২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন, জনসংখ্যার পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্যের কারণে অনেক গুরুতর সংকটের মুখোমুখি হতে পারে গোটা বিশ্বের শিশুরা। ইউনিসেফের সর্বশেষ প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে যে বৈশ্বিক নীতিমালার উন্নতি না হলে আগামী দশকগুলোতে আরও খারাপ হতে পারে শিশুদের অবস্থা। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক জানান, "শিশুরা অনেক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, যেমন জলবায়ু সংকট এবং অনলাইন হুমকি, যা আগামী সময়ে আরও গুরুতর হয়ে উঠবে।" ২০৫০ সালের মধ্যে শিশুদের ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করার তিনটি বড় হুমকি চিহ্নিত করা হয়েছে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে।
জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত বৈষম্য, শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য হতে পারে ক্ষতিকারক। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০ বিলিয়নে পৌঁছে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে শিশুদের সংখ্যা থাকবে প্রায় ২ বিলিয়নের বেশি। বিশ্ব জনসংখ্যায় শিশুদের অংশ খুব নিম্ন স্তরে হ্রাস পাবে। যেখানে সাব-সাহারান আফ্রিকার মতো অঞ্চলে শিশুদের সংখ্যা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পাবে, সেখানে উন্নত দেশগুলিতে শিশুদের জনসংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ বা তার কম হতে পারে। এই শিশুদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০০০ সালের তুলনায় ২০৫০ সালের মধ্যে ৮ গুণ বেশি তাপ তরঙ্গ, ৩ গুণ বেশি বন্যা এবং ১.৭ গুণ বেশি বনের আগুনের সম্মুখীন হতে হবে শিশুদের। এই হুমকিগুলি দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির শিশুদের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নতুন প্রযুক্তি অগ্রগতির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে, কিন্তু তারা ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। যেখানে উন্নত দেশগুলিতে ৯৫ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত, যেখানে দরিদ্র দেশগুলিতে এই সংখ্যা মাত্র ২৬ শতাংশ।
শিশুদের তথ্য সংরক্ষণ এবং অনলাইন শিকারীদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ইউনিসেফের মতে, এই হুমকি মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, সবুজ শক্তি ও নির্গমন হ্রাস এবং দরিদ্র দেশগুলিতে প্রযুক্তিগত অ্যাক্সেস বৃদ্ধি। ইউনিসেফের ডেপুটি ডিরেক্টর জানান, "আজকের নেতাদের কাছে এই সমস্যাগুলো সমাধানের হাতিয়ার ও সুযোগ উভয়ই রয়েছে। অবিলম্বে এই সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হলে শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা যেতে পারে।" ২০৫০ সালে জলবায়ু ও সামাজিক বৈষম্য থেকে শিশুদের রক্ষা করার জন্য এখনই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।