোবাচ্ছেন। অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার পরিষ্কার প্রভাব এবার মুম্বইয়ের পারফরম্যান্সে পড়েছে। অথচ এমন নয় যে রোহিত শর্মা ফর্মে নেই। রোহিত সেঞ্চুরিও করেছেন। জশপ্রীত বুমরা এবারও অসাধারণ স্পেল করছেন। কিন্তু দলটাকে এক সুতোয় বাঁধা দেখাচ্ছে না। ফল হল-৭টা খেলে ৪টে হার। অথচ দলটা খাতায় কলমে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে।

তুরুপের তাস- জশপ্রীত বুমরা। যিনি ডোবাচ্ছেন- হার্দিক পান্ডিয়া

৮) দিল্লি ক্যাপিটালস:

৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট

জীবন যুদ্ধে জিতে ঋষভ পন্থ নেতৃত্বে ফিরেছেন। খাতায় কলমে বেশ ভাল দল। কিন্তু দলটা এখনও সেট করেনি। যেদিন ভাল বল করছে দলটা, ব্যাটাররা ডোবাচ্ছে। যেদিন ব্যাটাররা দারুণ খেলছেন, সেদিন বোলাররা মাথায় হাত ফেলার মত পারফরম্যান্স করছেন।

তুরুপের তাস- অক্ষর প্যাটেল। যেটা ডোবাচ্ছে- ধারাবাহিকতা।

৯) পঞ্জাব কিংস:

৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট

একেবারে খারাপ খেলছে। মাঝপথে অধিনায়ক শিখর ধাওয়ানের চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়াটা দলটাকে আরও সমস্যায় ফেলছে। প্রতিবারের মত এবারও প্রীতি জিন্টার দল হতাশ করছে। এখান থেকে প্লে অফে উঠতে গেলে পঞ্জাবকে অবিশ্বাস্য কিছু করতে হবে।

তুরুপের তাস: মিচেল মার্শ। যেটা ডোবাচ্ছে- সামগ্রিক দলের ব্যর্থতা

১০) রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু:

৭ ম্যাচে ২ পয়েন্ট

এবারও হতাশা। তবু গত কয়েকটা মরসুমে প্লে অফে উঠছিল দলটা। এবার তাদের মহিলা দল ডব্লুপিএল জেতার পর বিরাট কোহলিদের কাপের খরা কাটানো নিয়ে অনেক কথা হচ্ছিল। কিন্তু কোথায় কী! এবার একেবারে ভরাডুবি। মরসুম শুরুর আগে থেকে আশঙ্কা ছিল আরসিবি-র অনভিজ্ঞ বোলিং নিয়ে, বড় কোনও নামি স্পিনার না থাকা নিয়ে। সেটাই হল। ব্যাটিং খারাপ না করলেও একেবারে খারাপ বোলিং করে আরসিবি সবার শেষে। বিরাটদের নিয়ে বড় আশা আর না করাই ভাল। যদিও আইপিএল হল অঘটন ঘটানোর সেরা মঞ্চ। কিন্তু বড় অঘটনের অপেক্ষা ছাড়া বিরাটদের আইপিএল এবার শেষ বলেই মনে হচ্ছে।

তুরুপের তাস: বিরাট কোহলি। যেটা ডোনাচ্ছে- বোলিং।